ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ইয়র্কার তুলে মারলেন সৌম্য, শ্রীরাম বললেন ‘গ্রেট শট’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪০, ১৬ অক্টোবর ২০২২

সৌম্য-শান্তকে নিয়ে নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে শ্রীরাম

সৌম্য-শান্তকে নিয়ে নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে শ্রীরাম

‘পারফরমার নয়, আমার প্রয়োজন ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার’- এমনটাই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম। টি-টোয়েন্টিতে প্রভাব ফেলতে পারবেন এমন ক্রিকেটারই চাই তার। গত আগস্টে নিয়োগ পাওয়া এই ভারতীয়ই এখন বাংলাদেশ দলের হেড মাস্টার।

ভারতীয় কোচের এই তত্ত্ব নিয়েই অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে পা রেখেছে বাংলাদেশ দল।

রোববার (১৬ অক্টোবর) শুরু হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর। আর এদিনই ব্রিজবেনের অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডের নেটে সৌম্যের শটের পরিধি বাড়ানোর কাজ করতে দেখা যায় শ্রীরামকে।

চিৎকার করে সৌম্যকে বললেন, ‘৩ বলে লাগবে ৮ রান’। স্ট্যান্স নিলেন সৌম্য সরকার। আর্ম থ্রোয়ারে বল ছুড়লেন শ্রীরাম। গতিময় এক ইয়র্কার। পড়িমরি করে ব্যাট নামিয়ে তা ব্লক করতে পারলেন সৌম্য। বেশ বিরক্ত হলেন শ্রীরাম। কৈফিয়তের ভঙ্গিতে সৌম্য বললেন, ‘বুঝতে পারিনি ইয়র্কার হবে।’ 

বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট একরাশ বিরক্তি নিয়েই বললেন, ‘বোলার কি তোমার কাছ থেকে শুনে বল করবে? এই বলটা একটু আগে পিক করে খানিকটা জায়গা বানিয়ে নাও। তাহলেই হাত খুলে খেলতে পারবে, অফ সাইডে বা মিড অফ দিয়ে কিংবা অন সাইডেও খেলতে পারবে।’ 

দাওয়াইটা কাজে লাগল তাৎক্ষণিকভাবেই। পরের বলটি আবারও ইয়র্কার ছুড়লেন কোচ। এবার একটু জায়গা বানিয়ে মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মারলেন সৌম্য। শ্রীরাম এবার সন্তুষ্ট, বললেন, ‘গ্রেট শট…এবার হলো তো!’ 

সৌম্য যখন এভাবে নিজের স্কিল বাড়াচ্ছেন, পাশের তিনটি নেটে তখন ব্যাটিং অনুশীলনে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলামরা। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে ব্রিজবেনে আসার পর বাংলাদেশ দলের প্রথম অনুশীলন সেশন ছিল এদিনই। সেখানে টেলএন্ডারদের ব্যাটিং অনুশীলনে দেখা গেল বাড়তি গুরুত্ব। 

নেট অনুশীলনের চারটি উইকেটই সবুজ ঘাসে ভরা। ব্রিজবেনের চেনা বাউন্স ও গতি তো আছেই। চ্যালেঞ্জিং সেই উইকেটে ইয়াসির আলী, আফিফ হোসাইনরা অনুশীলন করলেন পাল্টা আক্রমণের। আরেক নেটে স্কুপে হাত পাকানোর কাজ করলেন নুরুল হাসান সোহান। তবে তারা নেটে ছিলেন অল্প সময়ই। উল্টো লম্বা সময় ব্যাটিং করলেন বোলাররাই। যদিও এই ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেননি সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা। 

অনুশীলন শেষে ব্যাটিং কোচ জেমি সিডন্স জানালেন, প্রয়োজনের সময় বোলারদের কাছ থেকেও ব্যাটিংয়ে কার্যকর অবদান চায় দল। 

সিডন্সের ভাষায়, ‘ওদেরকে (বোলাররা) নিয়ে নেটে আলাদাভাবে কাজ করলাম। টার্গেট ব্যাটিং করা হলো, ইয়র্কার ও স্লো বোলিংয়ে তাদের স্কিল নিয়ে কাজ হলো। ব্যাটারদেরও যেমন থ্রো ডাউন করানো হয়, আন্ডার আর্ম খেলানো হয়, সে রকমই স্কিল সেশন হলো ওদের। কালকে রাতে ওদের লম্বা ফ্লাইট ছিল, তাই খুব বেশি কাজ করাতে চাইনি।’ 

ব্যাটিং কোচ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ওদের নিয়ে খুব বেশি কিছু করার সুযোগ হয়নি, কারণ টপ অর্ডার ১০ ওভার পর্যন্ত ভালো করে গেছে। ওদের নিয়ে তাই কাজ করে যেতে হবে, কারণ কোনো একটা পর্যায়ে ওদের ব্যাটিং লাগবে আমাদের।’ 

মূল ব্যাটারদের মধ্যে সৌম্যের নেট সেশনটাই নজর কাড়ল সবার। বাইরে থেকে এসে বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে জায়গা করে নেয়া এই বাঁহাতি ব্যাটারের সঙ্গে নেটে অনেকটা সময় কাটালেন শ্রীরাম। নিজেই আর্ম থ্রোয়ারে বিভিন্ন রকম শটের অনুশীলন করালেন সৌম্যকে। 

এক পর্যায়ে ক্রমাগত শুধু শর্ট বল করা হলো সৌম্যকে। কোনোটি বুক উচ্চতায়, কোনোটি কাঁধ কিংবা নাক উচ্চতায়। একের পর এক পুল খেলে গেলেন সৌম্য। টাইমিং ঠিকঠাক করতে পারলেন বেশিরভাগ শটেই। একটি বাউন্সারে তো সৌম্যর র‌্যাম্প শট দেখে রীতিমত উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন শ্রীরাম। ভারতীয় এই কোচ হয়তো জানেন না যে, একসময় এসব র‌্যাম্প বা পেরিস্কোপ শট কত ভালো খেলতেন সৌম্য! 

বাউন্সারের ফাঁকেই হুট করে একটা ফুল লেংথ বল ছুড়লেন শ্রীরাম। প্রস্তুত ছিলেন সৌম্যও। তার দারুণ স্ট্রেট ড্রাইভে মুগ্ধতার উচ্চারণ শোনা গেল টেকনিকাল কনসালটেন্টের কণ্ঠে। 

সৌম্যর স্কোরিংয়ের বিকল্প বাড়ানো, ক্রিজের ব্যবহার করে ভালো বলেও চার-ছয় আদায় করা ও গ্যাপ বের করা নিয়েই মূল কাজ করলেন শ্রীরাম। এই প্রস্তুতি পর্বই বলে দিচ্ছিল, সৌম্যকে নিয়ে পরিকল্পনা আছে দলের। 

জেমি সিডন্সের কথায়ও সেটারই প্রকাশ ফুটে উঠল। প্রথম ঘোষিত বিশ্বকাপ দল থেকে সাব্বির রহমানের বদলে সৌম্যকে নেওয়ার কারণ তিনি বোঝাতে চাইলেন অল্প কথায়, “১৭ জন ক্রিকেটার ছিল আমাদের দলে, ১৫ জন নিতে হতো। দলের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেয়া আমাদের প্রয়োজন মনে হয়েছে, সেটাই করেছি আমরা। সৌম্য অবশ্যই ৫০ বা ৬০ রানের ইনিংস খেলেনি, সেটা সাব্বিরও করেনি। আশা করছি, সামনের দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে ও বিশ্বকাপে দলের সবাইকে ভালো ফর্মে পাওয়া যাবে।” 

সৌম্যের অন্তর্ভুক্তির পর বাংলাদেশের সম্ভাব্য উদ্বোধনী জুটি নিয়েই সম্ভবত এখন সবচেয়ে বেশি কৌতূহল। নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে চার ম্যাচে চারটি উদ্বোধনী জুটি খেলানো হয়েছে। সামনে এখন বিশ্বকাপের অফিসিয়াল দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। 

এই দুই ম্যাচে বিশ্বকাপ একাদশের ব্যাটিং কম্বিনেশনের সম্ভাব্য ছবি পরিস্কার হবে বলে জানালেন সিডন্স, “আমাদের চূড়ান্ত ব্যাটিং অর্ডারের অনেকটা কাছাকাছি কিছুই দেখা যাবে এই দুই ম্যাচে। আমাদের দল খুব বেশি টি-টোয়েন্টি জেতেনি, চেষ্টা করছে সেরা সমন্বয় ও সেরা ব্যাটিং অর্ডার বাছাই করতে। আমরা অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছি (ব্যাটিং অর্ডার চূড়ান্ত করার)।” 

ব্যাটিং কোচ আরও বলেন, “খুব কাছাকাছি আমরা এখন (ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করার)। আমাদের ভাবনায় আমরা সঠিক আছি বলেই মনে করি। প্রয়োজন এখন কোনো একজনের নিজেকে মেলে ধরার ও বড় স্কোর গড়ার।” 

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, সবশেষ ৩০ ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে ফিফটি পায়নি বাংলাদেশ। তবে রোববার অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে দলের অনুশীলন দেখে সিডন্সের আশা, টপ অর্ডারে বড় রান এলো বলে। 

তার মতে, “ওরা ভালোভাবেই এগোচ্ছে। কিছু নতুন ক্রিকেটার আনা হয়েছে, যারা বেশ কিছুদিন ধরে দলে ছিল না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গতির সঙ্গে আবার মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে তাদের। তবে আমার মনে হয়, আজকেই উদাহরণ দেখা গেছে যে ওরা কেমন করছে। খুব ভালোভাবেই হচ্ছে সবকিছু। টপ অর্ডারে শিগগিরই বড় কিছু স্কোর দেখার আশা করছি।” 

সিডন্সের আশা পূরণের অপেক্ষার মাত্র আরেকটি দিন, সোমবার। এদিনই বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে অ্যালান বোর্ডার ফিল্ডে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি