পাকিস্তানকে হারিয়ে শেষটা ভালো করতে চায় বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ১৯:১৪, ৫ নভেম্বর ২০২২
টিম বাংলাদেশ
অ্যাডিলেড ওভালের ঠিক পাশেই অবস্থিত কারেন রোল্টন ওভাল। যেখানে আরও একটা দিন অনুশীলন করল টাইগাররা। হয়তো এবারের বিশ্বকাপে শেষবার! শনিবার বাংলাদেশ দল যখন অ্যাডিলেডের অপরূপ এই মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত, ভারতীয় দল তখন অনুশীলন করছে মেলবোর্নে।
দুই দলের মাঠের লড়াইয়ের পর পেরিয়ে গেছে তিনটি দিন। তাদের এখন গন্তব্য ভিন্ন, প্রতিপক্ষ ভিন্ন, বাস্তবতা ভিন্ন। তবু যেন রয়ে গেছে রেশ। সামনে তাকিয়েও সাকিবদের জন্য প্রেরণা পেছনে ফেলে আসা ওই ম্যাচটাই!
যদিও গত বুধবারের সেই ম্যাচে ভারতের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। বিতর্কের আগুনও ছড়িয়েছে বেশ। যে উত্তাপের আঁচ কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছে এখনও। কিন্তু স্রেফ পরাজয়ের হতাশা আর বিতর্ক ও প্রশ্নের ঝাঁজই নয়, ওই ম্যাচ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য সামনে এগিয়ে চলার পাথেয়। যে প্রেরণা আর প্রাণশক্তির হাত ধরে পাকিস্তানকে হারানোর আশায় বুক বাঁধছেন টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।
মঞ্চ সেই একই। ভারতের বিপক্ষে শেষ বলের লড়াইয়ে যেখানে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই অ্যাডিলেড ওভালেই প্রতিপক্ষ এবার পাকিস্তান। রোববার ম্যাচ শুরু বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়।
এমনিতে বিশ্বকাপের উত্তেজনা এখন সেমিফাইনাল লাইন-আপকে ঘিরে। আসছে কারও উল্লাসের উপলক্ষ, তো রচিত হচ্ছে কারও হৃদয় ভাঙার গল্প। শঙ্কা-সম্ভাবনার এই সমীকরণে গাণিতিকভাবে এখনও টিকে আছে বাংলাদেশও।
বাস্তবতার নিরিখে অবশ্য সেই সম্ভাবনা খুবই সামান্য। যাবতীয় ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেবে নেদারল্যান্ডস- এই আশা করা কঠিন। বাংলাদেশ দলের দলের আশা তাই নিজেদের ঘিরেই। পাকিস্তানকে হারিয়ে যদি শেষটা ভালো করা যায়।
শনিবার ছিল বাংলাদেশের ঐচ্ছিক অনুশীলন। ব্যাট-বলে তুকতাক করেন কেবল নুরুল হাসান সোহান, ইয়াসির আলি চৌধুরী, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপজুড়েই ম্যাচের আগের দিন পুরোদমে অনুশীলন করছে না দল। শেষ ম্যাচের আগেও সেই পরিকল্পনার ব্যতিক্রম হয়নি। এমনকি অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনও পুরোপুরি হলো অনলাইনেই। সেখানে প্রথম প্রশ্নই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ফেক ফিল্ডিং বিতর্ক নিয়ে।
মাত্র পাঁচ রানে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে ৫ রানের সম্ভাব্য পেনাল্টি থেকে বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়া নিয়ে তোলপাড় হয়েছে যথেষ্টই। সেই ঢেউ এখনও থামেনি। ঘটনার পরপরই শ্রীরাম আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে যে কথা শোনা গিয়েছিল, তা এ দিন নিশ্চিত করলেন তিনি নিজেই।
টাইগার টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট বলেন, “আমরা এখানে কোনো অজুহাত দিতে আসিনি। এটা যখনই হয়েছে, তখনই আমি ফোর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বলা হয়েছে, এটা মাঠের আম্পায়ারদের ব্যাপার। তবে আমরা কোনো অজুহাত দিতে চাই না।”
শ্রীরাম বলেন, “খেলা শুরু হওয়ার আগে যদি কেউ বলতো যে, আমরা ভারতের কাছে ৫ রানে হারব, তাহলে যে কেউ হয়তো তা লুফে নিত। আমরা নিজেদের এমন একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলাম যে ভারতকে হারাতে পারতাম। যদিও শেষ পর্যন্ত আমরা পারিনি। তবে এতটা কাছাকাছি যেতে পেরে ছেলেরা অনেক আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “দিনশেষে হার তো মাত্র ৫ রানের… শেষটুকু ঠিকঠাক করত না পেরে ড্রেসিং রুমে সবাই হতাশ ছিল অবশ্যই এবং তারা উপলব্ধি করেছে, কতটা সুবর্ণ সুযোগ তারা হাতছাড়া করেছে। তবে দলের জন্য এটা ছিল দারুণ শিক্ষণীয় এবং দলকে প্রচুর আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে যে, ভারতের মতো একটি দলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যদি এত কাছাকাছি যাওয়া যায়, তাহলে আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে খুব বেশি দূরে নেই।”
শ্রীরামের দাবি কতটা সত্যি, কিছুটা প্রমাণ মিলতে পারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। শক্তি-সামর্থ্যে পাকিস্তান এগিয়ে অনেকটা। সবশেষ ম্যাচে তারা হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও। বাংলাদেশের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিংবা সার্বিক, সব রেকর্ডেই তারা যোজন যোজন এগিয়ে। দুই দলের ১৭ ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ১৫টিতে। বাংলাদেশের দুটি জয়, তাও সেই ২০১৫ ও ২০১৬ সালে।
শ্রীরাম তবুও আশার বাণী শোনাচ্ছেন। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ তাকে জোগচ্ছে সাহস।
তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানকে হারাতে পারি। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেমি-ফাইনালে খেলাটা আমাদের হাতে নেই!”
শ্রীরাম আরও বলেন, “পাকিস্তান খুব ভালো দল। নিউজিল্যান্ডে ওদের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই আমাদের খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল। আমরা তাদের শক্তির জায়গা জানি, তারাও আমাদের শক্তির জায়গা সম্পর্কে জানে। তাই দারুণ একটি লড়াই হবে নিশ্চিত।”
আর সেই লড়াইয়ে যদি বাংলাদেশ জিততে পারে, সেমি-ফাইনাল খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপ অভিযান তখন পুরোপুরি সফল বলেই ধরে নেয়া যাবে। শেষ ভালোর রেশ আর মুখে হাসি নিয়ে দেশের বিমানে চেপে বসা যাবে। কাগজে-কলমে সফলতম বিশ্বকাপকে সংশয়ের ঊর্ধ্বে তুলে নেয়াও যাবে। হাতছানি আছে তাই এখনও অনেক কিছু পাওয়ার!
এনএস//