দেরিতে সূর্যোদয়, তাতেই জ্বলেপুড়ে ছারখার!
প্রকাশিত : ২০:৩৫, ৮ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ২০:৩৭, ৮ জানুয়ারি ২০২৩
সূর্যকুমার যাদব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের সময় তার বয়স ছিল ৩১ বছর। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত রান করে ততদিনে পরিচিতি তৈরি করে ফেলেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে যোগ হয় আইপিএলে ঝোড়ো ইনিংসগুলো। যা তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার রাস্তা পাকা করে।
তবুও এত দেরিতে অভিষেক নিয়ে ভাবছেন না সূর্যকুমার যাদব। মারকুটে এই ব্যাটার মনে করেন, এটা আরও তাকে সাহায্যই করেছে, তার রানের ক্ষুধা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
২০২১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সূর্যকুমারের। দুই বছরেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আইসিসির ক্রমতালিকা অনুযায়ী এখন এক নম্বর ব্যাটার তিনি। টি-টোয়েন্টিতে তিনটি শতরান করে ফেলেছেন সূর্যকুমার। সামনে শুধু স্বদেশি রোহিত শর্মা। চারটি শতরান রয়েছে ভারত অধিনায়কের ঝুলিতে।
রাজকোটে শনিবার (৭ জানুয়ারি) রাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১ বলে ১১২ রান করেন সূর্যকুমার। তার এমন ব্যাটিং ঝড়ে রীতিমত উড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেরিতে সুযোগ পাওয়া প্রসঙ্গে রাহুল দ্রাবিড়কে তিনি বলেন, “দেরিতে অভিষেক হওয়া আমার ক্ষুধা বাড়িয়ে দিয়েছে।”
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর দ্রাবিড় এবং সূর্যকুমারের একটি ভিডিও পোস্ট করে বিসিসিআই। সেখানে সূর্যকুমার বলেন, “অনেক দিন ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেছি। মুম্বাইয়ের হয়ে খেলতে আমার ভালোই লাগে। সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দিতে। ওখানেও ব্যাট করতে ভালো লাগত। শেষ কয়েক বছরে কাজটা কঠিন হয়েছে। কিন্তু নিজেকে বার বার বলেছি যে, এটার জন্যই তো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। আমি আনন্দ পাই খেলতে। ক্রিকেটের প্রতি আবেগটাই আমাকে ভালো খেলতে অনুপ্রেরণা দেয়।”
সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ই এখন ভারতীয় দলের কোচ। তারই শিষ্য সূর্যকুমার। কিন্তু দ্রাবিড় যেভাবে ব্যাট করতেন, তার সঙ্গে সূর্যকুমারের খেলার কোনো মিলই নেই।
ভারতীয় বোর্ডের সাইটে দেওয়া ওই ভিডিওতে তাই দ্রাবিড় সূর্যের পরিচয় করানোর সময় বলেন, “এমন একজনের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছি, আমি নিশ্চিত যে, ছোটবেলায় সে আমার ব্যাটিং দেখেনি।” জবাবে সূর্যকুমার হাসতে হাসতে বলেন, “না, না, আমি দেখেছি।”
দ্রাবিড়ের রক্ষণাত্মক ক্রিকেটের সঙ্গে সূর্যকুমারের উইকেটের পিছন দিকে সুইপ মারার কোনো সামঞ্জস্যই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। সেই কারণেই দ্রাবিড় বলেছেন, তিনি নিশ্চিত, সূর্য তাকে ব্যাট করতে দেখেনি।
পরক্ষণেই সূর্যকুমারকে দ্রাবিড় জিজ্ঞেস করেন, কোন ইনিংস খেলে তিনি সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছেন? উত্তরে সূর্য বলেন, “যে কোনো একটা ইনিংস বেছে নেওয়া কঠিন। আমি সব কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করে আনন্দ পেয়েছি। ব্যাট করতে নেমে আমি নিজে উপভোগ করার চেষ্টা করি। গত এক বছর ধরে সেটাই করছি। নিজের মতো খেলতে পছন্দ করি। যখন কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন আমি দলকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। সেটা যদি দল ও আমার জন্য কাজে লেগে যায়, তাহলেই ভালো লাগে।”
নিজের সাফল্যের জন্য পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সূর্যকুমার। তিনি বলেন, “এখনও পর্যন্ত ক্রিকেট ক্যারিয়ারে আমি যা করেছি, তার জন্য আমার পরিবারকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। যখন আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি, সেই সময় থেকে তারা আমার পাশে রয়েছে। আমার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। আমার পরিবারের কেউ খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। পরিবার অনেক স্বার্থত্যাগ করেছে আমার জন্য। স্ত্রীও আমার পাশে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে আমার খাওয়াদাওয়া এবং নিজেকে ফিট রাখার ব্যাপারে প্রচুর সাহায্য করেছে ও।”
সূর্যকুমার যাদব ভারত জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত ১৬টি ওয়ানডে এবং ৪৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। যার মধ্যে ওয়ানডেতে ৩২ গড়ে দুটি ফিফটি হাঁকিয়ে রান করেছেন ৩৮৪টি। অন্যদিকে, টি-টোয়েন্টিতে ৪৩ ইনিংসে ব্যাট করে ৩টি সেঞ্চুরিসহ হাঁকিয়েছেন ১৩টি ফিফটি। ৪৬.৪১ গড়ে ও ১৮০ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন ১৫৭৮টি, সর্বোচ্চ ইনিংস ১১৭ রানের।
এতেই বোঝা যায় শর্টার ভার্সনে কতটা ভয়ঙ্কর ভারতের এই ব্যাটার! সামনে তো তাকে টেস্টেও দেখতে চাইছেন অনেকেই।
এনএস//