কোনো বাধাই দমাতে পারেনি স্বপ্নবাজ আহাদুলকে
প্রকাশিত : ১৬:৪৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৭:১২, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার আহাদুল ইসলাম। লাল-সবুজের জার্সি গায়ে হুইলচেয়ারে বসে হুংকার দিয়েছেন বারবার। সেই আহাদুলই পারিবারিক টানাপোড়েনে দিনাতিপাত করছেন। তবে কোনো বাধাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
গ্রামে একটি মুদি দোকান দিলেও তার ধ্যানজ্ঞান ক্রিকেট। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলতে চাইতেন। কিন্তু সেই সুযোগ পাননি। চট্টগ্রাম শহরে আসার পর সেই সুযোগ মিলে যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ভারত সফরে যান আহাদুল।
আহাদুল বলেন, দেশের হয়ে খেলব, এমন ভাবনা মাথায় এলেই অন্য রকম এক সাহস চলে আসে মনে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ছুটে যাই মাঠে। বর্তমানে চট্টগ্রাম হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক আমি। দলের ২২ ক্রিকেটার নিয়ে নিয়মিত অনুশীলন করি।
শৈশবের কথা মনে করিয়ে দিতেই তার চোখের কোণ মুক্তোদানার মতো জ্বলজ্বল করে ওঠে। আহাদুল বলেন, “আমার শৈশব কেটেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। যখন আড়াই বছর বয়স তখন বাবা-মায়ের ছোট্ট একটি ঝগড়া আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। মা ঝগড়া করে আমাকে নিয়ে তার বাবার বাড়ি চলে যান। অনেক কষ্টের সংসার আমাদের। একদিন মা ক্ষেতে ধানের কাজ করছিলেন, পাশেই রাস্তা। সেই রাস্তা পেরিয়ে মায়ের কাছে যেতে ট্রাকচাপায় আমার পায়ের পাতা চলে যায়। এখানেই শেষ হলে মানা যেত। ভালো চিকিৎসার অভাবে এক সময় পা-টাই হারাতে হয় আমাকে!’
তবু আহাদুল থেমে যাননি, পড়াশোনা চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে জীবনসংগ্রামও। স্থানীয় স্কুল শেষে চট্টগ্রাম শহরে এসে ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে এইচএসসি ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করেন। হাল ধরেন পরিবারের।
ভারতের সঙ্গে দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় নিয়ে ফেরে আহাদুলরা। আর স্বপ্নবাজ আহাদুল মাঠে গর্জন তুলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন। এরপর ২০১৯ সালে ভারতে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল তিন জাতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অদম্য আহাদুলরা। একই বছর নেপালে এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে বিদেশের মাটিতে খেলছেন, কেমন লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে আহাদুল বলেন, “এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। পা হারিয়েও দেশের হয়ে বিদেশের মাটিতে খেলি। মানুষ বাংলাদেশ বাংলাদেশ স্লোগান দেয়, তখন কী যে ভালো লাগে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। হয়তো এ জন্যই জন্মেছি!”
“নিজেকে সেই ছোটবেলা থেকে পিছিয়ে পড়া ভাবতাম না, এখনও ভাবি না; আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। যাতে তরুণরা আমাদের সংগ্রাম অনুধাবন করে তাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে। দেশকে ভালোবাসতে পারে।”
বাংলাদেশ হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মোহাম্মদ মুহসীনের কাছে আহাদুলের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০১৬ থেকে যাত্রা শুরু আমাদের হুইলচেয়ার ক্রিকেটের। তখন থেকেই আমাদের সঙ্গে খেলছেন আহাদুল। অলরাউন্ডার হিসেবে বেশ ভালোই নাম কুড়িয়েছেন। আগামীতেও আহাদুল ভালো করবেন নিশ্চয়ই। তবে তার পারিবারিক সমস্যাটা যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখা হতো, আহাদুল খেলায় আরও মনোযোগী হতে পারতেন বলে আমার বিশ্বাস!”
চলতি মাসেই আহাদুলরা মুম্বাই উড়াল দিচ্ছেন ভারতের সঙ্গে দুটি টি-২০ ম্যাচ খেলতে। সেখানেও ঝড় তুলবে আমাদের স্বপ্নবাজ হুইলচেয়ার বাহিনী। গ্যালারি থেকে আসবে বাংলাদেশ বাংলাদেশ গর্জন। এতেই আহাদুলরা তুলবেন তৃপ্তির ঢেঁকুর!
কেআই/এএইচ