ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ৪৩-ই আমার সেরা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২১, ১ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:১১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭

জাভেদ ওমর বেলিম। বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ক্রিকেটারদের একজন। ক্রিকেটপ্রেমীরা তাঁকে গোল্লা বলেও চিনেন। অভিষেকেই বাংলাদেশের জাভেদ ওমর বেলিম ‘ক্যারি দ্য ব্যাট থ্রু দ্য ইনিংস’ বা আদ্যপান্ত ব্যাট করেছিলেন। জাভেদের পর এই কীর্তি করে দেখাতে পারেননি বিশ্বের আর কোনো ব্যাটসম্যান। শুধু  টেস্টে নয়, এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচেও ‍উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে নেমে আদ্যপান্ত ব্যাটিং করেছেন তিনি। ২০০০ সালে ঢাকায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে পুরো পঞ্চাশ ওভার ব্যাট করে ১৪৬ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

শুধু এই দুই ম্যাচেই নয়, ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই জাভেদ এক প্রান্ত থেকে সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখেছেন, ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে লড়ে গেছেন অবিচল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ক্রান্তিকাল থেকে উন্নতির প্রাথমিক সময় পর্যন্ত ধৈর্যশীলতার মূর্ত প্রতীক হয়ে দারুণভাবে বাংলাদেশ দলকে সার্ভিস দিয়েছেন এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।

১৯৯৫ সালে শারজায় ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তাঁর। আর টেস্ট অভিষেক হয় ২০০১ সালে। ২০১৪ সালে ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন তিনি। দেশের হয়ে খেলেছেন ৪০টি টেস্ট ও ৫৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

সম্প্রতি সাবেক এই তারকার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক মীর মাহবুবুর রহমান

একুশে টিভি অনলাইন : কেমন আছেন জাভেদ ভাই ?

জাভেদ ওমর : আলহামদুল্লিাহ, ভালো আছি ভাই।

একুশে টেভি অনলাইন : বর্তমানে কি করছেন ? ক্রিকেটের সাথেই যুক্ত আছেন নাকি অন্য কিছু করছেন ?

জাভেদ ওমর : ক্রিকেটের সাথেই আছি। বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া বাংলাদেশ একাডেমির হেড কোচের দায়িত্ব পালন করছি।  এটি সিলেটে অবস্থিত।

একুশে টেভি অনলাইন : আপনার জন্ম ও বেড়ে সম্পর্কে বলুন।

জাভেদ ওমর : আমার জন্ম পুরান ঢাকার মাহুতটুলিতে। বেড়ে উঠেছি হোসিনি দালান এলাকায়। আমার পিতা-মোহাম্মদ ওমর বেলিম ও মাতা জুবেদা খাতুন বেলিম। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট আমার ধ্যানজ্ঞ্যান।

একুশে টিভি অনলাইন : জাভেদ ওমরের অনেক ভালো ভালো ইনিংস দেখেছি। এর মধ্যে আপনার কাছে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস কোনটি?

জাভেদ ওমর : অনেক ভালো ইনিংস আছে। পাকিস্তানের পেশোয়ারে আমার ১১৯ রানের ইনিংস আছে। অভিষেকে আছে জোড়া ফিফটি (৬২ ও অপরাজিত ৮৫)। শ্রীলংকার বিপক্ষে অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস আছে। তবু আমার কাছে আমার সবচেয়ে সেরা ইনিংস ৪৩। ২০০৫ সালে টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা ৪৩ রানই আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান ইনিংস। ৩৪০ মিনিট ব্যাট করে ২৫৮ বল খেলে বাংলাদেশকে সিরিজ জেতাতে সাহায্য করেছিলাম। যেটা বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় ছিলো। এই টেস্ট ড্র এর মাধ্যমে সিরিজ জিতেছিলাম বলে এটাই আমার কাছে সবচেয়ে সেরা ইনিংস।

একুশে টিভি অনলাইন : ভারত সফরে একটি টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সও ৩৪০ মিনিটের মতো ব্যাট করেছে। সেও সমান ৪৩ রান করেছে। কিন্তু আপনার মতো ম্যাচটি বাঁচাতে পারেন নি ডি ভিলিয়ার্স। এ বিষয়ে কিছু বলুন।

জাভেদ ওমার : নিজেকে ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে তুলনা করব না। সে একজন মহান ব্যাটসম্যান। কিন্তু দেখুন, তার মতো এতো আক্রমণাত্মক একজন ব্যাটসম্যানও দলের প্রয়োজনে কী রকম বদলে যায়। দলটাই আসল, নিজের জন্য হাততালিটা দিন শেষে কিছুই না।

একুশে টিভি অনলাইন : নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন?

জাভেদ ওমর : আমার ক্যারিয়ার নিয়ে আমি সন্তোষ্ট। আমি কখনো নিজের জন্য খেলিনি। সব সময় দলের জন্য খেলেছি। আমাদের সময় ৫০ ওভার ব্যাট করাটাই ছিলো চ্যালেঞ্জ। আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, আমরা শুরুতে কী সংগ্রামই না করছিলাম। দ্রুতই আমাদের চার-পাঁচটা উইকেট পড়ে যেত। এরপর শেষের দিকে খালেদ মাসুদ পাইলটরা সংগ্রাম করে মোটামুটি কিছু একটা স্কোর করতো। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, টেস্ট ক্রিকেট অন্য এক খেলা। এখানে আপনি মেরে খেলে ৫০ বলে ৫০ করলে হাততালি পাবেন। পত্র-পত্রিকায় আপনার ছবি ছাপা হবে। কিন্তু তাতে দলের লাভ হবে না। টেস্টে রানের চেয়ে বলের খেলা বেশি। এখানে সেশনের হিসাব আছে, প্রতি দিন ৯০ ওভারের হিসাব আছে। ওই ৫০ রানটাই যদি আপনি ১০০ বলে করে দিতে পারেন, তাতে বেশি উপকার।

একুশে টিভি অনলাইন : ক্রিকেটে আপনার আইডল কে ?

জাভেদ ওমর : আমি কাউকে শুধু খেলা দেখে বিচার করিনা। কথা-বার্তা, চাল-চলন, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি দেখেই তাকে বিচার করি। সে দিক থেকে  শচীন টেন্ডুলকারই আমার আইডল ছিলেন। যদিও সে (শচীন) আমার সমসাময়িক ছিলো তারপরও তাকেই আমি আইডল ভাবতাম।

একুশে টেভি অনলাইন: দেশ-বিদেশ তো অনেক মাঠে খেলেছেন। এর মধ্যে আপনার প্রিয় মাঠ কোনটি ?

জাভেদ ওমর : নবাবপুর স্কুল মাঠ, ফজলে-রাব্বি হল মাঠ ও বুয়েট খেলার মাঠ। এই তিন মাঠই আমার প্রিয়। এই মাঠ তিনটির কাছে আমি চিরঋণী।

একুশে টেভি অনলাইন : আপনার ছেলে দাইয়ান জাভেদকেও কি আমরা ক্রিকেটার হিসেবে দেখতে পাবো ?

জাভেদ ওমর : বাংলাদেশে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ। সেখান থেকে সেরা ১১ হওয়া আসলেই অনেক কঠিন। সে এখনো অনেক ছোট। সেও জাতীয় দলে খেলে কিনা সেটা সময়ই বলবে।

একুশে টিভি অনলাইন : ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী কঠিন। তবে ক্রিকেট নিয়ে আশা করা যায়। বাংলাদেশ কবে বিশ্বকাপ জিতবে বলে আপনি আশা করেন ?

জাভেদ ওমর : বিশ্বকাপ  জিততে ভাগ্য লাগে। মেসি এবি ডি ভিলিয়ার্সরা এখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। ভালো খেলার পাশাপাশি ভাগ্যের ছোঁয়া থাকলেই বিশ্বকাপ জেতা যায়। নিকট ভবিষ্যতেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে এমনটা আশা করি।

একুশে টিভি অনলাইন : আপনাদের সময়কার ক্রিকেটের অবস্থার কথা বলুন।

জাভেদ ওমর : অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ক্রিকেট খেলতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া-ভারতের মতো দেশের চেয়ে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে ছিলাম আমরা। আমাদের সময় মাঠে নামাটাই ছিলো একটা চ্যালেঞ্জ।

একুশে টিভি অনলাইন : বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।

জাভেদ ওমর : বাংলাদেশ দল অনেক এগিয়ে গেছে। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সাকিব-তামিমরা অবসর নিয়ে দলের হাল ধরার মতো খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের কথাই ধরুন, সাঙ্গাকারা, জয়বর্ধনে, মুত্তিয়া মুরালিধরনরা অবসর নেওয়ার পর দলটা দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদেরও যাতে এমন অবস্থা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

একুশে টিভি অনলাইন : নতুন প্রজন্ম যারা ক্রিকেটে আসতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

জাভেদ ওমর : নতুন প্রজন্মকে প্রতি আমার পরামর্শ কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, কোয়ালিটি প্র্যাকটিস করতে হবে। প্র্যাকটিস করলেই শুধু হবে না, কোয়ালিটি প্র্যাকটিস করতে হবে। এজন্য ভালো গাইডলাইন প্রয়োজন।

একুশে টিভি অনলাইন : অনেক ধন্যবাদ জাভেদ ভাই আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

জাভেদ ওমর : একুশে টিভি অনলাইনকেও অনেক ধন্যবাদ।

 

/এমআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি