ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শুরু আর শেষ হাসি বাংলাদেশের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫৬, ১৬ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:০৭, ১৭ মার্চ ২০১৮

খেলার উত্তেজনা বুঝি একেই বলে। ফাইনাল না হয়েও এটিই যেন ফাইনাল। শ্রীলঙ্কার কলোম্বতে হিরো নিদাহাসা ট্রফির আজকের বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি যেন জয় পরাজয়ের হিসেবকে ছাড়িয়ে সম্মানের লড়াইতে পরিণত হয়েছিল।

এ ম্যাচে হাসির দখল বদল হতে দেখা যায় বারবার। একবার হাসি যদি বাংলাদেশের শিবিরে থাকে তাহলে একটু পরেই তা চলে যায় লঙ্কান শিবিরে।

টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিং-এ পাঠালে শুরুতেই বিপাকে পরে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৪১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে রীতিমত কোণঠাসা অবস্থা। হাসি বাংলাদেশের শিবিরে। তবে সময় যত যাচ্ছিল হাসি তার পক্ষ বদল করছিল।

দুই পেরেরা মিলে করেন ৯৭ রানের বিশাল জুটি। শেষমেশ ১৫৯ রানে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষ করে শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানেরা।

শুরুতে হোচট খায় বাংলাদেশও। দলীয় ১১ রান ব্যক্তিগত শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবালের সাথে ওপেন করা এবং শ্রীলংকার বিরুদ্ধে আগের জয়ের অন্যতম নায়ক লিটন দাস। পদোন্নটি পাওয়া সাব্বির রহমানও ব্যর্থ। ৮ বলে ১৩ রান করেই আকিলা ধনঞ্জয়ের বলে পেরেরার কাছে সহজ ক্যাচ দিয়ে ঘরে ফেরেন।

‘ওয়াল অব বাংলাদেশ’ মুশফিককে নিয়ে লঙ্কান বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকেন তামিম। ২ উইকেটের বিনিময়ে দলীয় রান যখন ৯৭ তখন হাসির দখলে আবার বাংলাদেশ। তবে ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে ২৮ রান (২৫ বলে) করে মুশফিক যখন আউট হলেন তখন মাঠের গ্যালারি থেকে ‘অপমান’ই পেলেন এই ব্যাটসম্যান। গ্যালারি থেকে শ্রীলঙ্কান দর্শকদের অনেকেই ‘নাগিন ড্যান্স’ দিয়ে বিদ্রুপ করছিলেন মুশফিককে। হাসি দখলের লড়াই পৌছাল সম্মান দখলে।

মুশফিকের পরে দ্রুতই সাজঘরে ফেরেন অর্ধশতক পূর্ণ করা তামিম; এরপর সৌম্য সরকার। এই ম্যাচে দলে ডাক পাওয়া নিয়ে বিতর্কের পালে হাওয়া আরও বাড়িয়েই দেন এই ব্যাটসম্যান। ক্রিসে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

সাকিব আর মাহমুদউল্লাহর ওপর যখন পুরো বাংলাদেশের দায়িত্ব তখন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসান। আবারও লঙ্কান শিবিরের বিদ্রুপ। ১৮ তম ওভারের শেষ বলের ঘটনা এটি।

মাহমুদউল্লাহ আর মেহেদী হাসান মিরাজের লক্ষ্য ১২ বলে ২৩ রান। ১৯ তম ওভারের শেষ বলে অলস দৌড়ে রান আউট মেহেদী হাসান মিরাজ। হাসি শ্রীলঙ্কান শিবিরে।

শেষ ছয় বলে দরকার ১২। প্রথম বলে বাউন্সার দিয়ে ডট নিলেন উদানা। হাসি আবারও লঙ্কান শিবির আর দর্শক গ্যালারিতে। দ্বিতীয় বলে আবারও বাউন্সার। তবুও দৌড় মাহমুদউল্লাহ আর মুস্তাফিজুর রহমানের। মাহমুদুল্লাহ স্ট্রাইকিং ক্রিস বুঝে নিলেও রান আউট হলেন মুস্তাফিজ।

এরপরেই ম্যাচজুড়ে শুরু হয় উত্তেজনা। সাইড লাইন থেকে মূল একাদশে জায়গা না পাওয়া খেলোয়াড়দের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পরেন নুরুল হাসান সোহাগ।

একপর্যায়ে সেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে সবুজ মাঠ ও মাঠের বাইরেও। পরপর দুই বলের বাউন্সার থেকে নো-বল বঞ্চিত বাংলাদেশ এক পর্যায়ে ম্যাচই বয়কট করতে চান।

সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে ম্যাচ রেফারি কোনভাবেই শান্ত করতে পারছিলেন না টাইগার দলপতি সাকিব আল হাসানকে। হাতের ইশারায় মাহমুদউল্লাহকে ড্রেসিং রুমে ফিরে আসতে বলেন সাকিব। তবে ভারপ্রাপ্ত কোচ খালেদ মাহমুদের হস্তক্ষেপে ব্যাট হাতে ক্রিজে যান মাহমুদউল্লাহ।

৪ বলে ১২ রান লাগবে খেলার যখন এই অবস্থা তখন উদানার তৃতীয় বল ক্রিসের অনেক বাইরে থেকে কভার দিয়ে ঠেলে মাঠের বাইরে পাঠান রিয়াদ। ৩ বলে প্রয়োজন ৮।

এরপরের বলে ঝুঁকি নিয়ে নিলেন আরও ২ রান। হাসি তখন দাড়িপাল্লার একদম মাঝখানে। ২ বলে মাহমুদউল্লাহর দরকার ছিল মাত্র ৬ ছয় রান। তবে শেষ বলের ঝুঁকি না নিয়ে ফুল অনে ফ্লিক করে ছয় হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন।

ম্যাচ জয়ের পর মাহমুদুল্লাহ যখন শূন্যে লাফিয়ে উঠলেন উদানা তখন হতাশায় হাটু মুড়ে বসেই পড়লেন। পুরো ম্যাচের ফলাফল যেন এই এক ছবি থেকেই বোঝা যায়।

মাঠের পিনপতন নিরবতাকে ছাপিয়ে টাইগারদের গর্জন সেখানে বেশ উচ্চ স্বরের। শেষ হাসিটা তাই বাংলাদেশের মুখে।

আর হ্যাঁ, নাগিন ড্যান্স নেচে আসতে ভোলেননি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কানদের কান্নার জ্বলে ভাসিয়ে বাংলা শিবিরের এই হাসি সিরিজের ট্রফির থেকেও অনেক মূল্যবান!

 টিকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি