শান্ত-নাসির ঝড়ে চ্যাম্পিয়ন আবাহনী
প্রকাশিত : ১৯:২৯, ৫ এপ্রিল ২০১৮
প্রিমিয়ার লিগের শেষ ম্যাচ জিতলেই চ্যাম্পিয়ন, এমন সমীকরণ সামনে রেখে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মাঠে নেমেছিল ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী। শিরোপা পুনরুদ্ধার ম্যাচে জয় দিয়েই রঙিন করেছে তারা শিরোপা উৎসব।
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে ৯৪ রানের ব্যবধানে হারিয়ে এক বছর বিরতি দিয়ে আবারো ঘরে তুলেছে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। নিজেদের রেকর্ড আরেকধাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীর এটি ১৯তম শিরোপা।
বৃহস্পতিবার বিকেএসপিতে শান্ত ও নাসিরের ঝড়ো সেঞ্চুরি আবাহনীকে এনে দেয় ৩৭৪ রান। আগের ম্যাচেই ৩৯৩ রানের রেকর্ড গড়েছিল দলটি। এবার লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরে ছাড়িয়ে গেল নিজেদের ৩৭১ রানকে। বিশাল রান করায় রূপগঞ্জকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল আবাহনী। রূপগঞ্জও চ্যালেঞ্জ নিয়েই ম্যাঠে নেমেছিল কিন্তু দুঃসাধ্য কাজটি শেষ পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি তারা। শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়ে যায় ২৮০ রানে।
আবাহনীর আজ শুরু থেকেই প্রতিফলিত হয়েছে জয়ের তাড়না। এনামুল হক ও শান্তর উড়ন্ত সূচনায় দল পায় বড় ধরনের স্কোর। ১০ ওভারেই তারা তোলে ৮২ রান। এনামুল শুরুতে ছিল বেশি আগ্রাসী। ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৮ বলে। ৫১ বলে ৫৭ রান করে এনামুল সাঁজ ঘরে ফিরে যান পারভেজ রসুলের অফ স্পিনে। এ আউটের মাধ্যমে ভেঙে যায় ৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
সঙ্গী এনামুলকে হারানোর পর রানের গতি বাড়ানো শুরু করেন শান্ত। এরপর একে একে ফিরে যান হনুমা বিহারি ও মোহাম্মদ মিঠুন। তাদের দ্রুত পতন আবাহনীর রানের স্রোতে ভাটা পড়েনি। নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে রানের ধারা অব্যাহত রাখেন শান্ত।
তবে নাসিরের শুরুটা ছিল ধীরগতি। ফর্মে থাকা শান্তকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শান্তর রান যখন ৭৫ বলে ৬৯, নাসিরের তখন ৩৯ বলে ১৮। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নাসির একসময় সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান। ৫৬ বলে করেছিলেন প্রথম পঞ্চাশ। পরের পঞ্চাশ করতে তার খরচ হয় ২৩ বল। এবারের লিগে তিনি প্রথম সেঞ্চুরি করেন ৭৯ বলে। এরপরও চালিয়ে যান ঝড়।
স্পিনার আসিফ হাসানের টানা তিন বলে দুই চার ও এক ছক্কার পর নাসির শেষ পর্যন্ত স্টাম্পড হন। আবাহনী এ অধিনায়ক ৯১ বলে ১৫টি চার, ৪টি ছক্কার সাহায্যে ১২৯ রানের ইনিংস খেলেন।
নাসির ফেরার একটু আগেই শান্ত সেঞ্চুরির ঠিকানায় পৌঁছে যান ৯৭ বলে। এবারের লিগে তরুণ এ ব্যাটসম্যনের চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি। ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১০৭ বলে ১১৩ করে যখন ফিরছেন শান্ত, সতীর্থ এনামুলকে টপকে তখন উঠে গেছেন লিগের রান তালিকার চূড়ায়ও। ৭৪৯ রান নিয়ে লিগ শেষ করলেন শান্ত, এনামুল করেছেন ৭৪৪।
বিশাল পুঁজির পর বোলিংয়ে আবাহনীকে সাফল্য এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ওভারেই ফেরান আব্দুল মজিদকে। এর পরে ফিরিয়ে দেন অভিষেক মিত্রকেও।
তবুও রূপগঞ্জ চ্যালেঞ্জ জানায় আবাহনীকে। এবারের লিগে দুর্দান্ত খেলা মোহাম্মদ নাঈম খেলতে থাকেন দারুণ সব শট। মুশফিকুর রহিম দেখা দেন আপন চেহারায়। তবে আবাহনীর এমন রান তাড়ায় যে ধরনের বড় ইনিংস দরকার, সেটি উপহার দিতে পারেননি কেউ। ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও জলে ওঠেন নাসির। ফিরিয়ে দেন মুশফিক, নাঈমকে। ৫৪ বলে ৭০ রান করে ফিরে যান নাঈম। মুশফিক ফেরেন ৬৬ বলে ৬৭ রানে।
পরে হাল ধরেন অধিনায়ক নাঈম ইসলাম। তবে সঙ্গী পাননি তেমন কাউকে। পারভেজ রসুল আউট হন ২৫ বলে ২৯ করে। পরে ৬৮ বলে ৭৬ রান করে আউট হয়ে যান নাঈমও।
শেষ দিকে ২৯ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা। এক উইকেট নিয়ে লিগে মাশরাফির রেকর্ড থেমেছে ৩৯ উইকেটে। সেঞ্চুরির পর গুরুত্বপূর্ণ উইকেট দুটি নিয়ে দলের শিরোপা জয়ের ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ অধিনায়ক নাসির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী- ৫০ ওভারে ৩৭৪/৬ (এনামুল ৫৭, শান্ত ১১৩, বিহারি ৬, মিঠুন ১, নাসির ১২৯, মোসাদ্দেক ১৯*, মিরাজ ৭, মাশরাফি ২৮*; শহিদ ২/৮১, আশিকুজ্জামান ০/৬৮, রসুল ৩/৪২, আসিফ ১/৯৩, মোশাররফ ০/৫৩, নাঈম ইসলাম ০/৩২)।
রূপগঞ্জ- ৪২.৪ ওভারে ২৮০ (মজিদ ০, মোহাম্মদ নাঈম ৭০, অভিষেক ১৩, মুশফিক ৬৭, নাঈম ইসলাম ৭৬, রসুল ২৯, নাজমুল মিলন ৭, মোশাররফ ৭, শহিদ ০, আশিকুজ্জামান ০*, আসিফ ০; মিরাজ ২/২৯, মাশরাফি ১/৩০, সানজামুল ২/৬২, সন্দ্বিপ ২/৫৩, নাসির ২/৬৭, সাকলাইন ০/৩৭)।
ফল: আবাহনী ৯৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাসির হোসেন
আর/টিকে