ব্রাজিল বনাম ফ্রান্সের সেই ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল
প্রকাশিত : ১৯:২৪, ৪ জুন ২০১৮
(ফাইল ফটো)
ফুটবলের বিশ্ব আসর শুরু হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। ফুটবল পাগল বাংলাদেশিরা ইতোমধ্যে দুই ভাগ বিভক্ত হয়ে আছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থনে। দুই দলের সমর্থকই বিশ্বাস করে এবারের বিশ্বকাপ তাদের ঘরেই যাবে। বিশ্বকাপের এই উত্তেজনাকর মূহুর্তে ফিরে যাওয়া যাক ১৯৯৮ সালে। আর্জেন্টিনা ছাড়াও ব্রাজিলের দীর্ঘদিনের আরেক শত্রুর নাম ফ্রান্স। সেবার স্বাগতিক দেশ ফ্রান্সের নিখুঁত নকশায় ফাইনালে সেই শত্রুর মুখোমুখি ব্রাজিল। মিশেল প্লাতিনির পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন করেন জিদানরা। ফেভারিট থেকেও ৩-০ গোলে গেরেছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ান ব্রাজিল।
১৯৯৮ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন দেশ ছিল ফ্রান্স। আয়োজক কমিটির যুগ্ম প্রধান ছিলেন ফ্রান্স ফুটবলের কিংবদন্তি তুল্য খেলোয়াড় মিশেল প্লাতিনি। তিনি একটি ছক কষলেন। আর তা হলো, ফ্রান্স ও ব্রাজিল যদি গ্রুপ পর্ব শীর্ষস্থান ধরে রেখে শেষ করে আর দুই দলই যদি নক আউট পর্বের বাঁধা অতিক্রম করতে পারে তাহলে ফাইনালে মুখোমুখি হবে ব্রাজিল ও ফ্রান্স।
১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী ব্রাজিল দলের বিপক্ষে এই পরিকল্পনা কিন্তু বেশ সাহসের দাবি রাখে। ব্রাজিল দলে ছিলেন আগের বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক দুঙ্গা। ছিলেন কাফু, রিভাল্ডোর মতো অভিজ্ঞ মিড ফিল্ডার ও প্লে মেকার। আরও ছিলেন বিশ্বকাপের স্বাদ পাওয়া ‘মিস্টার ফ্লেমেঙ্গো’ খ্যাত রোনালদো, রবার্ট কার্লোসের মতো খেলোয়াড়েরা।
ব্রাজিলের বিপক্ষে ফ্রান্স দলে প্লে-মেকার জিনেদিনে জিদান আর স্ট্রাইকার স্টিফেন গুইভার্চ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলেন না। তবে দলের অন্যতম ভরসার নাম ছিল গোলরক্ষক ফেবিয়েন বার্থেজ।
ফ্রান্সের সেইন্ট ডেনিস শহরের স্টেড ডি ফ্রান্স জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়াম। এখানেই ১৯৯৮ সালের ১২ জুলাই ফাইনলে মুখোমুখি হয় ব্রাজিল ও ফ্রান্স। কিক অফের শুরু থেকেই ব্রাজিল শিবিরে একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে ফ্রান্স। গোল পোস্টের দিকে প্রথম আক্রমণটিও করে ফ্রান্স।
খেলার প্রায় ৪ মিনিটের মাথায় স্ট্রাইকার গুইভার্চের জন্য দারুণ এক সুযোগ করে দেন জিদান। তবে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি গুইভার্চ। ম্যাচের প্রায় ৭ মিনিটের মাথায় প্রথম ফ্রি-কিকের বাঁশি বাঁজে। জিদানের নেওয়া শটে মাথা ছোয়ান রাফি জরকায়েফ। তবে গোল পোস্টের অনেক বাইরে আর ওপর দিয়ে যায় সেই হেড।
ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বলার মতো আক্রমণ হয় ম্যাচের ২১ মিনিটে। ডি-বক্সের বাইরে বাম কোণা থেকে রবার্ট কার্লোসের সেই শট কাপিয়ে দিয়েছিল স্বাগতিকদের। খুব সামান্য ব্যবধানে জালের ওপরে গিয়ে পরে বলটি। এর প্রায় দেড় মিনিট পরে আরেকটি সুযোগ পায় ব্রাজিল। একই দিক থেকে ক্রস নেয় স্ট্রাইকার রোনালদো। কিন্তু গোল পোস্টের সামনে থেকে বেবেতো কিছু করার আগেই সেই ক্রস তালুবন্দী করেন ফেঞ্চ গোলরক্ষক বার্থেজ। হাত থেকে প্রায় ছুটে যাওয়া বল ঠিকই ধরে রাখেন তিনি। আর সেই সঙ্গে মনে হয় ফ্রান্সের বিশ্বকাপটাও!
২৪ মিনিটে আরও একটি সুযোগ পায় ব্রাজিল। লিও নার্ডোর নেওয়া কর্ণার কিক নিখুঁতভাবে পৌঁছায় রিভালদোর মাথায়। হেড নেন গোলপোস্টে। কিন্তু ফ্রান্সের দেয়াল হয়ে তা রুখে দেন বার্থেজ।
২৭ মিনিটে আরও একটি কর্ণার। তবে এবার ব্রাজিলের ডি-বক্সে ফ্রান্সের কর্ণার। কর্ণার শট থেকে ছুটে আসা বলে আলতোভাবেই যেন মাথাটা ছুইয়ে দিলেন জিদান। তবে বার্থেজের মতো তা রুখে দিতে পারেননি ব্রাজিলের গোলরক্ষক তাফারেল। খেলায় তখন ব্রাজিল ১-০ গোলে এগিয়ে।
এরপর প্রথমার্থে আরও অনেক সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগেত ব্যর্থ হয় দুই দলই। এরই মধ্যে বের হয়ে আসে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড। কার্ডটি দেখেন ব্রাজিলের জুনিয়র বায়ানো। খানিক বাদেই রিভালদো ফাউল করার জন্য হলুদ কার্ড দেখেন ফ্রান্সের অধিনায়ক দিদিয়ের দেশ্চ্যাম্প। এমন উত্তেজনার মধ্যেই প্রথমার্থের অতিরিক্ত সময়ে ব্রাজিলের জালে আরও একবার বল জড়ান জিদান। এবারও সেই কর্ণার, আর জিদানের মাথা!
দ্বিতীয়ার্থে শিরোপা ধরে রাখার যুদ্ধে মরিয়া অনেক চেষ্টা করেও গোল পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। কোনভাবেই ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা কবজ ভাঙ্গতে পারছিল না কাফু-কার্লোস-রিভালদো আর রোনালদোরা। এক পর্যায়ে ডি-বক্সের অনেক বাইরে থেকে দূরবর্তী শট নিতে শুরু করে ব্রাজিল। কিন্তু সেগুলোও গোল পোস্ট ভেদ করতে পারেনি।
এক প্রকার নিশ্চিত জয়ে ব্রাজিলের কফিনে শেষ পেরেকটি ঢুকে দেন ফ্রান্সের ইমানুয়েল পেটিট। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত সময়ে তৃতীয় মিনিটে ফ্রান্সের হয়ে তিন নম্বর গোলটি করেন তিনি। ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতে নেয় ৩-০ গোলে।
দলের জন্য দুই গোল করে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন ফ্রান্সের জিদান। আর নিজের অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে খালি হাতে দল নিয়ে বাড়ি ফেরেন ব্রাজিল দলপতি দুঙ্গা।
এসএইচ/