পুতিনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই কারাগারে
প্রকাশিত : ০৮:১৯, ৯ জুন ২০১৮
বিশ্বকাপের আগে রাশিয়ায় এখন ভ্লাদিমির পুতিন সরকারের বিরোধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মস্কোর উনিশ বছরের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক ছাত্রী মারিয়া দুবোবিক তার বন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সরকার বিরোধী মন্তব্য করায় গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত কারান্তরালে কাটাতে হবে।
এখানেই শেষ নয়। মস্কোর রাস্তায় রাস্তায় গৃহহীন যে সমস্ত মানুষ ঘুরে বেড়ান তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিশ্বকাপ কেন্দ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত অস্থায়ী শিবিরে। যারা অন্যত্র চলে যেতে অস্বীকার করছেন তাদের মারধর করা হচ্ছে।
নিজের নাম গোপন রেখে মস্কোর এক পুলিশকর্মী রাশিয়ার এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে বলেছেন, ‘জোর করেই ওদের আমরা বিশেষ বাসে তুলে দিচ্ছি। কখনও কখনও মুখের কথাতেই ওদের বিদায় জানাচ্ছি। কখনও বা লাঠি দিয়ে আঘাত করে।’
সব চেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা অবশ্যই মারিয়া দুবোবিকের গ্রেফতার হওয়া। যা নিয়ে পশ্চিমী দুনিয়াতেও হইচই পড়ে গিয়েছে। আদালতে তুলে তার বিরুদ্ধে ‘চরমপন্থী গোষ্ঠী সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হচ্ছিল’ বলে অভিযোগ। মারিয়ার সঙ্গে আটক করা হয়েছে তার পাঁচ বন্ধুকেও। তিনি আদালতের কাছে আকুতি জানিয়ে আবেদন করেন, তাকে যেন গৃহবন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু সেই আবেদনও মঞ্জুর হয়নি। বিচারাধীন মারিয়ার প্রতি সমব্যথী এক আইনজীবী ম্যাক্সিম পাশকভ বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের জন্য নিরাপত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে সরকার। যার ফলে নির্দোষ নাগরিকরাও অকস্মাৎ বিপদে পড়ছেন।’
অন্য দিকে, ইরিনা নামে এক গৃহহীন মহিলা দাবি করেছেন, অসহায় দরিদ্র মানুষের উপর উচ্ছেদের নামে অত্যাচার করা হচ্ছে এমন একটা সময়, যখন রাস্তাঘাটে লোকজন থাকছে না। জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপের আয়োজক শহর কাজানের গৃহহীন মানুষদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাতারস্থানে প্রত্যন্ত একটি জায়গা নাবেরেঝাইন চেলনিতে।
উচ্ছেদিতদের একজন ইরিনা বলেছেন, ‘কেউ চলে যেতে চায় না। কিন্তু প্রতিবাদ হলেই ওরা বলপ্রয়োগ করছে।’
জানা গেছে, যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভেরের কাছে ৮০০ শয্যার কোনও গোপন শিবিরে। সেখানে নানা ধরনের অত্যাচারও হচ্ছে বলে অভিযোগ।
মস্কোর সমাজসেবা দফতর অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের বক্তব্য, ‘গৃহহীন মানুষেরাও এ দেশেরই নাগরিক। তাই জোর করে ওদের অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়াটা অসাংবিধানিক। আমাদের সরকার এমন কোনও নির্দেশ দেয়নি যে বিশ্বকাপের জন্য ওদের দূরে কোথাও সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমরা সব সময়ই আইন মেনে কাজ করি। আমরা তো গৃহহীন মানুষদের নিয়ে মস্কো পার্কে ফুটবল ম্যাচও করেছি।’
রাশিয়ার যে সংবাদমাধ্যমে অসহায় গৃহহীনদের নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাদের দাবি সরকারের বক্তব্য সঠিক নয়। তা ছাড়া অতীতেও রাশিয়াতে খেলাধুলোর বড় আসর বসার সময় একই ধরনের কাজ হয়েছে। এমনকি সাবেক সোভিয়েত জমানায় মস্কো অলিম্পিক্সের সময় রাজধানীর রাস্তাঘাট কার্যত শুনশান করে দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ উঠেছে, কেজিবি-র প্রাক্তন প্রধান পুতিনের সরকারও সাবেক জমানার মতোই নাকি এখন কাজ করছেন।
এসএ/