ফুটবলের নতুন বিস্ময় ভিনিসিয়াস জুনিয়র!
প্রকাশিত : ১৭:৫০, ২১ জুলাই ২০১৮
রিয়ো দে জেনেইরো ছাড়িয়ে আরো ভিতরের দিকের এক শহরতলি সাও গনসালো। সেখানকার রাস্তায় ফুটবল নিয়ে মেতে থাকত এক দরিদ্র পরিবারের ছেলে।
শুক্রবার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ছেড়ে যাওয়া সান্তিয়োগা বের্নাবাউতে সেই ব্রাজিলীয় ছেলেটিকেই তাদের নতুন উঠতি তারকা হিসেবে উন্মোচন করল রিয়াল মাদ্রিদ। তার নাম ভিনিসিয়াস জুনিয়র। তাকে বলা হচ্ছে ব্রাজিলের নতুন এক নেইমার। তিনি ফুটবলের নতুন বিস্ময় বালক!
মাত্র ১৮ বছর বয়সে যাকে রিয়াল কিনল ৩৮ মিলিয়ন পাউন্ড (৩৪২ কোটি টাকা) দিয়ে। ২০১৩-তে স্যান্টোস থেকে নেমার জুনিয়রকে ৪৯ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে কিনেছিল বার্সেলোনা। কিন্তু সেই নেমারও ছিলেন অনেক পরিণত। মাত্র ১৮ বছর বয়সি এক কিশোরের জন্য এত টাকা খরচ করা নজিরবিহীন।
শুক্রবার রিয়ালের মাঠে যখন দর্শকদের সামনে তাকে নিয়ে আসা হল, পাশে আর এক ব্রাজিলীয় কিংবদন্তি— রোনাল্ডো। যিনি রিয়ালের হয়ে ১৭৭ ম্যাচে ১০৪ গোল করে ক্লাবের ‘হল অব ফেমে’ রয়েছেন। ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেসও ছিলেন। এখনও তার জার্সিতে কোনও নম্বর নেই। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, মাদ্রিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাকে রিয়ালের ‘বি’ দলে পাঠানো হবে কি না সেটাই দেখার। ভিনিসিয়াস জানেন, আকাশছোঁয়া দরে রিয়ালে এলেও প্রথম দলের জার্সি পাওয়া সহজ হবে না।
কিন্তু যিনি বড়ই হয়েছেন জীবনসংগ্রাম করতে করতে, তার কাছে লড়াই নতুন কোনও শব্দ হতে পারে না। দিদিমার বাড়িতে বাবা-মা এবং দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন ভিনিসিয়াস। নিজেদের বাড়িও ছিল না। দিদিমার কাছে খাদ্যের অভাব হত না ঠিকই কিন্তু দারিদ্রের ছাপ ছিল স্পষ্ট। সেই সঙ্গে আরও একটি জিনিস প্রকট ছিল ছেলেবেলা থেকে। ভিনিসিয়াসের ফুটবল প্রতিভা। মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই যা সকলের নজর টেনেছিল। মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁকে সই করায় ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো। দু’বার বাস পাল্টে ফ্ল্যামেঙ্গোর ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হত তাকে।
তিন বছরের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৫ দলের হয়ে অভিষেক। ১৪ বছর বয়সে কাকার সঙ্গে রিয়োতে চলে আসেন, যাতে আরও ভাল ভাবে ফুটবলে মন দিতে পারেন। ব্রাজিলের বিখ্যাত যুব ফুটবল প্রতিযোগিতা কোপা সাও পাওলোতে দারুণ খেলে তিনি সকলের নজর কেড়ে নেন। ১৫ বছর বয়সে ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে বোতাফোগোর বিরুদ্ধে ডার্বিতে তাঁর গোল দেখে ব্রাজিলের ফুটবল ভক্তরা নিশ্চিত হয়ে যান, তাঁদের নতুন প্রতিভা উপস্থিত। গত বছর ব্রাজিল অনূর্ধ্ব-১৭ দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে। সেখানে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছিলেন ভিনিসিয়াস।
রিয়ালে আসার কথাও চূড়ান্ত হয়ে যায় গত বছরেই। এ দিন নিজের দেশে কিংবদন্তি রোনাল্ডোর পাশে দাঁড়িয়ে ভিনিসিয়াস প্রথম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পরিবারের কাছে। বললেন, ‘‘আমার স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য সব চেয়ে বেশি করে ধন্যবাদ দিতে চাই পরিবারকে। আমি জানি মানিয়ে নেওয়া সহজ হবে না কিন্তু আমি তৈরি।’’ মাত্র ১৮ বছর বয়সেই প্রত্যয় তাঁর গলায়, ‘‘খুব সাধারণ একটা প্রেক্ষাপট থেকে বিশ্বের সেরা ক্লাবে আমি পৌঁছে গিয়েছি। এখানে এসে আমার কোচ এবং সতীর্থদের দেখাব যে, আমি খেলার জন্য তৈরি।’’
রিয়ালের ক্লাব প্রেসিডেন্টও যা শুনে বলে ফেললেন, ‘‘ব্রাজিল থেকে আরও এক রত্ন উঠে এসেছে। তাকে দেখার অপেক্ষায় ব্রাজিল, রিয়াল মাদ্রিদ এবং গোটা ফুটবল বিশ্ব!’’ দশ বছর আগে নেমারের উত্থানের পর এত হইচই আর কোনও ব্রাজিলীয় প্রতিভাকে ঘিরে দেখা যায়নি।
আরকে//