ঢাকা, শুক্রবার   ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

এক হাতে ব্যাট: অবিস্মরণীয় মুহূর্ত নিয়ে যা বললেন তামিম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বর্তমান সময়ে ক্রিকেট আলোচনার ‘হটকেক’ তামিম ইকবাল। দেশসেরা এই ওপেনার এশিয়ার কাপের প্রথম ম্যাচে যে দেশপ্রেম ও ক্রিকেটপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন তা ইতিহাসে বিরল।

টাইগার এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যান ফের প্রমাণ করলেন, একজন আদর্শ ক্রিকেটারের জন্য দলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নয়।

দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতেই ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান তামিম।

পরে জানা যায়, তার এশিয়া কাপই শেষ। বাংলাদেশ দলও তখন মহাবিপর‌্যয়ে। একদিকে ক্রিজ আগলে রেখেছেন মুশফিকুর রহীম। অপর প্রান্তের টেল এন্ডের ব্যাটসম্যানরা মুড়ি মুড়কির মতো পড়ে যাচ্ছেন শ্রীলংকান বোলারদের দাপটে।

তখন একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের অভাব বোধ করছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু তামিম তো হাসপাতারের ব্যাডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। কিন্তু তখনও করো ধারণা ছিল না সামনে কত বড় চমক আসতে যাচ্ছে।

দলের প্রয়োজনে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন মাঠে নামলেন সবার চোখে অবিশ্বাসের ছায়া। এ সময় এক হাতে ব্যাট করে বিরল নজির গড়েন টাইগার এই ওপেনার।

তামিম দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে নিজের ইনজুরি তুচ্ছজ্ঞান করে বাইশগজে ফেরেন। প্রিয় মুশফিককে সঙ্গ দিতে মাঠে নামেন। প্রথমেই পড়লেন লঙ্কান বোলার সুরঙ্গা লাকমলের গতির সামনে।

ভাঙা হাতে লাগলে ইনজুরি ভয়ঙ্কর হতে পারে, তাই বাঁ হাতটা শরীরের আড়ালে লুকিয়ে রাখলেন। ডান হাত দিয়ে দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিলেন বল। দৃশ্যটি যেন ক্রিকেটের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসী সেই মুহূর্তে নিজের অনুভূতির বর্ণনা দিয়েছেন তামিম নিজেই। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ইএসপিএন ক্রিকইনফো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তামিমের ভাষ্য, ‘ওই ১০ সেকেন্ড খুবই সাহস অনুভব করেছিলাম। স্টেডিয়ামের চারদিকের গ্যালারি থেকে ধেয়ে আসা লাল-সবুজ সমর্থকদের গর্জন আমাকে দুঃসাহসী করে তুলেছিল। যেকোনো কিছুই ঘটতে পারত। আউট হতে পারতাম, একটু এদিক ওদিক হলে পুরো ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারত। তবে ওই মুহূর্তে জাতি ও দলের প্রতি খুবই, খুবই অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলাম।’

পেশাদার দলের বিপক্ষে একহাতে ব্যাট করাটা যে ঝুকিপূর্ণ এটিও উঠে আসে টাইগার ওপেনারের কথায়। এভাবে ব্যাট করা সত্যিই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। আমি শুধু ডান হাতেই ব্যাট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন-বলটি খেলার সময় বাঁ হাতও সামনে এগিয়ে এসেছিল। যদি সেটি মিস করতাম, তা হলে আহত হাতেই লাগত।

‘রুবেল যখন ক্রিজে ছিল আমি তখন প্যাড আপ করা শুরু করি। মাশরাফি ভাই আমার গ্লাভস কেটে দেন। জীবনে প্রথম অন্য কেউ আমাকে গার্ড পরিয়ে দিয়েছে! মুমিনুল এবং অন্যরা আমাকে প্যাড পরতে সাহায্য করে। সবাই আমাকে তখন দারুণ সহায়তা করছিল, সাহস দিচ্ছিলো।’

‘যখন মুস্তাফিজ আউট হলো, তখন পর্যন্তও নিশ্চিত ছিলাম না নামবো কিনা। আমি কিছু চিন্তা না করেই নেমে পড়েছিলাম। আমাকে জিগেস করা হয়েছিল আমি নিশ্চিত কিনা, আমি দ্বিধাহীন ছিলাম।’

‘এই এশিয়া কাপ নিয়ে আমার অনেক উচ্চাশা ছিল এবং আমি ওই মুহূর্তে আবেগের বশেই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল যদি আমি এক বল খেললে দল আরো ৫ কিংবা ১০ রান করতে পারে এবং সেটা দলের উপকারে আসে, তাহলে কেন নয়? কেউ হয়তো আশা করেনি যে আমি ১ বল খেললে অপর প্রান্ত থেকে ৩২ রান আসবে। মুশফিক অসাধারণভাবে শেষ দিকটা সামলেছে।’

‘আমার মনে হয় না আমার জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে। এখন আমি সবার প্রতিক্রিয়া দেখছি, কিন্তু আমি যখন ব্যাট করতে নামছিলাম এসব কোন কিছুই তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমি শুধু আমার দল এবং দেশের কথা ভেবে নেমেছিলাম।’

শনিবার এশিয়ার কাপের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে দলীয় ২২৯ রানে ৯ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। শেষ উইকেটে নেমে এক হাতে লাকমলের মারাত্মক ডেলিভেরি মোকাবেলা করেন তামিম।

তাঁর এমন মানসিকতা দেখে যেন আরও তেতে যান গোটা ইনিংসে আলো ছড়ানো মুশফিক। শেষ পর্যন্ত চোটগ্রস্ত বাঁহাতি ওপেনারকে নিয়ে ৩২ রান যোগ করেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। সবকটিই তার রান। মাঝে মাত্র একটি বল খেলেন তামিম। ওই একটি বল ঠেকিয়েই দলকে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে তোলার পথে এগিয়ে দেন।

অবশেষে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে ১৩৭ রানে।

সূত্র: ক্রিকইনফো।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি