ঢাকা, শনিবার   ৩০ নভেম্বর ২০২৪

রাজনীতির মাঠে মাশরাফি

ক্লিন ইমেজের মানুষটির দিকে দৃষ্টি সবার

সোহাগ আশরাফ :

প্রকাশিত : ১৫:৩৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৮

কিছুদিন ধরেই আলোচনায় বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক, নড়াইল এক্সপ্রেস খ্যাত মাশরাফি বিন মুর্তজা। চারিদিকে একটাই জল্পনা-কল্পনা বাসা বেঁধে ছিল। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্য হলো। খেলার মাঠের এই হিরো পা রাখলেন রাজনীতির মাঠে। আর এর মধ্য দিয়ে শুরু করলেন বর্ণাঢ্য জীবনের নতুন এক ইনিংস। খেলার মাঠে তার সাফল্য নিয়ে কারও মনে কোনো প্রশ্ন নেই, সেখানে বলতে গেলে শতভাগই সফল তিনি। কিন্তু হিসেব এসে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির মাঠে কতটুকু সফল হতে পারবেন এই ন্যাশনাল হিরো।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান মাশরাফি। ইতিমধ্যে মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছেন। নির্বাচিত হলে নিজ জেলা নড়াইলকে সুন্দর ও আধুনিক করে গড়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন এই মাঠের হিরো।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের আগে মাশরাফি গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করে দোয়া নেন দেশসেরা এই ক্রিকেটার।

মনোনয়নপত্র তুলে নিজের এক প্রতিক্রিয়ায় মাশরাফি বলেন, ‘নৌকার বিজয় নিশ্চিত করে নড়াইলকে সুন্দর ও আধুনিক করে সাজাতে চাই।’

যদিও মাশরাফি বিন মুর্তজা এরই মধ্যে খেলাধুলার পাশাপাশি নিজ এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িয়েছেন। গত বছর তিনি গড়ে তোলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। দুস্থ মানুষকে আর্থিক সাহায্য, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি-বীজ বিতরণ, সোলার প্যানেল বিতরণ, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক মাশরাফির আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহে এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। স্থানীয় মাশরাফিভক্তরা, নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন এবং সাধারণ মানুষ শহরে আনন্দ মিছিল বের করেন। মাশরাফির মনোনয়নপত্র কেনায় নড়াইল পৌর, উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মাশরাফি নির্বাচিত হলে অবহেলিত নড়াইলের সার্বিক উন্নয়ন হবে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের লোকজন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটারকে রাজনীতিতে স্বাগত জানিয়েছেন।
এর আগেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে খেলোয়াড়দের যোগদান হয়েছে। কিন্তু তারা রাজনীতিতে এসেছেন অবসর গ্রহণের পর। অথচ মাশরাফি যখন রাজনীতিতে এলেন তখন তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক। স্বাভাবিকভাবেই আলোচনা একটু বেশিই।

শুধু মাশরাফি নয়, রাজনীতির মাঠে সরব হয়েছেন দেশি-বিদেশি অনেক খেলোয়াড়। এদের মধ্যে- ইমরান খান, মনসুর আলি খান পতৌদি, নভজোৎ সিং সিধু, বিনোদ কাম্বলি, মহম্মদ আজহারউদ্দিন, রোমারিও, বেবেতো, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনৎ জয়সুরিয়া, গ্যারি কাসপারভ, ভারতের অলিম্পিকে রূপা জয়ী রাজ্যবর্ধন রাঠোর, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ব্রিটিশ তারকা সেবাস্তিয়ান কো, আমেরিকার বাস্কেটবল তারকা বিল ব্র্যাডলিরা খেলার পাশাপাশি রাজনীতির মাঠ গরম করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতিতে খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম নয়। আরিফ খান জয়, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, আব্দুস সালাম মুর্শেদী ছাড়াও বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে রয়েছেন- এককালের সাড়া জাগানো ফুটবলার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, খুরশিদ আলম বাবুল, আমিনুল হক, সাইদুর রহমান প্যাটেল, বাদল রায়, একরামুল করিম চৌধুরী, কায়সার হামিদ, সাবেক অ্যাথলেট মাহবুব আরা বেগম গিনি।

কিন্তু মাশরাফির রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিশেষ করে সাধারণ ভক্তদের মাঝে। বিরোধী শিবির বিএনপি এবং জামাতপন্থীদের সোশ্যালমিডিয়া গ্রুপগুলোতে তাকে নিয়ে চলছে সমালোচনা।
কেউ লিখেছেন- ‘নেতা যদি হতেই চাও ইমরান খানের মত আলাদা দল গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হও, আমরা আছি তোমার সঙ্গে।’

অন্য একজন লিখেছেন- ‘আমি চাই না মাশরাফি বুড়ো বয়সে জেলে যাক, আমি চাই না দেশের সবচেয়ে বড় সুপারস্টার, ক্লিন ইমেজের মানুষটির দিকে আঙুল তাক করে কেউ কটু কথা বলুক!’

আবার কেউ লিখেছেন- ‘দেশের রাজনীতি তোমার মতো ব্যক্তির জন্য নয় ‘বস’। প্লিজ ফিরে এসো ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে।’
যদিও এগুলো সব মানুষের আবেগের কথা। বিপুল সংখ্যক মানুষ সমালোচনা করলেও মাশরাফির সিদ্ধান্তের সমর্থন দেয়ার মানুষও কিন্তু কম না। অনেকেই মাশরাফির রাজনীতি যোগ দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

এদিকে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শেষে অনেকটা স্বস্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টে জয় পেয়ে সিরিজ ড্র করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। যে কারণে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজে অনেকটা মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ দল।

ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ান ডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার খেলার সম্ভাবনা কম। সামনেই জাতীয় নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু। এর মধ্যে যদি সময় করতে পারে তাহলে খেলবে, না হলে না। তবে সে বিশ্বকাপে খেলবে।

মাশরাফির রাজনীতিতে আসা নিয়ে বিসিবি সভাপতির বক্তব্য, মাশরাফি হয়ত বিশ্বকাপের পরই অবসরে যাবে, ফলে এবার রাজনীতির মাঠে বেশী সময় দিতে পারবে।

কিন্তু যে মাঠের জাদুকর এতো দিন মানুষে হৃদয়ে বিশেষ স্থানে অবস্থান করছিলেন তিনি রাজনীতির মাঠে কতটা সফল হতে পারবেন তা এখন সময়ের ব্যাপার।

[উল্লেখ্য, নড়াইল-২ (লোহাগড়া-নড়াইল সদরের একাংশ) আসনে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে হারাতে আওয়ামী লীগের ১৬ নেতা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় ১৬ নেতার মধ্যে দলের জেলা সভাপতি–সম্পাদক থেকে শুরু করে অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারাও আছেন।
তারা হলেন- সহসভাপতি সৈয়দ আইয়ুব আলী এবং এসএম আসিফুর রহমান, সদস্য এসকে আবু বাকের, মো. হাসানুজ্জামান ও মো. রাশিদুল বাশার, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ হাসান ইকবাল, যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শারমিন সুলতানা, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সদস্য শেখ মো. তরিকুল ইসলাম, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মুন্সী কামরুজ্জামান, ব্যবসায়ী বাসুদেব ব্যানার্জি, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।]
এসএ/

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি