৮ উইকেটের হার বাংলাদেশের
প্রকাশিত : ১৪:৫৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ১৬:২০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ওপেনার মার্টিন গাপটিলের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করলো স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগারদের। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৪৮ দশমিক ৫ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে গাপটিলের অপরাজিত ১১৭ রানের সুবাদে ৩৩ বল বাকি রেখেই ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
নেপিয়ারে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বল হাতে পেয়েই বাংলাদেশের টপ-অর্ডারকে চাপে ফেলে দেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনিং পেস বোলার ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট। ৪২ রানের মধ্যে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল-লিটন দাস, তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার ও চার নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিমকে বিদায় দেন হেনরি ও বোল্ট।
তামিম-মুশফিক নামের পাশে ৫ রান রেখে বোল্টের শিকার হন। লিটন ১ ও সৌম্য ৩০ রান করে হেনরির বলে আউট হন। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় দারুনভাবে নিজের ইনিংসের শুরু করেছিলেন সৌম্য। কিন্তু ভালো শুরুর পরও দ্রুত থেমে যেতে হয় তাকে।
এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাব্বির রহমান ১৩ রান করে ফিরে গেলে ১শ’ রানের আগেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মোহাম্মদ মিথুন। রিয়াদের সাথে ২৯ ও সাব্বিরের সাথে ২৩ রানের জুটি গড়েন মিথুন।
আট নম্বরে নামা মেহেদি হাসান মিরাজও ভালো সঙ্গ দিচ্ছিলেন মিথুনকে। কিন্তু মিথুনের সাথে বেশি দূর যেতে পারেননি মিরাজ। জুটিতে মাত্র ৩৭ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে ২৭ বলে ২৬ রানই ছিলো মিরাজের। সাব্বিরের পর মিরাজকেও বিদায় দেন নিউজিল্যান্ডের স্পিনার মিচেল স্যান্টনার।
দলীয় ১৩১ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ ফিরে গেলে দেড়শ রানের নীচে গুটিয়ে যাবার শংকায় পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেষ্টা করেন মিথুন ও নয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
উপরের সারির ব্যাটসম্যান যা করতে পারেননি মিথুন-সাইফউদ্দিন একটি শক্তপোক্ত জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তাদের দুর্দান্ত জুটিতে ২শ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের সংগ্রহ। ৪৪ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২০৯ রানের পৌঁছে যায় টাইগাররা। ততক্ষণে উইকেটে সেটও হয়ে যান মিথুন ও সাইফউদ্দিন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৮৪ বলে ৫৮ রানে দাড়িয়ে ছিলেন মিথুন। সাইফউদ্দিনের রান ছিলো ৫৪ বলে ৩৬। ফলে শেষ ছয় ওভারে ভালো রান তুলে নিয়ে আড়াইশতে নিজেদের স্কোর দেখার অপেক্ষায় ছিলো বাংলাদেশ।
কিন্তু ৪৫তম ওভারের পঞ্চম বলে সাইফউদ্দিনকে বিদায় দেন নিউজিল্যান্ডের স্পিনার স্যান্টনার। ৩টি চারে ৫৮ বলে ৪১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন সাইফ। মিথুনের সাথে অষ্টম উইকেটে ৯৫ বলে ৮৪ রান যোগ করেন সাইফ। এরমধ্যে মিথুন ৩৭ বলে ৩৩ ও সাইফ ৫৮ বলে ৪১ রান করেন।
দলীয় ২১৫ রানে সাইফের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি মিথুন। ইনিংসের ৭ বল বাকী থাকতে ২৩২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। পাঁচ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে ৫টি চারে ৯০ বলে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন মিথুন। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ৯ রানে অপরাজিত থাকলেও মুস্তাফিজুর রহমান শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে শুন্য রান আউট হন। তার আউটেই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বোল্ট-স্যান্টনার ৩টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ২৩৩ রানের টার্গেটে উড়ন্ত সূচনাই করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশে বোলারদের বিপক্ষে সর্তকই ছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকোলস। প্রথম পাওয়ার প্লে’তে বিনা উইকেটে ৪২ রান যোগ করেন তারা। তবে দলের স্কোর শতরানে পৌছে দিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাদের। ২১তম ওভারেই গাপটিল-নিকোলসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় শতরানে পৌঁছে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ।
অবশ্য দলীয় ৮৫ রানেই বিচ্ছিন্ন হতে পারতেন গাপটিল-নিকোলস। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশের স্পিনার মিরাজের বলে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান নিকোলস। জীবন পেয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পরও ঐ মিরাজের ডেলিভারিতেই বোল্ড হন নিকোলস। ৫টি চারে ৮০ বলে ৫৩ রান করেন তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে গাপটিলের সাথে ১৩৫ বলে ১০৩ রান যোগ করেন নিকোলস।
এরপর উইকেটে গিয়ে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। বাংলাদেশের অকেশনাল স্পিনার মাহমুদুল্লাহ’র শিকার হবার আগে ১১ রান করেন তিনি। রিভিউ নিয়ে কিউই অধিনায়ককে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ।
দলীয় ১৩৭ রানে উইলিয়ামসনকে তুলে নিয়ে ম্যাচ ফেরার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু সেটি হতে দেননি গাপটিল ও রস টেইলর। তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি গড়ে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন তারা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৫তম সেঞ্চুরির তুলে ১১৭ রানে অপরাজিত থাকেন গাপটিল। তার ইনিংসে ৮টি চার ও ৪টি ছক্কা ছিলো। অপরপ্রান্তে ৬টি বাউন্ডারিতে ৪৯ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন টেইলর। বাংলাদেশের মিরাজ-মাহমুদুল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের গাপটিল।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক লাথাম ব বোল্ট ৫
লিটন দাস বোল্ড ব হেনরি ১
সৌম্য সরকার ক এন্ড ব হেনরি ৩০
মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব বোল্ট ৫
মোহাম্মদ মিথুন বোল্ড ব ফার্গুসন ৬২
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ক টেইলর ব ফার্গুসন ১৩
সাব্বির রহমান স্টাম্প লাথাম ব স্যান্টনার ১৩
মেহেদি হাসান মিরাজ ক নিশাম ব স্যান্টনার ২৬
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক গাপটিল ব স্যান্টনার ৪১
মাশরাফি বিন মর্তুজা অপরাজিত ৯
মুস্তাফিজুর রহমান বোল্ড ব বোল্ট ০
অতিরিক্ত (লে বা-৫, নো-১, ও-১৬, পে-৫) ২৭
মোট (অলআউ, ৪৮.৫ ওভার) ২৩২
উইকেট পতন : ১/৫ (তামিম), ২/১৯ (লিটন), ৩/৪২ (মুশফিকুর), ৪/৪২ (সৌম্য), ৫/৭১ (মাহমুদুল্লাহ), ৬/৯৪ (সাব্বির), ৭/১৩১ (মিরাজ), ৮/২১৫ (সাইফউদ্দিন), ৯/২২৯ (মিথুন), ১০/২৩২ (মুস্তাফিজুর)।
নিউজিল্যান্ড বোলিং :
হেনরি : ৯-১-৪৮-২,
বোল্ট : ৯.৫-০-৪০-৩ (ও-১, নো-১),
গ্র্যান্ডহোম : ৫-০-১৯-০,
ফার্গুসন : ১০-১-৪৪-২ (ও-৬),
স্যান্টনার : ৮-০-৪৫-৩ (ও-১),
নিশাম : ৭-০-২৬-০ (ও-৪)।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস :
মার্টিন গাপটিল অপরাজিত ১১৭
হেনরি নিকোলস বোল্ড ব মিরাজ ৫৩
কেন উইলিয়ামসন এলবিডব্লু ব মাহমুদুল্লাহ ১১
রস টেইলর অপরাজিত ৪৫
অতিরিক্ত (লে বা-৩, ও-৪) ৭
মোট (৪৪.৩ ওভার, ২ উইকেট) ২৩৩
উইকেট পতন : ১/১০৩ (নিকোলস), ২/১৩৭ (উইলিয়ামসন)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মাশরাফি : ৮.৩-০-৩৩০ (ও-১),
সাইফউদ্দিন : ৭-০-৪৩-০ (ও-২),
মুস্তাফিজুর : ৮-০-৩৬-০,
মিরাজ : ৮-১-৪২-১,
সাব্বির : ৭-০-৪১-০,
মাহমুদুল্লাহ : ৫-০-২৭-১,
সৌম্য : ১-০-৮-০ (ও-১।
ফল : নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মার্টিন গাপটিল (নিউজিল্যান্ড)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল নিউজিল্যান্ড।
এসএ/