বিশ্বকাপের আগেই খেলোয়াড়রা ফর্মে ফিরবেন?
প্রকাশিত : ১২:০০, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১২:০২, ১৩ এপ্রিল ২০১৯
বিশ্বকাপ ক্রিকেটকে সামনে রেখে এবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে (ডিপিএল) ধরা হচ্ছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের প্রস্তুতির দারুণ এক মঞ্চ। ডিপিএলের প্রথম পর্ব ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা কেমন খেললেন এই পর্বে? আসলে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স বলার মতো নয় বলেই কপালের চিন্তার ভাঁজ নিয়ে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের দল গড়তে হচ্ছে নির্বাচকদের।
বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনাপ্রধান আকরাম খান বলেছেন, কিছু খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা চিন্তিত।
এখানে কিছু খেলোয়াড় বলতে জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড়, যাদের পারফরম্যান্স ডিপিএলে মোটেও ভালো নয় বলেই আকরামের এই দুশ্চিন্তা।
আসলে নিউজিল্যান্ড সফর, বিশ্বকাপের আগে হেড কোচের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী পাওয়া বিশ্রাম তত্ত্ব মিলে প্রিমিয়ার লিগে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ পুরোপুরি ছিল না। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলছেনই না প্রিমিয়ার লিগে।
আর তাদের বাইরে যে সব তারকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন, তারা কেউই মাঠের ক্রিকেটে দাপট দেখাতে পারেননি। আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখা যায়নি ব্যাটসম্যান-বোলারদের মধ্যে। তাই লিগের প্রথম পর্ব শেষে বোলিং, ব্যাটিংয়ে পারফরমারদের তালিকার সেরা পাঁচে নেই জাতীয় দলের কোনও ক্রিকেটার।
শুধু তাই নয়, ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অনেকে আবার রান খরায় পড়ে গেছেন। জাতীয় দলের কোনও ব্যাটসম্যান এবার প্রিমিয়ার লিগে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য স্কোয়াডের তালিকা ধরলে সেঞ্চুরির দেখা মিলছে। গত বুধবার বিকেএসপিতে শেখ জামালের বিরুদ্ধে আবাহনীর হয়ে অপরাজিত ১০১ রান করেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। যদিও ম্যাচটা হেরেছিল আবাহনী। সেঞ্চুরি করেছেন ইয়াসির আলী রাব্বিও।
তাই প্রিমিয়ার লিগে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের এই পারফরম্যান্স চিন্তায় ফেলেছে নির্বাচকদের। বিশ্বকাপের স্কোয়াডটা চূড়ান্ত করতে পারছেন না তারা। ২-১টা স্থান নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপ দলের ভাবনায় থাকা মোসাদ্দেকই সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। আবাহনীর অধিনায়ক ১১ ম্যাচে ৪২৮ রান করেছেন। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তরুণ ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী রাব্বি ব্রাদার্সের হয়ে ১১ ম্যাচে ৪২৩ রান করেন। কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সম্ভাবনার পাল্লায় ঠিকই আছেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস। গাজী ক্রিকেটারের হয়ে ১০ ম্যাচে ২৪৪ রান করেছেন। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন আবাহনীর হয়ে ৫ ম্যাচে ১২৮ রান করেন।
অন্যদিকে, মোহামেডানের হয়ে ওপেনার লিটন দাস ৩ ম্যাচে ১৪৭ রান করেন। সবচেয়ে বেশি রান খরায় আছেন আবাহনীর সৌম্য সরকার। ৮ ম্যাচে ১৭৮ রান করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। একই ক্লাবের হয়ে সাব্বির রহমান ১০ ম্যাচে ১৯৪ রান করেছেন। এছাড়া সাইফউদ্দিন ৮ ম্যাচে ১৮২ রান, মেহেদী হাসান মিরাজ ৪ ম্যাচে ৫৮ রান করেন।
তবে বোলিংয়ে কিছুটা আশা জাগানিয়া চিত্র রয়েছে। সাইফউদ্দিন ৮ ম্যাচে ১২ উইকেট, শফিউল ইসলাম ৮ ম্যাচে ১২ উইকেট, মাশরাফি ৯ ম্যাচে ১০ উইকেট, রুবেল ৬ ম্যাচে ৭ উইকেট, সৌম্য-সাব্বির ৭ উইকেট করে, মিরাজ ৩ উইকেট নিয়েছেন। আর মুস্তাফিজ এক ম্যাচে তিন উইকেট ও তাসকিন এক ম্যাচ খেলে উইকেটশূন্য রয়েছেন।
সব মিলিয়ে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ভাবাচ্ছে নির্বাচকদেরও। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের আগে কজন খেলোয়াড় ‘ভালো অবস্থায়’ আছেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আরেকটু আশ্বস্ত হতে সুপার লিগের এক-দুইটি ম্যাচ দেখতে চাচ্ছেন নির্বাচকেরা।
এ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছিলেন, ফর্ম অবশ্যই চিন্তার বিষয়। প্লেয়ার যখনই যেই মঞ্চেই খেলতে যাক না কেন, বিশেষ করে বিশ্বকাপে যখন খেলতে যাবে, সব সময় কিন্তু একটা আত্মবিশ্বাসের মধ্যে থাকতে হবে। ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার, সঙ্গে যদি রান বা উইকেট থাকে, তাহলে কিন্তু প্লেয়ার ভালো পজিশনে থাকে।
যাইহোক, প্রধান নির্বাচকের আশা বিশ্বকাপের আগেই খেলোয়াড়রা ফর্মে ফিরবেন। কারণ ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো না খেললেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঠিকই খেলে দেবেন- অতীতে অনেকবার এ আশা নিয়ে দল গড়েছেন নির্বাচকেরা।
নান্নু বলেন, ‘সামনে আয়ারল্যান্ডে সিরিজ আছে, সুপার লিগে অনেকগুলো ম্যাচ আছে। এর মাঝে আমরা যাদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি তারা অবশ্যই ফর্মে ফিরে আসবে।’
একে//