বিশ্বকাপ নিয়ে মুশফিকের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:০৩, ৩১ মে ২০১৯
দলের অনুশীলনে সবার আগে আসেন আর যান সবার পরে। মুশফিকুর রহিমকে কেউ এক কথায় প্রকাশ করতে গেলে এভাবেই বলে থাকেন।
এমনিতেই ফিটনেস টেস্টে জাতীয় দলে তাকে হারানোর মতো নেই কেউই। তবে বিশ্বকাপ ঘিরে সেই ফিট মুশফিকই, নিজেকে যেন নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। বিশ্বকাপ মিশনে নামার আগে বিবিসির সঙ্গে কথা বলেছেন টাইগার মুশফিক।
মুশফিক বলেন, বিশ্বকাপ সামনে রেখে একটু আলাদা করেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। হালকা ইনজুরি ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর সময়টা কাজে লাগিয়েছি।
সেই ২০০৫ সালে ১৭ পেরুনো যুবা মুশফিকুর রহিম জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলেন ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে। এরপর প্রায় ১৪ বছর পেরুতে চললো। নিজের চতুর্থ বিশ্বকাপের সামনে দাঁড়িয়ে ৩২ ছুঁতে যাওয়া পরিণত এক ক্রিকেটার।
‘ভালো-মন্দ মিলিয়ে কেটেছে, আর এটাই ক্রিকেট। তবে এবার আমি মনে করি এই ফরম্যাটে নকআউট পর্বে যাওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে আমাদের। আর নকআউট পর্বে গেলে যে কোনও কিছুই হতে পারে। কে কি ভাবছে জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক বড় চিন্তা করছি এই বিশ্বকাপ নিয়ে।’
তবে শুধু মুশফিক নন, আপামর ক্রিকেট ভক্তরাও যে এবার বিশ্বকাপ ঘিরে বড় স্বপ্ন দেখছেন সেটা কিন্তু পাঁচজনের উপর বাজি ধরেই। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক ও রিয়াদ। অনেকেই আদর করে তাদের পঞ্চপান্ডব ডাকেন। তা মহাভারতের চরিত্রের মতোই বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন তারা। পাঁচজনই রয়েছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।
আর গত ক’বছরে জেতা ম্যাচগুলোর প্রতিটির সঙ্গে কোনও না কোনোভাবে জড়িয়ে আছে এই ৫ জনের নাম।
মুশফিকুর রহিমের কথাই ধরা যাক। ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩৪ দশমিক ৯৫ সেখানে গত দু’বছরে তার ব্যাটিং গড় ৫২ দশমিক ৬১। এ সময়ে ৩৪ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিতে এক হাজার ৩৬৮ রান করেছেন।
আর কেন তিনি দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছেন সেটা বোঝা যায় গত ২৪ মাসে রানচেজের সময় তার ব্যাটিং গড়ের দিকে তাকালে, ৬১ দশমিক ৪৪ নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। তবে মুশফিক অবশ্য দলগত পারফরম্যান্সেই বরাবর বিশ্বাসী।
‘এটা একটা ব্লেসিং যে আমরা ৪-৫ জন অনেক বছর ধরে একসঙ্গে খেলছি। তবে এ সময়ে তরুণরাও কিন্তু অনেক ইমপ্রুভ করেছে। তারা যদি কন্ট্রিবিউট রাখতে পারে, তাহলে অন দ্য ডে আমরা যে কোনও টিমকে হারাতে পারি।’
কিছু অতীত পিছু ছাড়ে না কখনোই। কিছু স্মৃতি যায় না ভোলা কিছুতেই। হলোই বা টি-টোয়েন্টি, মুশফিক কি ভুলতে পারবেন ভারতের বিপক্ষে ২০১৬-এর বেঙ্গালুরু দুঃখ? বরং তীরে এসে তরী ডোবার এই ভূত ফিরে এসেছে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময়। এই ফিনিশিংয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই মুশফিক খানিকটা রক্ষণাত্মক।
‘আমি এখন মনে করি আগের চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচিউরড। তাছাড়া এরপর কিন্তু শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমি ম্যাচ শেষ করে এসেছি। আসলে এটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি আমি।’
আর তার ব্যাটিং অর্ডার যেহেতু পাঁচে থিতু হয়েছে, বিশ্বকাপেও তো এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এবার আক্রমণাত্মক মুশি।
‘শেষ ৪-৫ বছর আমি যেভাবে খেলছি, বিশেষ করে শুধু রান করা নয়, স্ট্রাইক রোটেট করা, ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলা, এসবে যথেষ্ট উন্নতি করেছি। তবে উন্নতির তো শেষ নেই। আমি শুধু চাইবো বিশ্বকাপে ও রকম সিচুয়েশন আসে তাহলে আমিই যেন সেই ব্যক্তিটা হই যে কি-না ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত বের করে নিয়ে আসতে পারি।’
মুশফিকের জেদটা টের পাচ্ছেন তো? ইংল্যান্ডেই জাতীয় দলে অভিষেক। সেখানে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিটাও দারুণ কেটেছে। ৪ ম্যাচে ২ ফিফটিতে ১৬৩ রান। তারপরও আক্ষেপ মুশির কণ্ঠে।
বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের (৫৪০ রান) পরই ২য় সর্বোচ্চ ৫১০ রান তার। পুরো ক্যারিয়ারে ৬টি শতক থাকলেও বিশ্বকাপের মঞ্চেই যে এখনও ছোঁয়া হয়ে উঠেনি তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার।
‘সেখানে আসলে টেস্টে খুব ভালো করতে পারিনি। তবে এবার ইচ্ছে আছে ভালো কিছু করার। আর ইংল্যান্ডে এটাই আমার শেষ বিশ্বকাপ। চাইবো বিশেষ কিছু করতে।’
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের (২০৯) রেকর্ডটা নিজের কাছে রাখা মুশফিক জানিয়েছেন ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার দুই ভূমিকাতেই নিজেকে দেখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। একইসঙ্গে জোর দিয়ে বললেন, ‘এটাই রাইট সময় যে বাংলাদেশকে ভালো কিছু দিতে পারি।’
সূত্র: বিবিসি