বিশ্বকাপে জ্বলে উঠার সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের
প্রকাশিত : ১৬:১৩, ৩১ মে ২০১৯
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ জুন ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। আর সম্প্রতি সব পারফরম্যান্স মিলিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ছিলো বাংলাদেশের জন্য বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। সেই প্রস্তুতিটা কিন্তু দারুণভাবেই শেষ করেছে মাশরাফিরা। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বহুজাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে তাই নিজেদেরও তারা সেরা প্রমাণ করেছে।
এদিক দিয়ে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে জ্বলে উঠার সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। চারবার বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া অভিজ্ঞ টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও দলকে নিয়ে আশাবাদী। মাশরাফি বলেন, খুব সম্ভবত আমাদের এই দলটি এখন পর্যন্ত সেরা দল। আমাদের দলের ভারসাম্য দারুণ। আমাদের কিছু তরুণ ভালো খেলোয়াড় রয়েছে। আমরা তাদের নিয়ে অনেক আশাবাদী।
নড়াই এক্সপ্রেস বলেন, আমাদের দলে সিনিয়র-জুনিয়র খেলোয়াড়ের মিশ্রণ রয়েছে। তারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলছে। পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। কদিন আগেই আমরা আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতেছি। তাই বিশ্বকাপে আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী।
নিজেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কথাও তুলে ধরেন টাইগারদের অধিনায়ক। গত চার বছরে বাংলাদেশ আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি উন্নতি করেছে বলেও জানান তিনি।
বল ও ব্যাট হাতে খেলোয়াড়দের দারুণ পারফরম্যান্স আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে ত্রিদেশীয় সিরিজ। তাই বিশ্বকাপের আগে নিজেদের এমন সাফল্য স্বস্তি দিচ্ছে বাংলাদেশকে। আর এই বিশ্বকাপে নিজেদের সেরাটা দিতে পারলেই বাংলাদেশের অর্জন চলে যাবে অনন্য এক উচ্চতায়। আর আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এমন জয়ের কারণে পুরো বিশ্বক্রিকেটও তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের দিকে।
বাংলাদেশ দল নিয়ে অনকেই তো তাদের আশার কথা ইতোমধ্যে বলেই দিয়েছেন, ভারতের সাবেক খেলোয়াড় ও ক্রিকেট বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া তো মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলবে। তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ভিডিও বিশ্লেষণে বাংলাদেশ দলের পাল্টে যাওয়ার পটভূমি টেনে বলেন, ‘২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও নকআউট পর্বে খেলেছে। আর এশিয়া কাপে তো ফাইনালেই খেলেছে। এই দলকে হালকাভাবে নিলে মস্ত ভুল হবে। বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলে, এবারও ভালো খেলবে।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে চোপড়ার উক্তি, ‘বিশ্বকাপে ৫০ ওভারের টুর্নামেন্টে শুরুতে ৯ ম্যাচ পাবে বাংলাদেশ। এ বাধা টপকে নকআউট পর্বে উঠবে দলটি।’
অন্যদিকে ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার অনিল কুম্বলের কথায়ও উঠে এসেছে এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো করার কথা। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন তিনি। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জয় বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে বলে মনে করেন ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে আর হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কয়েক বছর ধরে তারা ধারাবাহিকভাবে খুবই ভালো করছে। মাশরাফি খুব ভালো একজন নেতা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারুণ খেলছে। তিনি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আলাদাভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের একটা বড় সমস্যা, নকআউট ম্যাচগুলোতে তারা ভেঙে পড়ে। এটাই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ হবে।’
ধারাভাষ্য কক্ষে কিংবা বিশেষজ্ঞ আলোচনায় বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করে ভক্ত-সমর্থকদের কাছে চোখের বিষেই পরিণত হয়েছেন রমিজ রাজা। সেই রমিজ বিশ্বকাপ আলোচনার অংশ হিসেবে সব দলের ব্যাপারেই নিজের বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন রমিজ। বাংলাদেশের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এবার এক বাক্যে স্বীকার করে নেন সাম্প্রতিক ফর্ম ও পাকিস্তানের চেয়ে বিশ্বকাপে বাংলাদেশই এগিয়ে থাকবে।
এসময় তিনি মনে করিয়ে দেন বিশ্বকাপে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশই। ক্রিকেটের বিশ্ব মঞ্চে দুই দলের একমাত্র সাক্ষাৎ ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে। সেবার নর্দাম্পটনে খালেদ মাহমুদ সুজনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পাকিস্তানিদের ৬২ রানের ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
সে ম্যাচের কথা মনে করিয়ে রমিজ বলেন, ‘বিশ্বকাপের মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশই পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এ দুই দল বিশ্বকাপে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল, ১৯৯৯ সালে। সে ম্যাচটি অনেক বিখ্যাত কারণ বাংলাদেশ জিতেছিল এবং পাকিস্তানের সে দলটিও ছিলো অনেক শক্তিশালী।’
এসময় রমিজ এও বলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও দুর্দান্ত। গত বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে তার দেশকে হোয়াইটওয়াশ করাসহ বেশ ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। তাই মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের সামর্থ্য সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই রমিজের।
তিনি বলেন, ‘সবশেষ এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি নিজেদের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশও করেছে। তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলে। এ কারণে পাকিস্তান দলকে সতর্ক থাকতে হবে। কাগজে কলমে হয়তো বাংলাদেশকে শক্তিশালী ধরা হবে না, তবে তারা নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে। যে কোনো কিছু করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে।’
দেশের সাবেক ক্রিকেটারাও বাংলাদেশের দল নিয়ে আশাবাদী। তারাও জানালেন নিজেদের আশার কথা। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার আকরাম খাঁন বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। যদিও দলের দিক থেকে দেখলে এই বিশ্বকাপের ফেভারিট ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা। পারফরম্যান্স দেখলে আমাদের ওপরে অনেক দল আছে। এর পরও আশা করি বাংলাদেশ ভালো খেলার চ্যালেঞ্জটা নেবে। সবচেয়ে বড় যেটা, বাংলাদেশ দলকে সেরাদের তালিকায় রাখছে না কেউ। সবাই বলছে ভালো করতে পারে, সম্ভাবনা আছে। এই কারণে প্রত্যাশাও কম। প্রত্যাশা বেশি থাকলে খেলোয়াড়রা চাপটা নিতে পারে না। এবার আমাদের জন্য অনেক প্লাস পয়েন্ট যে, কেউ আমাদের ফেভারিটের তালিকায় রাখেনি। যদিও আমরা অনেক কিছু করতে পারি, এই ক্ষমতা বাংলাদেশ দলের আছে।
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার রকিবুল হাসান বলেন, যেহেতু সীমিত ওভারের ক্রিকেট, বাংলাদেশের প্রত্যেক ব্যাটসম্যান ও বোলার যদি তাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে, সুস্থ থেকে, ইনজুরির বাইরে থেকে ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারলে বড় কিছু হবে। দুটো ম্যাচ ভালো খেললাম, এরপর ছন্নছাড়া অবস্থা, এটা হলে চলবে না। ধারাবাহিকতাটা গুরুত্বপূর্ণ এখানে। এই ধারাবাহিকতা যদি থাকে ব্যাটিং-বোলিংয়ে, তাহলে বাংলাদেশ কিন্তু যে কোনো কিছু করতে পারবে। সেমিফাইনাল খেলার যে স্বপ্ন নিয়ে ইংল্যান্ডে গেছে তারা, সেদিকে ধাবিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এনএম