ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আজ লড়বে বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ০০:০৭, ৮ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৩৪, ৮ জুন ২০১৯

বাংলাদেশের জয় মানে এখন আর কোনো অঘটন নয়, সে কথা এরই মধ্যে জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। দাপট দেখিয়ে ২১ রানে জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেটে হারলেও লড়াই করে হেরেছে টাইগাররা। স্কোরবোর্ডে কম রান যোগ করেও কিউইদের যথারীতি কাঁপিয়ে দিয়েছিল সে ম্যাচে। লড়াকু মানসিকতায় উজ্জীবিত টাইগারদের এবারের মিশন ইংল্যান্ড। তাই তো মাশরাফির সোজা সাপটা উচ্চারণ, আগের বিশ্বকাপে ইংলিশদের হারিয়েছি, এবারও হারাবো।

শনিবার (০৮ জুন) বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে দুই দলের এটি তৃতীয় ম্যাচ। কার্ডিফের ১৫ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সোফিয়া গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যাচটির আগে বাংলাদেশি দর্শকদের হৈচৈ করা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন প্লাঙ্কেট।

এর আগে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ। হেরেছে সেই ২০০৭ সালে। আজ সেই কার্ডিফে জয়ের হ্যাটট্রিকই লক্ষ্য মাশরাফি-সাকিবদের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সুখকর স্মৃতিগুলোর একটি। আজ কার্ডিফেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেই ইংলিশরা। আজকের এ খেলায় বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা স্বীকার করে নিচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেটের রথী-মহরথীরাও।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ জয়ের পর, বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে ক্রিকেট লিজেন্ডরা। বলছেন, যোগ্যতর দল হিসেবেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। বাংলাদেশের বিজয়গাঁথা প্রচার করছে আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমও। প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপে আরও চমক দেখানোর ইঙ্গিত দিলো টাইগাররা।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হওয়ার আগে, টাইগারদের নিয়ে টুইট করেছিলেন সাবেক কিউই অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। অনুমান নির্ভর সে টুইটে ম্যাককালাম মন্তব্য করেন, টুর্নামেন্টে মাত্র ১টি ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। এবং সে জয় আসবে লংকানদের বিপক্ষে।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে টাইগারদের দোর্দন্ড প্রতাপে জয়ের পর আবারো টুইট করেন এই সাবেক ক্রিকেটার। তার অনুমানকে ভুল প্রমাণ করে দেয়ার জন্য টাইগার টিমকে সাধুবাদ জানান তিনি।

সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন, বাংলাদেশকে এই বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স বলছেন। বাংলাদেশের ব্যাটিং এর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

বাংলাদেশের ব্যাটিং এর প্রশংসা করেছেন সাবেক লংকান ক্রিকেটার রাসেল আর্নল্ডও। এক সময়ের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান বিরেন্দর শেবাগ টুইটারে বলেন, বাংলাদেশ যোগ্যতম দল হিসেবেই জিতেছে।

বাংলাদেশের অনন্য জয়ের গৌরব ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। দেশ-বিদেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোতে ফলাও করে এসেছে মাশরাফী-সাকিবদের বিজয়গাঁথা।

অস্ট্রেলিয়া সিডনি মর্নিং হেরাল্ড, ইংল্যান্ডের দ্য গার্ডিয়ান কিংবা ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া সব পত্রিকাতেই বাংলাদেশের বিজয় উল্লাস। বাংলাদেশকে অপ্রতিরোধ্য বলছে আন্তজার্তিক গণমাধ্যমগুলো। সাউথ আফ্রিকা যন্ত্রণায় পুড়েছে টাইগার অ্যাটাকে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ‘হ্যাটট্রিক’ হবে বাংলাদেশের:
স্টিভ রোডস জানিয়েছেন, আপাদমস্তক ইংলিশ হলেও বাংলাদেশের হয়ে এবার হারাতে চাইবেন ইংল্যান্ডকে। মাশরাফিদের জন্য কাজটা হয়তো কিছুটা সহজ হয়ে যাচ্ছে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের রোডসের চেয়ে ভালো আর কে-ই বা চিনবেন! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের রেকর্ডটাও ভালো। টানা দুটি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানোর মধুর স্মৃতি সঙ্গে নিয়েই কাল কার্ডিফে নামবে দল। বাংলাদেশ কী পারবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’ করতে?
বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয়ের রেকর্ডটা সেই ২০০৭ সালের। বার্বাডোজের ব্রিজটাউনে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৪ উইকেটে। ১৪৩ রানে অলআউট হওয়া সে ম্যাচে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট ফেলে দেওয়াটাও কম কৃতিত্বের ছিল না। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইংলিশদের সুখস্মৃতি বলতে সেটিই।

এরপরের ইতিহাস সবটাই বাংলাদেশের পক্ষে। ২০১১ বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে শফিউল-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং স্ট্রাউসদের তো বটেই, পুরো ক্রিকেটবিশ্বকেই ভড়কে দিয়েছিল । ৪০তম ওভারের চতুর্থ বলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৮ উইকেটে ১৬৯। ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ তখনো জয় থেকে ৫৭ রান দূরে। ওই অবস্থায় বাংলাদেশের নিশ্চিত হারই দেখছিলেন সবাই। এমনকি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম খালি করে দর্শকেরাও বাড়ির পথ ধরেছিলেন। সে ম্যাচটিই বাংলাদেশ জিতেছিল শফিউলের দারুণ ব্যাটিংয়ে। ২০১৫ সালে অ্যাডিলেডে বাংলাদেশের কাছে হেরে তো বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা।

শনিবার কার্ডিফে এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ সেই ইংল্যান্ড। কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনের মাঠটিও বড় পয়া বাংলাদেশের জন্য। এই মাঠে আছে বাংলাদেশের দারুণ দুটি জয়ের স্মৃতি। প্রথমটি ২০০৫ সালে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়টি। দ্বিতীয়টি ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সাকিব-মাহমুদউল্লাহর সেই ২৪৪ রানের জুটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়। আরেকটি মজার তথ্য। কার্ডিফে দুটি ম্যাচই এসেছিল জুন মাসে। কাকতালীয় ব্যাপারগুলো কিন্তু খেলাধুলায় খুব আলোচিত হয়। কাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিও সেই জুন মাসেই।

টপ ফেবারিট তকমা নিয়েই এবার বিশ্বকাপে খেলছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। মরগানদের সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বরং শক্তিমত্তায় বাংলাদেশ ইংল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়েই। কিন্তু তবুও আশা ঘরবসতি। দক্ষিণ আফ্রিকাও তো বাংলাদেশের চেয়ে কত শক্তিশালী ছিল!

বাংলাদেশি সমর্থকদের নিয়ে ‘চিন্তিত’ ইংল্যান্ড: বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে স্টেডিয়ামে বসে গলা ফাটাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের সমর্থনে মাঠে লাল-সবুজ পতাকা ও বাঘ সেজে মাঠে হাজির ছিলেন তারা।

কেনিংটন ওভালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচেতো রস টেইলরের চক্ষু চড়কগাছ! ২৫ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে ২০ হাজারই ছিল টাইগারদের সমর্থক। যেন ঢাকায় বা চট্টগ্রামে খেলা হচ্ছে, এমনটাই মনে করেছিলেন টেইলর।

বাংলাদেশি সমর্থকদের নিয়ে এবার চিন্তায় পড়েছে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশি দর্শকদের উল্লাস ও চিৎকারকেও বড় প্রতিপক্ষ মনে করছেন ইংলিশরা। ম্যাচে বাংলাদেশের সমর্থকেদের উল্লাস-হৈচৈ তাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন ইংলিশ বোলার লিয়াম প্লাঙ্কেট।

ইংলিশ পেসার বলেন, পাকিস্তানিরা এসব করতে খুব পছন্দ করে। তাদের দর্শকরা খুব হৈচৈ করে। যখন তারা ম্যাচে থাকে তখন এসব বেশি করে। একইভাবে বাংলাদেশ, ভারতের দর্শকরাও হৈচৈ করার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ। আসলে তারা এভাবে ক্রিকেট উপভোগ করতে অভ্যস্ত।

তবে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা হৈচৈ এর মধ্যে খেলতে অভ্যস্তও মনে করেন প্লাঙ্কেট, কিন্তু আমরা একটি বড় প্রতিযোগিতায় খেলছি। আমাদের খেলোয়াড়রা প্রচুর দর্শকদের সামনে আইপিএল-বিগ ব্যাশ খেলে অভ্যস্ত। এটা তেমন ঝামেলার হবে না।

ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে কখনো হারেনি বাংলাদেশ। এই মাঠেই ২০০৫ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল টাইগাররা। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে হারিয়েছিল নিউজিল্যান্ডকে।

সোফিয়া গার্ডেন্সের লড়াইয়ের আগে ইতিহাসও স্বপ্ন দেখাচ্ছে মাশরাফি-সাকিবদের। গত দুই বিশ্বকাপে (২০১১ ও ২০১৫) ইংল্যান্ড জিততে পারেনি টাইগারদের বিপক্ষে। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়েই বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে বাংলাদেশ।

সেই স্মৃতি এখনো তরতাজা প্লাঙ্কেটের মনে, ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম যখন বাংলাদেশ আমাদের হারালো। অবশ্য বড় প্রতিযোগিতায় এমন ঘটতে পারে।

অবশ্য বাংলাদেশ নিয়ে প্রশংসাও ছিল তার কণ্ঠে, তাদের (বাংলাদেশ) স্কোয়াড় অত্যন্ত শক্তিশালী। তাদের প্রচুর খেলোয়াড় আর্ন্তজাতিক ম্যাচ ও বিপিএল খেলেছে। গত কয়েক বছর ধরে তারা নিজেদের নির্মাণ করেছে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি