টাইটানিকের বন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছবে তো বাংলাদেশ!
প্রকাশিত : ১৫:২২, ২৪ জুন ২০১৯
ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন বন্দর থেকেই ১৯১২ সালে আমেরিকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছিল টাইটানিক জাহাজ। কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই গভীর হিমশীতল আটলান্টিকে ডুবে যায় জাহাজটি, সলিল সমাধি হয় বেশির ভাগ যাত্রীর।
সেই সাউদাম্পটন থেকেই বাংলাদেশের আজ শুরু হচ্ছে এশিয়ার তিনটি দলকে হারানোর মিশন। সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে পরের তিন ম্যাচ জিততেই হবে মাশরাফিদের। সাউদাম্পটনে আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে টিকে থাকার লড়াই।
মাশরাফিরা কি পারবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে? নাকি সাউদাম্পটন বন্দর ছেড়ে যাওয়া টাইটানিকের মতো এই শহরের রোজ বোল স্টেডিয়ামে থমকে যাবে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন। এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজই। কারণ বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় শুরু হচ্ছে ম্যাচটি।
হ্যাম্পশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবকে মূলত ক্রিকেটের আঁতুড়ঘর বলেই খ্যাত। আগে শহরের মধ্যেই ছিল কাউন্টির মাঠ, এখন সেটা শহরের কিছুটা বাইরে রোজ বোলে। স্টেডিয়ামের সঙ্গেই লাগানো পাঁচতারকা হিল্টন হোটেল। হোটেল থেকেই ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোনও মাঠে নেই। এখানে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলতে নামছে। সাউদাম্পটনে জিতলেই কেবল বার্মিংহামে ভারতের বিপক্ষে ও লর্ডসে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের গুরুত্ব থাকবে। নয়তো ওই দুটি ম্যাচ কেবলই আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নেবে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই সেটা হতে দিতে চাইছে না।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে অবশ্য বাংলাদেশ এগিয়ে। ৭ ম্যাচ খেলে চারটি জিতেছে তারা। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। গত বছরের এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান জিতলেও সুপার ফোরের লড়াইয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া বিশ্বকাপের ইতিহাসে একবারই আফগানদের বিপক্ষে লড়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে ক্যানবেরার ওই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছিল ১০৩ রানে।
বিশ্বকাপে এই সাফল্য ধরে রাখতে দলগত পারফরম্যান্সের বিকল্প নেই মাশরাফিদের সামনে। তবে এই উইকেটকে ভালোভাবে বুঝতে না পারলে বিপদে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। দুই দিন আগে এখানেই ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। বোঝাই যাচ্ছে, রোজ বোলের এই উইকেটে স্পিনাররা ভালো সুবিধা পাবে। এই ধরনের উইকেটে ২৭০ রানকে নিরাপদ স্কোর বলা যায়।
যদিও মাশরাফি সরাসরি না বললেও তার কথাতে তেমনই ইঙ্গিত, ‘একই উইকেটে খেলা হবে। আমার ধারণা স্পিন কাজ করবে ভালোভাবে। অন্য উইকেটের মতো হয়তো তিনশ রান লাগবে না। তবে এতটুকু নিশ্চিত এখানে ব্যাটিং করা সহজ হবে না।’
অন্যদিকে আফগান অধিনায়কের কণ্ঠে বাংলাদেশের প্রতি সমীহই দেখা গেল, ‘আমরা এরই মধ্যে এই উইকেটে খেলেছি, কিন্তু ক্রিকেট খেলা নির্ভর করে বর্তমানের ওপর। আপনি কেমন খেলেন, কন্ডিশন কেমন; বিশেষ করে ইংলিশ কন্ডিশনে। সেদিন ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন, আমাদের জন্য ভালো ছিল, দুই দলের জন্যই। আমরা হেরেছি, কিন্তু ভালো কিছুও করেছি। বাংলাদেশের বিপক্ষে আরও বেশি চেষ্টা থাকবে।’
এদিকে আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে দুটি পরিবর্তন আসতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে না পারা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন ফিরতে পারেন। মোসাদ্দেকের ফেরার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও সাইফুদ্দিনের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। টসের আগে তার সবশেষ অবস্থা দেখেই তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
একাদশে পরিবর্তন আসুক কিংবা না আসুক আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষায় নামতে হচ্ছে সেটা নিশ্চিত। বিশেষ করে স্পিনত্রয়ী মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও মুজিব উর রহমানকে সাবলীলভাবে খেলতে না পারলে স্কোরবোর্ডে এর প্রভাব পড়বে। তাদের মোকাবেলায় সিনিয়র ক্রিকেটারদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে, নয়তো সাউদাম্পটনে শেষ হয়ে যাবে মাশরাফিদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন!
তবে ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা, সাউদাম্পটন বন্দর ছেড়ে যাওয়া টাইটানিকের মতো হারিয়ে যাবে না বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। সেমিফাইনালে ওঠার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছানোর মিশন এখান থেকে শুরু হবে জয় দিয়ে, এরপর না হয় ভারত-পাকিস্তান বধের পরিকল্পনা করা যাবে!