ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ইংল্যান্ড-ভারত পাতানো ম্যাচ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

প্রকাশিত : ১৪:৩৪, ১ জুলাই ২০১৯ | আপডেট: ১৫:০৮, ১ জুলাই ২০১৯

চলতি ২০১৯ বিশ্বকাপের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের কাছে অত্মসমর্পণ করেছে আসরের অন্যতম ফেভারিট দল ভারত। ৩০ জুনের এ ম্যাচে ইংলিশদের ৩৩৭ রান তাড়া করে ৩১ রানের হার আপাত দৃষ্টিতে খুব একটা আপত্তিকর না হলেও, লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ সমৃদ্ধ দলটি যেভাবে খেলেছে, তাতে অবাক ক্রিকেটমহল।

তাদের দাবি, ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই মনে হয়েছে, ভারত জয়ের জন্য খেলছে না। রোহিতের শতক, কোহলির অর্ধশতক আর হাতে পাঁচ উইকেট থাকার পরও মাত্র (!) ৩০৬ রানেই থেমে গেছে তাদের ইনিংস।

পাহাড় সমান রান না হলেও ৩৩৮ তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান তোলে ভারত, যা এবারের বিশ্বকাপেই সর্বনিম্ন। তবু শেষ ১১ ওভারে জয়ের জন্য ১১২ রান প্রয়োজন ছিল ধোনি-পান্ডিয়াদের। টি-২০র যুগে এ রান খুব কঠিন কিছু নয়। বিশেষ করে, যখন ক্রিজে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষভ পাণ্টের মতো হার্ডহিটার ব্যাটসম্যানরা।

কিন্তু শেষ দিকে ধোনি ও কেদার যাদবের ব্যাটিং দেখে অবাক ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। হাতে উইকেট থাকার পরও চার-ছক্কার চেষ্টা না করে এক-দুই রান নিয়ে সময় কাটিয়েছেন তারা। এসময় মনে হয়েছে, হারার আগেই যেন হেরে বসে আছে ভারত! তাদের এমন অদ্ভুত ব্যাটিংয়ে ক্ষেপেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। সমালোচনা করেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার, হার্ষা ভোগলের মতো ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।

যদিও ভারতের এই পরাজয়ে লাভ হয়েছে কেবল ইংল্যান্ডেরই। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ হলো উপমহাদেশের তিন দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের তো সেমির স্বপ্ন শেষই হয়ে গেছে বলা যায়।

কিন্তু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের সেমিতে ওঠার যে স্বপ্ন, তা বাস্তবে রূপ দেয়াটা অনেকটাই কঠিন হয়ে গেলো ইংল্যান্ডের এই জয়ে। ৮ ম্যাচ শেষে ইংলিশদের অর্জন ১০ পয়েন্ট। পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে আবারও তারা উঠে এলো চার নম্বরে।

অন্যদিকে ৭ ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে বাংলাদেশ, ৮ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে পাকিস্তান। ১১ পয়েন্ট নিয়ে যৌথভাবে ভারত আর নিউজিল্যান্ড রয়েছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থানে।

কাগজে-কলমে এখনও সেমির আশা শেষ হয়ে যায়নি বাংলাদেশের। কিন্তু ভারতের এই হারে অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। যে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে গত ২৭টি বছর ভারতকে হারাতে পারে না, তারাই কি না গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটিতে কোহলিদের বলতে গেলে উড়িয়ে দিয়েছে!

কিন্তু ভারতের হারের ধরন দেখে রীতিমত উত্তাল হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রশ্ন, ভারত কি তবে ইচ্ছা করেই হেরেছে? তাদের ব্যাটিং স্টাইল এবং জিততে না চাওয়ার মানসিকতার কারণেই মূলতঃ এই প্রশ্ন তুলেছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।

এবারের বিশ্বকাপে টানা জয়ে ফর্মের তুঙ্গেই ছিল ভারত, ছিল অপরাজেয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে বিরাট কোহলিদের ৩১ রানের পরাজয়ে হতাশ সমর্থকরা। ক্রিকেট সমর্থকদের অনেকেই বলছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের মানসিকতা নিয়ে খেলেনি ভারত!

এদিকে ভারতের সাবেক ক্রিকেটার সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার টুইটারে লিখেছেন, ভারতের জয়রথ থামানোর মতো যদি কোনো দল থাকে, সেটা ইংল্যান্ডই। তবে, শেষ কয়েক ওভারে ধোনির কার্যক্রম বিভ্রান্তিকর।

বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার হার্ষা ভোগলে লিখেছেন, হতাশাব্যঞ্জক সমাপ্তি। এক বল-এক রানের পার্টনারশীপে খেলায় জেতা যায় না। পান্ডিয়া (হার্দিক পান্ডিয়া) থাকা পর্যন্ত (খেলা) উত্তেজনাপূর্ণ ছিল।

পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার লিখেছেন, ভারত আরও ভালো খেলতে পারত। প্রথম ১০ ওভারে আগ্রাসী চেষ্টা ও পরে পাঁচ উইকেট হাতে রেখে তারা চমক দেখাতে পারত।

শোয়েবের টুইটের রিপ্লাইয়ে মেহরান খান নামে এক ব্যবহারকারী ইংল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার নাসের হুসেইন ও সৌরভ গাঙ্গুলীর কথোপকথন উল্লেখ করে লিখেছেন,

‘নাসের: আমি বুঝি না, ধোনি কী করছে? অন্তত চেষ্টা তো করবে! এখন ভক্তরাও চলে যাচ্ছে।

সৌরভ: আমার কাছে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।’

সুরেশ রাও নামে আরেকজন লিখেছেন, সৌরভ গাঙ্গুলী ধোনি ও যাদবের ব্যাপারে ঠিক বলেছেন। শেষ পাঁচ ওভারে যদি বল সীমানাছাড়া করতে না পারেন, তবে যে পারে, তাকে জায়গা করে দেন।

সমালোচনার আগুনে সবচেয়ে বেশি পুড়ছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার বলে খ্যাত ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। কয়েকজন তো তিনিসহ গোটা টিম ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধেই ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তুলেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বলছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে কৌশলে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিতেই এমন বাজে ব্যাটিং করেছেন ধোনিরা।

ফরহাদ টিটু নামে একজন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, এই রকম রকিং ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে ভারত প্রথম ছক্কা হাঁকিয়েছে শেষ ওভারে এসে। ৩৩৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নামা কোনো দল যখন শেষ ওভারে গিয়ে এটা করে….সেই দল জয়ের জন্য নেমেছিলো-তা বিশ্বাস করা যায়?

মাহবুব রহমান নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ভারতের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে তাদের জেতার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আরও একটা পাতানো ম্যাচ!!!

সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে, আজ ১০ ওভার বল করে কোনো উইকেট পাননি চাহাল। শুধু উইকেটশূন্য থাকেননি, উদারহস্তে রানও দিয়েছেন ৮৮টি। বিশ্বকাপে তাঁর চেয়ে বেশি রান এক ম্যাচে ভারতের কেউ দেননি।

এদিকে ভারতের এমন হারে অবাক ভারতের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম জি নিউজ। ‘রান তাড়ার তাগিদ ছিল না ধোনির, পরাজয়ে ধাক্কা খেল পড়শিদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন।’ ভারতের হারের পর এমন শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে তারা।

সংবাদ মাধ্যমটি লিখেছে, ৩৩৮ রানের টার্গেট। শেষ ১০ ওভারে দরকার ১০৪। মানে ওভার পিছু প্রায় ১০। টি-২০ ক্রিকেটের যুগে এটা জলভাত। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে জেতার আশাই ছেড়ে দিলেন মহেন্দ্র সিং। কমেন্ট্রিবক্সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্মণরাও ধোনির কৌশল বুঝে উঠতে পারলেন না। বলতে গেলে তখনই ইংল্যান্ডের সামনে আত্মসমর্পণ করে দিল টিম ইন্ডিয়া। ভারতের হারে কণ্টকাকীর্ণ হয়ে গেল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল যাওয়ার রাস্তা।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ম্যাচের আগে থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, পাকিস্তানকে ছবক শেখাতে ইচ্ছে করে ম্যাচ হারবে ভারত। এমনকি দুই প্রাক্তন পাকিস্তানি ক্রিকেটারও এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। কয়েকজন ভারতীয়ও এদিন মজা করে বিরাটদের পরাজয় দেখতে চাইছিলেন।

ক্রিকেটবোদ্ধারা অবশ্য মনে করছেন, ম্যাচের শুরু থেকেই অতিরিক্ত মন্থর ব্যাটিংয়ে শেষের দিকে চাপ বেড়ে গিয়েছে। ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলা মুখের কথা নয়। আর টার্গেটে যখন পৌঁছনো সম্ভব নয়, তখন কৌশল বদলে ফেলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। রান তাড়া করতে গিয়ে দ্রুত উইকেট হারালে কমে যেত রান রেট। সে কারণেই দলকে তিনশো পার করিয়ে পাঁচ উইকেট হাতে রাখলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি