ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ নভেম্বর ২০২৪

২০২৩ বিশ্বকাপ: বাংলাদেশের সামনে কঠিন পথ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫২, ১৫ আগস্ট ২০১৯

২০১৯ বিশ্বকাপের রেশ কাটতে না কাটতেই ভাবনায় এখন ২০২৩ বিশ্বকাপ। মেগা আসরটি চার বছর পর হলেও এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এর ‘বাছাইপর্ব’। কেননা ১০ দলের এ বিশ্বকাপে থাকছে না র‍্যাঙ্কিংয়ের কোন বিষয়। তাইতো ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপে খেলতে হলে আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে বাংলাদেশকে।

গত বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের সঙ্গী হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট সময়ে র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে থাকা অন্য সাতটি দল। কিন্তু এবার আর র‍্যাঙ্কিং নেই। তাইতো ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে কী করতে হবে, সেটা জেনে নেয়া যাক। 

বুধবার স্কটল্যান্ডের এবারডিনে শুরু হয়েছে ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ (সিডব্লিউসি) লিগ টু'র প্রথম সিরিজ। এর মাধ্যমেই শুরু হয়ে গেল ২০২৩ বিশ্বকাপের পদযাত্রা। আগামী বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্ব হিসেবেই কাজ করবে সিডব্লিউসি লিগ টু। শুধু লিগ টু-ই নয়, আগামী বছর থেকে শুরু হতে যাওয়া সিডব্লিউসি ওডিআই সুপার লিগ এবং সিডব্লিউসি চ্যালেঞ্জ কাপও কাজ করবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্ব হিসেবে। 

এই তিন টুর্নামেন্টে খেলছে ভারতসহ ৩২টি দল। তাই ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে অন্য ৩১টি দল। কেননা এ বিশ্বকাপে সরাসরি সুযোগ পাবে শুধু স্বাগতিক ভারত। ১০ দলের বিশ্বকাপে বাকি ৯ দল বেছে নেওয়ার কাজ করবে সিডব্লিউসির এই তিন টুর্নামেন্ট।

আগামী বছরের ১ মে শুরু হতে যাওয়া ১৩ দলের ওডিআই সুপার লিগই ভুমিকা রাখবে বাছাইপর্ব হিসেবে। টেস্ট খেলুড়ে ১২টি দলের বাইরে ত্রয়োদশ দলটি নেদারল্যান্ড। প্রায় দুই বছরব্যাপী ওই লিগের পয়েন্ট তালিকায় থাকা ভারত ছাড়া অন্য সাতটি শীর্ষ দল সরাসরি চলে যাবে ২০২৩ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে। তালিকার নিচের পাঁচ দলকে খেলতে হবে আরেকটি বাছাইপর্ব। বাংলাদেশ যদি সেরা আটে না থাকতে পারে তবে খেলতে এই বাছাইপর্ব।

১০ দলের সে বাছাইপর্বে থাকবে সিডব্লিউসি লিগ টু ও সিডব্লিউসি চ্যালেঞ্জ কাপ মিলিয়ে আরও পাঁচটি দল। সেখান থেকেই সেরা দুটি দল যাবে চূড়ান্ত পর্বে।

কোন লিগ থেকে কীভাবে বিশ্বকাপে যাবে দলগুলো

সিডব্লিউসি ওডিআই সুপার লিগ—
দল: ১২ টেস্ট খেলুড়ে+নেদারল্যান্ড
ম্যাচ: প্রতিটি দল ২৪টি

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের মতো এখানেও সবাই সবার বিপক্ষে খেলবে না। দলগুলো দুই বছরে ঘরের মাঠে চারটি ও প্রতিপক্ষের মাঠে চারটি ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। প্রতিটি সিরিজই হবে তিন ম্যাচের। সুপার লিগ শেষে ভারত ও অন্য শীর্ষ সাত দল চলে যাবে ২০২৩ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে। বাকি পাঁচ দল খেলবে আরেকটি বাছাইপর্ব। 

সিডব্লিউসি লিগ টু-

দল: ৭ (স্কটল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল, নামিবিয়া, ওমান, পাপুয়া নিউগিনি ও যুক্তরাষ্ট্র)।
ম্যাচ: প্রতি দল খেলবে ৩৬টি ওয়ানডে।

আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের ১৪ থেকে ২০ নম্বর এই সাত দল আছে লিগ টুতে। আগামী আড়াই বছরে দলগুলো নয়টি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে। লিগ শেষে শীর্ষ তিন দল বাছাইপর্বে সরাসরি যোগ দেবে সুপার লিগ থেকে আসা পাঁচ দলের সঙ্গে। নিচের চার দলও আরেকটি সুযোগ পাবে বাছাইপর্বে যাওয়ার। চ্যালেঞ্জ লিগ থেকে আসা দুই দলের সঙ্গে প্লে-অফ খেলতে হবে তাদের।

সিডব্লিউসি চ্যালেঞ্জ লিগ ‘এ’ ও ‘বি’-
দল: লিগ ‘এ’ (কানাডা, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, ভানুয়াতু)।
লিগ ‘বি’ (বারমুডা, হংকং, ইতালি, নিউজার্সি, কেনিয়া, উগান্ডা)।
ম্যাচ: প্রতি দলের জন্য ১৫টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ।

২০১৯, ২০২০ ও ২০২১-এই তিন বছরে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে তিনটি সিঙ্গেল লিগ টুর্নামেন্ট খেলবে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে লিগের ২১ থেকে ৩২তম ১২ দল। দুই গ্রুপের শীর্ষ দুই দলই শুধু সুযোগ পাবে লিগ টুর নিচের চার দলের সঙ্গে প্লে-অফ খেলার।

২০২২ সিডব্লিউসি কোয়ালিফায়ার প্লে-অফ
দল: লিগ টুর নিচের চার দল+চ্যালেঞ্জ লিগের দুই গ্রুপ সেরা দল।
ম্যাচ: প্রতিটি দল পাঁচটি ওয়ানডে।

শীর্ষ দুই দল সুযোগ পাবে বাছাইপর্বে। সব দলের ওয়ানডে মর্যাদা না থাকলেও প্রতিটি ম্যাচই পাবে ওয়ানডে স্বীকৃতি।

২০২২ সিডব্লিউসি কোয়ালিফায়ার

দল: সুপার লিগের শেষ পাঁচ দল+লিগ টুর শীর্ষ দুই দল+প্লে-অফের শীর্ষ দুই দল।
দলগুলো ঠিক কীভাবে, কয়টা করে ম্যাচ খেলবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে শীর্ষ দুই দল যাবে ২০২৩ বিশ্বকাপে। সব কটি ম্যাচই পাবে ওয়ানডে স্বীকৃতি। 

অন্যদিকে, এই টুর্নামেন্টে সুপার লিগের ১৩তম দল ও লিগ টুর চ্যাম্পিয়ন দলের মধ্যে যারা ওপরে থাকবে, তারাই ১৩তম দল হিসেবে সুযোগ পাবে ২০২৭ সুপার লিগে।

বাংলাদেশের জন্য যে কারণে কঠিন

২০১৯ বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশকে সব সময় ভাবনায় রাখতে হয়েছে র‍্যাঙ্কিং। আর এবার হিসাবটা ভিন্ন। আগামী বিশ্বকাপে সুযোগ পেতে বাংলাদেশকে খেলতে হবে দেশে-বিদেশে চারটি করে মোট আটটি ওয়ানডে সিরিজ। প্রতিটি সিরিজ খেলতে হবে বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে। 

এই আটটি সিরিজের ২৪টি ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে বিশ্বকাপের হিসাব-নিকাশ। দেশের মাঠে অন্য দলকে ডেকে টানা সিরিজ জিতে পয়েন্ট বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকছে না। বিশ্বকাপের হিসাব-নিকাশ থাকবে বলে কোনো দলেরই কোনও সিরিজ হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাবে প্রতিটি সিরিজেই। ২০২৩ বিশ্বকাপের পথ মসৃণ রাখতে এই সিরিজগুলোয় ভালো ফল করে সেরা আটে থাকতেই হবে বাংলাদেশকে। না হলে খেলতে হবে আরও একটি বাছাইপর্ব। যেখানে থাবে অনেক শঙ্কা-সংশয়। তাই সংশয় দূর করতে নিশ্চয়ই সেরা আটেই থাকতে চাইবে টাইগাররা।

বাংলাদেশকে যে সিরিজগুলো খেলতে হবে-
সময়: প্রতিপক্ষ
২০২০ মে: আয়ারল্যান্ড (অ্যাওয়ে)
২০২০ ডিসেম্বর: শ্রীলঙ্কা (হোম)
২০২১ জানুয়ারি: ওয়েস্ট ইন্ডিজ (হোম) 
২০২১ ফেব্রুয়ারি: নিউজিল্যান্ড (অ্যাওয়ে) 
২০২১ জুন: জিম্বাবুয়ে (অ্যাওয়ে) 
২০২১ অক্টোবর: ইংল্যান্ড (হোম)
২০২২ ফেব্রুয়ারি: আফগানিস্তান (হোম)
২০২২ মার্চ: দক্ষিণ আফ্রিকা (অ্যাওয়ে)

তবে এই তিন বছরে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে কোন ম্যাচ পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তবে অন্য আটটি দলের মধ্যে ঘরের মাঠে পাবে শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানকে। তাই এই দলগুলোর বিপক্ষে জয় পাওয়াটা বেশ সহজই হবে বলা যায়। কেননা, ঘরের মাঠে সবসময় ভালো খেলে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে জয় পাওয়াটাও সহজ হবে। তবে নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদেরকে মাটিতে মোকাবেলা করাটা বরাবরই কঠিন। তবে টাইগাররা যে ছেড়ে কথা বলবে না, সেটা বলে দেয়ায় যায়। 

সুতরাং এই সিরিজগুলো খেলে সেরা আটে জায়গা করে নেয়াটা বাংলাদেশের জন্য অনেকটাই নিশ্চিত, সেটা বলা বাহুল্য। তবে হ্যাঁ, ম্যাচ বাই ম্যাচ, সিরিজ বাই সিরিজ হিসেব করে, প্রতিটি ম্যাচ সিরিয়াসভাবে নিয়েই খেলতে হবে তামিম-সাকিবদের। 

এনএস/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি