ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

১৩১ বছর পর ইংল্যান্ডের নতুন ইতিহাস 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:২৪, ২৫ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ২২:৩১, ২৫ আগস্ট ২০১৯

লর্ডসের ফাইনালে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়া সেই স্টোকস এবারও লিডসে হাজির ত্রাণকর্তার ভূমিকায়। বেন স্টোকসেরই বীরত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়ে অ্যাশেজে সমতা ফিরলো ইংলিশরা। সেইসঙ্গে ১৩১ বছর পর লিখলো নতুন এক ইতিহাস। 

ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত, অবিশ্বাস্য এ জয়ের ফলে আলোচনায় উঠে এসেছে ১৩১ বছর আগের এক টেস্টের কথা। ১৮৮৮ সালে লর্ডস টেস্ট আর সেটিও ছিল এবারের মতো অ্যাশেজ সিরিজ। তারই প্রথম টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রানে অল আউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আর প্রথম ইনিংসে ১১৬ রান তুলেছিল দলটি। দুই ইনিংসে এত কম সংগ্রহ নিয়েও ম্যাচটা কিন্তু জিতেছিল অজিরা!

চার্লি টার্নার ও জে জে ফেরিসের তোপে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ৫৩ আর দ্বিতীয় ইনিংসে ৬২। প্রায় দেড় শতাব্দী আগের সে ম্যাচের প্রসঙ্গ এখন উঠে আসার কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য ১ উইকেটের জয় আর প্রথম ইনিংসে ন্যূনতম ৭০ রানের নিচে অল আউট হওয়া। টেস্ট ম্যাচে এক ইনিংসে ৭০ রানের নিচে অলআউট হয়েও কোনও দলের জয়ের সেটাই সর্বশেষ নজির। লিডসে ইংল্যান্ড আজ ফেরালো সেই ১৩১ বছর আগের স্মৃতি।

এদিকে টেস্টে কোনও ম্যাচে জয়ী দলের এক ইনিংসে সর্বনিম্ন রান তোলার নজিরও কিন্তু ইংল্যান্ডেরই। সেটাও ১৩২ বছর আগের, অর্থাৎ ১৮৮৭ সালের অ্যাশেজ সিরিজে সিডনি টেস্টের ঘটনা। জর্জ লোহম্যান ও আর্থার শ্রুশবুরিদের ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৫ রানে গুটিয়ে গেলেও ম্যাচে তারা জয় তুলে নিয়েছিল ১৩ রানের।

শনিবার ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে জো ডেনলিকে নিয়ে ১২৬ রানে জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে লড়াইয়ে রাখেন জো রুট। কিন্তু ডেনলি আউট হলে বেন স্টোকসের সঙ্গে রোববার সকালে দাঁত কামড়ে ক্রিজে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। রান নেওয়ার তাড়া ছিল না কারও মনে। বরং যতক্ষণ সম্ভব টিকে থাকাই ছিল দুই ব্যাটসম্যানের মূল লক্ষ্য।

কিন্তু ১৮ ওভার টিকে থেকে তুমুল প্রতিরোধ গড়া ১৮ রানের এ জুটি ভেঙে দেন নাথান লায়ন। মাত্র দুটি রান যোগ করে ২০৫ বলে ৭ চারে সাজানো তার ৭৭ রানের ইনিংস থামে ডেভিড ওয়ার্নারের তালুবন্দি হয়ে।

অধিনায়ককে হারালেও জনি বেয়ারস্টোকে নিয়ে দলের জয়ের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখেন স্টোকস। যদিও হ্যাজেলউডের তোপে তিন অঙ্কে ছুঁতে ব্যর্থ হয় তাদের পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি। ৩৬ রানে মার্নাস ল্যাবুশ্যানের ক্যাচ হন বেয়ারস্টো। 

এরপর ৮ রানের ব্যবধানে দ্রুত জস বাটলার (১) ও ক্রিস ওকসকে (১) হারিয়ে অনেকটা পরাজয়ের শঙ্কা জেগে ওঠে ইংলিশ শিবিরে। মিডউইকেট থেকে ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত থ্রোতে রান আউট হন বাটলার। আর হ্যাজেলউডের বলে শর্ট এক্সট্রা কভারে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ধরা পড়েন ওকস।

তবুও ২৬১ রানে ৭ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এক বেন স্টোকস। ১৫২ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ফিফটি হাঁকানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দলকে লড়াইয়ে রাখেন জোফরা আর্চারকে সঙ্গে নিয়েই। লায়নের ৩৫তম ওভারে পরপর দুটি চার মেরে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন আর্চার। কিন্তু তিন বল পর তার স্লগ সুইপ ডিপ স্কয়ার লেগে হেডের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হলে অষ্টম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। বল হাতে নিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পা পড়ার আগেই ঠাণ্ডা মাথায় সামনে ছুড়ে দেন এবং আবার মাঠে ঢুকে ক্যাচ নেন হেড।

৩৩ বলে ৩ চারে আর্চারের ১৫ রানের ইনিংস থামার পর মাঠে নামেন স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু দুই বল খেলে জেমস প্যাটিনসনের লেগ বিফোরের শিকার হন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ব্রড। ফলে শেষ সম্বল লিচকে নিয়ে অসম্ভব এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন স্টোকস। যাতে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। 

কিন্তু হাল ছাড়েননি বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচসেরা বেন স্টোকস। লিচকে কম স্ট্রাইক দিয়ে কিউই বংশোদ্ভূত স্টোকস খেলেছেন বেশ মারমুখী হয়ে। মাত্র ৬.১ ওভারে পঞ্চাশ পেরোই এই জুটি, যার মধ্যে কোনও রানই ছিল না লিচের।

এক পর্যায়ে হ্যাজেলউডকে চার মেরে অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পান স্টোকস। ১৮৮ বলে ৮ চার ও ৫ ছয়ের মার মারেন তখন। পরের দুই বলে টানা দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচের উত্তেজনা চরমে তোলেন এই বাঁহাতি। এভাবে মেরে খেলে জ্যাক লিচের সঙ্গে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন স্টোকস।

খেলেন ১১টি চার ও আট ছক্কার সাহায্যে ২১৯ বলে ১৩৫ রানের হার না মান এক অবিশ্বাস্য ইনিংস। যা তাকে আবারও ইংলিশদের জাতীয় বীরের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি