ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

ক্রিকেটে মেয়েদের জয়জয়কার

এন শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ২১:৩৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

২০০৭ সালে অভিষেকের পর থেকে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। পুরুষ দলের পাশাপাশি বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে নারী ক্রিকেটাররাও। সম্প্রতি পুরুষদের ক্রিকেটে ভক্তরা যখন হতাশ, ঠিক তখনই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে নারীরা। জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপের মূলপর্বেও। এ যেন নারী ক্রিকেটের জয়জয়কার। 

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে সালমা-সানজিদারা। ২০০৭ সালের জুলাইয়ে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে দলটির। এতে প্রতিপক্ষ দলের বিপক্ষে দু’টি খেলায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছিল বাংলাদেশ।

এরপর দলটি একই বছরে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল-এসিসি নারীদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ও শিরোপা জয় করে। পরে ২০১১ সালে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের প্রতিযোগিতায় ৫ম স্থান অধিকার করে বাংলাদেশ। এর ফলে নেদারল্যান্ডসের পরিবর্তে একদিনের আন্তর্জাতিকে খেলার মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ দল।

২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ৯ উইকেটে হারিয়ে একদিনের আন্তর্জাতিকের মর্যাদা লাভ করে বাংলাদেশ দল। একইসঙ্গে ওই প্রতিযোগিতায় শীর্ষ ছয়ে প্রবেশ করায় বৈশ্বিকভাবে ১০ম স্থানে আসন করে নেয় বাংলাদেশ, যা ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন ছিল।

সেই থেকে যাত্রা শুরু, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বাংলাদেশ নারী দলকে। এ সময় পর্যন্ত টাইগ্রেসদের হয়ে দারুণ ক্যাপ্টেন্সি করেন সালমা খাতুন।  

পরে ২০১৬-এর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ইনজুরিতে পড়ায় সালমা খাতুনকে ছাড়াই জাহানারা আলমের নেতৃত্বে আয়ারল্যান্ড সফর করে বাংলাদেশ। এ সফরে দলটি আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিক এবং দুইটি টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ০-১ ব্যবধানে পরাজিত হলেও একদিনের আন্তর্জাতিকে জয়লাভের মাধ্যমে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে বাংলাদেশ। ওই খেলায় বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম হ্যাট্রিক করেন রুমানা আহমেদ।

পরের বছর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত আইসিসি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের চতুর্থ আসরে অংশ নেয় টাইগ্রেসরা। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব হিসেবে এ বাছাইপর্ব প্রক্রিয়া চলে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সুপার সিক্স পর্বে খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। 

অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দল পঞ্চম স্থান অধিকার করে ও নিজেদের ওডিআই মর্যাদা ২০২১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখে। এ প্রতিযোগিতার গ্রুপ পর্বে পাপুয়া নিউগিনি ও স্কটল্যান্ড এবং সুপার সিক্স পর্বে আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করে নারীরা।

২০১৮ সালে এসিসি আয়োজিত এসিসি প্রমীলা টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করে বাংলার মেয়েরা। যা ২০১৮ সালের ৩ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নেয় ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং থাইল্যান্ড। 

যেখানে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে ওঠে ভারত। আর মালয়েশিয়াকে ৭০ রানে হারিয়ে ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ হয় বাংলাদেশ। এ নিয়ে টুর্নামেন্টে ৭ম বারের মত ফাইনালে ওঠে ভারত, আর বাংলাদেশ ওঠে প্রথম বারের মত। 

আর প্রথমবারেই বাজিমাত। ভারতকে তিন উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ এবং ভারতের পর একমাত্র দল হিসেবে এই শিরোপা অর্জনের সম্মান লাভ করে টাইগ্রেসরা। 

সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেই দুর্দান্ত গতিতে সামনে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। যার সুস্পষ্ট ফলাফল লক্ষণীয় সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি বাছাইপর্বে। যেখানে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে সালমা বাহিনী। একইসঙ্গে আগামী বছর (২০২০ সাল) অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।

গত শনিবার স্কটল্যান্ডের ডান্ডির ফোর্টহিলে অনুষ্ঠিত বাছাই পর্বের ফাইনাল ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৭০ রানের বড় ব্যবধানে হারায় সালমা খাতুনের নেতৃত্বাধীন দলটি। যে জয়ের ম্যাচে অপরাজিত ৭১ রান করে বড় ভূমিকা পালন করেন ওপেনার সানজিদা ইসলাম।

সালমাদের এ সাফল্যে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। 

এক অভিনন্দন বার্তায় তিনি বলেন, পুরুষ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি নারী ক্রিকেট দলও বর্হিবিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। আমি তাদের সার্বিক সাফল্য কামনা করি। আমি আশা করছি, ভবিষ্যতেও জয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও বাংলার মেয়েরা অলরাউন্ডার নৈপুণ্য প্রদর্শন করবে।

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়সূচি প্রকাশ করেছে আইসিসি। যেখানে টাইগ্রেসরা পড়েছে ডেথ গ্রুপে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা।

আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ। ২৭ ফেব্রুয়ারি সালমাদের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। পরের দিন টাইগ্রেসরা খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। আর ২ মার্চ গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়া-ভারত ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ২০২০ বিশ্বকাপের। আর ৮ মার্চ হবে বৈশ্বিক এ টুর্নামেন্টটির ফাইনাল ম্যাচ।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি