ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪

সাকিবের পণ্য বা বিজ্ঞাপনের চুক্তিগুলোর কী হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৮, ৩০ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৯:৫৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

ক্রিকেটের খবরাখবর অনুসরণ করে এমন একটি ওয়েবসাইট একবার হিসেব দিয়েছিলো যে সাকিব আল হাসানের মাসিক আয় প্রায় ২৩ কোটি টাকা। জাতীয় দল ছাড়াও বিপিএল, আইপিএল, সিপিএল, বিগ ব্যাশসহ বিশ্বের প্রায় নামীদামী টুর্নামেন্টেই নিয়মিত বর্তমান বিশ্বের সেরা এই অলরাউন্ডার। খবর বিবিসি’র। 

এর বাইরেও বেশ কিছু নামকরা কোম্পানির ব্র্যান্ড এম্বাসেডর যেমন হয়েছেন তেমনি জনকল্যাণমূলক কাজের অংশ হিসেবে শুভেচ্ছা দূত হিসেবেও কাজ করছিলেন ইউনিসেফ কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে। বিভিন্ন সময়ে মডেল হয়েছেন বা পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন এমন কোম্পানির সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। কোমল পানীয়, বিস্কুট, ব্যাংক, ইলেকট্রনিকস, মোটরসাইকেল, আইসক্রিম, সাবান, অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যারসহ বহু পণ্যের বিজ্ঞাপনে অংশ নিয়েছেন। এ ধরণের কতগুলো কোম্পানির সাথে এ মূহুর্তে তার চুক্তি আছে সেটি জানা না গেলেও সম্প্রতি গ্রামীণফোনের সাথে চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতির ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন তিনি।

কিন্তু আইসিসি থেকে নিষেধাজ্ঞার পর পণ্য দূত বা শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সাকিব যেসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত বা চুক্তিবদ্ধ ছিলেন সেসব চুক্তির এখন কি হবে?

পরিবর্তন আসবেনা ইউনিসেফ ও দুদকের সিদ্ধান্তে:
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর বা শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করলেও এ নিয়ে সাকিব আল হাসান ও প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে কোনো আর্থিক সংশ্লেষ ছিলোনা। এমনকি এ কাজের জন্য সাকিবকে বিসিবি বা আইসিসির অনুমোদনও নিতে হয়নি। আর সে কারণেই আইসিসির সিদ্ধান্তের জন্য তাকে সেখান থেকে বাদ দেয়া বা বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের কোনো প্রয়োজন আছেও বলেও তারা মনে করে না। এমনকি সংস্থাটির কর্মকর্তারা এটি নিয়ে কোনো মন্তব্যই করতে রাজী হননি বিষয়টি ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নয় বলে। তারা বলছেন, এখানে সাকিব ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছেন ও এটি তার জন্য আর্থিক লাভজনক বিষয় নয়।

অন্যদিকে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলছেন সাকিবকে নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি দুঃখজনক কিন্তু একই সাথে সাকিব যে ভুল স্বীকার করেছে তার মাধ্যমে সে উচ্চ নৈতিকতার পরিচয় দিয়েছে। 
‘দুর্নীতি দমন কমিশন যখন চেয়েছে তখন সাকিব বিনে পয়সায় আমাদের সাথে কাজ করেছে। সে তরুণদের আইডল। দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমে আমরা সামনেও সাকিবকে চাইবো এবং আমাদের আশা যে সাকিব আগের মতোই আমাদের পাশে থাকবেন।’

গ্রামীণফোনের আলোচিত চুক্তির ভবিষ্যৎ কি?
খেলোয়াড়দের নানা দাবি দাওয়া নিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু এরপর গ্রামীণফোনের সাথে প্রায় তিন কোটি টাকার একটি চুক্তি করেছিলেন তিনি, যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। কারণ বিসিবি আরেকটি টেলিকম কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং খেলোয়াড়দের সাথে বিসিবির চুক্তিতে কোনো টেলিকম কোম্পানির সাথে জড়িত না হওয়ার শর্ত ছিলো। এসব কারণে গ্রামীণফোনের সাথে চুক্তি নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ ছিলো বিসিবি।

কিন্তু এখন আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর অন্তত এক বছর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে পারবেন না বাংলাদেশে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট দলের অধিনায়ক। এটি কি তার ও গ্রামীণফোনের মধ্যকার চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে।

জানা গেছে বোর্ডের সাথে সমস্যা হতে পারে মনে করে গ্রামীনফোন বিষয়টি সাকিবের সাথে আগেই আলোচনা করেছিলো। সাকিব তখন বোর্ডের অনুমোদন নিজে নেয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তাদের জানিয়েছিলেন।

কিন্তু এখন যখন আইসিসির নিষেধাজ্ঞা এলো তখন গ্রামীনফোন কি এই চুক্তি বহাল রাখবে?

এমন প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব দিতে রাজী হয়নি গ্রামীণফোন। মন্তব্য পাওয়া যায়নি অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন আইসিসির নিষেধাজ্ঞার সাথে তাদের করা চুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। সরাসরি সাকিব আল হাসান বা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির - দু পক্ষের কেউ মনে করলে চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে পারে কিন্তু তেমন কোনো পরিস্থিতি দু পক্ষের মধ্যে আসেনি বলেই মনে করছেন তারা।

শুভেচ্ছা দূত বা পণ্য দূত: ভক্তরা কিভাবে দেখছেন:
ঢাকার গৃহিনী ইশরাত জাহান শাহানা সাকিব আল হাসানের একজন ভক্ত। তার সন্তানেরাও দারুণ ভক্ত এই অলরাউন্ডারের। তিনি বলছেন, ‘একটু আগেই আমি সাকিবের একটা বিজ্ঞাপন দেখছিলাম টিভিতে। কোনো দোষ না করে শাস্তি পাওয়ার কারণে কেনো সাকিব এসব প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে সরে দাঁড়াবেন। বিজ্ঞাপনে সাকিবকে দেখে বাচ্চাদের উৎসাহ দেই। এবং সে এমন কোনো দোষ করেনি যে তাকে এগুলো থেকে সরে যেতে হবে।’

বরিশালের একজন শিক্ষার্থী ফাবিহা তানজুম। তিনি বলছেন, ‘সাকিব এখানে কোনো অন্যায় করেনি, ভুল করেছেন। কারণ এটা একটা দায়িত্বে অবহেলা এবং সে শাস্তি পাচ্ছে। আমার মনে হয় সাকিবের বিজ্ঞাপন ও দূত হিসেবে কাজ চালিয়ে নিতে কোনো সমস্যা থাকা উচিত না।’

এমসিসি থেকে পদত্যাগ:
এদিকে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার পর মেরিলবোন ক্রিকেট ক্লাব বা এমসিসির বিশ্ব ক্রিকেট কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে দু বছর আগে এমসিসিতে যোগ দেয়ার সম্মান অর্জন করেছিলেন সাকিব আল হাসান। এমসিসির ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাইক গ্যাটিং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘আমাদের কমিটি থেকে সাকিবকে হারানো সত্যি দুঃখজনক। সাকিব গত কয়েক বছর ধরে কমিটিতে অনন্য অবদান রেখেছেন। ক্রিকেটের অভিভাবক হিসেবে আমরা তার পদত্যাগকে সমর্থন করি এবং এটা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি।’

এমএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি