দিল্লিতে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন টাইগাররা, জরুরি অবস্থা জারি
প্রকাশিত : ২০:২৩, ১ নভেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ২০:২৫, ১ নভেম্বর ২০১৯
দিল্লিতে অনুশীলনে টিম বাংলাদেশ
রুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। তবে কোন রাজনৈতিক কারণে নয়, বায়ু দূষণজনিত জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে। ভয়াবহ বায়ু দুষণের কবলে পড়তে হয়েছে টাইগার ক্রিকেটারদের। যে কারণে শুক্রবার (১ নভেম্বর) দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনেই এ জরুরী অবস্থা জারি করেছে পরিবেশ কর্তৃপক্ষ।
এমনকি এদিন স্থানীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ মাস্ক বিতরণ করার সময় দিল্লিকে গ্যাস চেম্বারের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
দিল্লির ভয়াবহ এ দূষণের কারণে বাংলাদেশ-ভারতের ক্রিকেট ম্যাচকে ঘিরে দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। গত দু'বছর আগে (২০১৭ সালে) সেখানে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন অসুস্থ বোধ করেন শ্রীলঙ্কার কয়েকজন ক্রিকেটার। মাঠ ছেড়ে বেরিয়েও যান তারা। পরে মাঠে ফেরেন মুখে মাস্ক নিয়েই।
আগামী রোববার (৩ নভেম্বর) তেমন এক পরিস্থিতিতেই অরুণ জেটলি (সাবেক ফিরোজ শাহ কোটলা) স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির লড়াই। তবে এর আগেই দূষণ নিয়ে চিন্তায় আয়োজকরা।
এদিকে, গত বুধবার ভারতে পৌঁছার পর বৃহস্পতিবার দিল্লির মাঠে অনুশীলনে নামে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেখানে দলের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে দেখা যায় মুখে মাস্ক জড়িয়ে অনুশীলন করতে। যদিও অন্যরা মাস্ক ছাড়াই ছিলেন সেদিন। এ বিষয়ে হিন্দুস্তান টাইমসকে লিটন বলেন, ‘এটি আমার ব্যক্তিগত সমস্যা। তখন আমার মোটেই ভালো লাগছিল না।’
যার প্রেক্ষিতে পরের দিনগুলোতে খেলোয়াড় এবং স্টাফদের জন্য বাড়তি মাস্কের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানায় ভারতীয় ওই সাংবাদ মাধ্যমটি। এমনকি মাস্ক নেয়ার বিষয়টিতে বাংলাদেশ দলের আগ্রহের কথাও জানায় তারা।
সেদিন লিটন ছাড়া অন্য খেলোয়াড়দের মুখ থেকে দূষণ নিয়ে কিছু শোনা না গেলেও দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর সমস্যা হয়েছে বলে জানায় সাংবাদ মাধ্যমটি। বাংলাদেশ দলের মিডিয়া ম্যানেজারের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি বলে যে, ‘বাংলাদেশের কোচ ভালো অনুভব করছেন না। তিনি বলেছিলেন যে তার চোখ জ্বলছিল এবং পরিষ্কার বাতাসের অভাবে শ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছে।’
ডমিঙ্গোর সমস্যা দেখার পরে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট আরও মাস্কের ব্যবস্থা করার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
এদিকে, চোখ জ্বলা, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাগুলোই অনুশীলনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের একমাত্র উদ্বেগ ছিল না। প্রচন্ড ধোঁয়ার কারণে অনুশীলনের সময় তাদের বল দেখতেও সমস্যা হচ্ছিল। ফিল্ডিং ড্রিল চলাকালীন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম একাধিকবার আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন, তিনি বল ধরতে পারবেন না।
এ বিষয়ে লিটন দাস বলেন, ‘হ্যাঁ, বল দেখতে অবশ্যই সমস্যা হয়েছিল, তবে আমি মনে করি রোববার আলোর নিচে (রাতের ম্যাচ) এটা ঠিক হওয়া উচিত।’
এসব সমস্যা থাকার পরও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নয়া প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলি বলেছেন, সূচি অনুযায়ী ম্যাচটি দিল্লিতেই হবে। বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংস্থা বিসিসিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে ম্যাচের ভেন্যু পরিবর্তনের আবেদন জানালেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল বোর্ডটি।
রোটেশনের নিয়ম মেনেই নাকি ম্যাচটি আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে দিল্লি। কিন্তু দূষণের এমন মাত্রাছাড়া অবস্থায় ম্যাচের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দেশটির ক্রীড়াঙ্গনে। এরমধ্যেই তারা ভবিষ্যতে দিল্লিতে ম্যাচ আয়োজন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে বছরের এই সময়টাতে। আগামীতে দিল্লী হয়তো ফেব্রুয়ারি-মার্চের ম্যাচগুলোই বেশি পাবে।
মূলত, দিওয়ালির পর থেকে ক্রমেই বাড়ছে দিল্লির দূষণের মাত্রা, এখন যা উদ্বেগজনক মাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। এখন দিল্লির দূষণের মাত্রা ‘সিভিয়ার প্লাস’ বা ‘ইমার্জেন্সি’ শ্রেণিতে পড়ছে।
যা নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আওতাভুক্ত পরিবেশ দূষণ (প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) কর্তৃপক্ষ ১০ সদস্যের দূষণ-বিরোধী টাস্কফোর্স গঠন করেছে। টাস্কফোর্সের সুপারিশে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লী-এনসিআর এলাকায় নির্মাণকাজের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি আতশবাজি পোড়ানোর উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
যে সংস্থাগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার করে না সেগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শীতকালে দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকায় বাজি ফাটানো যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, রাজধানীর এহেন অবস্থার জন্য প্রতিবেশী রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানাকে দুষছেন কেজরিওয়াল। তিনি মনে করেন, প্রতিবেশী দুই রাজ্যে বছরের এ সময়ে আবর্জনা পোড়ান কৃষকরা। যে কারণে ধোঁয়ায় ভরে যায় দিল্লি।
দিল্লীতে এই দূষণের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, প্রাতঃভ্রমণকারীদের পর্যন্ত সকালে মাস্ক পরে হাঁটতে বের হতে হচ্ছে। দিল্লির স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ লাখের বেশি মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
এনএস/