চতুর্থ হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য টাইগারদের
প্রকাশিত : ২০:৩৪, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
মাশরাফি ইন অ্যাকশন
সফরকারী জিম্বাবুয়ের ওপর বিস্তার করা আধিপত্যটা আরও প্রসারের লক্ষ্য নিয়েই এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ। রোববার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে দুপুর ১টায়।
গত বিশ্বকাপ মিশনে সফল হয়নি বাংলাদেশ দল। রবিন লিগ রাউন্ডে তিন জয় নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে টাইগারদের। যুক্তরাজ্য থেকে ফেরার পর শ্রীলঙ্কা সিরিজেও ভরাডুবি। তিন ম্যাচের সিরিজে লঙ্কানদের কাছে ধবলধোলাই হয় তামিমের দল। সবমিলিয়ে নিজেদের প্রিয় সংস্করণে টানা পাঁচ ম্যাচ ধরে জয়হীন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
এদিকে, বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সফরকারী জিম্বাবুয়েও। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া ওয়ানডে সিরিজ তাই দুই দলের জন্যই হয়ে উঠল পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙার উপলক্ষ্য।
আফ্রিকান দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতেই কাল মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সাফল্য নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৪ ম্যাচে জয়ের স্বাদ পাবে টাইগাররা এবং অবশ্যই টানা চতুর্থবারের মত তাদের হোয়াইটওয়াশের পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারের স্বাদ কেমন তা শুধুমাত্র বর্তমান টাইগার দলের চার খেলোয়াড়- তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই জানেন।
২০১৩ সালে বুলাওয়েতে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ হারের স্বাদ পেয়েছিলো বাংলাদেশ। মাশরাফি বাদে, সেই দলে এই তিন সদস্যই ছিলেন। এই দলের বাকী সদস্যদের ঐ সময় অভিষেক হয়নি।
ঐ সিরিজের পর জিম্বাবুয়ের সাথে ১৩টি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। প্রত্যকটিই ছিলো দেশের মাটিতে। প্রথমটি ছিলো ২০১৪ সালে মাশরাফির নেতৃত্বে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিলো টাইগাররা। এ সিরিজ জয় দিয়ে নিজেদের ক্রিকেটে নতুন জাগরনের শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। এরপর থেকেই ক্রিকেট বিশ্বে অন্যরুপে আবির্ভুত হয় টাইগাররা।
এরপর ২০১৫ ও ২০১৮ সালে দু’বার তিন ম্যাচের দ্বিপাক্ষীক সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। আর ২০১৮ সালে শ্রীলংকাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের দু’ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছিলো টাইগাররা।
এরমাঝে বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টেস্ট ও কিছু টি-২০ ম্যাচ জিতেছিলো জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ওয়ানডে ফরম্যাটে অবিচল ছিলো বাংলাদেশ। অন্য দুই ফরম্যাটের চেয়ে ওয়ানডে ভার্সন বাংলাদেশকে বিশ্ব পর্যায়ে উঁচু স্থানে রয়েছে। তারপরও ইতিহাস বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছে। ওয়ানডে সিরিজের আগে এক ম্যাচের টেস্ট বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। তাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে টাইগাররা।
কিন্তু, দুই দলের জয়খরা ছাপিয়ে পাদ প্রদীপে চলে এলো বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার অবসর প্রসঙ্গ। সাংবাদিক বৈঠকে দফায় দফায় প্রশ্নে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় সিরিজ পূর্ব আবহটাই পাল্টে ফেললেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’!
এই সিরিজ দিয়ে শেষ হচ্ছে বাংলাদেশের মাশরাফি যুগ। সম্প্রতি এমন ঘোষণাই দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। যদিও অধিনায়কের অবসর প্রসঙ্গে সুর-ও পাল্টেছেন তিনি। মাশরাফিও নিজের মতো করেই বিষয়টা ধোঁয়াশার মধ্যে রাখলেন। তাতে নির্ধারিত করে বলা মুশকিল তার ক্যারিয়ারের শেষের শুরু হচ্ছে কখন।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম দলে ফিরেছেন মাশরাফি। অধিনায়কের ফেরার দলটা স্বপ্নপূরণের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ নাঈমের জন্য। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে বেশ কয়েকটা পরিবর্তনই এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিং অর্ডারে আসছে পরিবর্তন। যার কেন্দ্রে মুশফিক।
কদিন আগে ঢাকা টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান। ফর্মটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টেনে আনতে মরিয়া তিনি। আজ নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে পেসারদের ভুগিয়ে যেন তেমন আভাসই দিয়েছেন মুশি। ইঙ্গিত মিলল মোহাম্মদ নাঈমের অভিষেকেরও। কাল প্রথম ওয়ানডে দিয়ে মাঠে ফিরতে পারেন চোটের ধঁকল কাটিয়ে ওঠা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
দুই দলই অনেকদিন ধরে টানা হারের মধ্যে আছে। আর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তো জিম্বাবুয়ে শেষবার জিতেছে প্রায় দশ বছর আগে। আজ ধারাটা পাল্টে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ১৯ মাস পর ওয়ানডে দলে ফেরা জিম্বাবুয়ের নতুন অধিনায়ক চামু চিবাবা। সফরকারীরা পারবে তো ১৭তম প্রচেষ্টায় টাইগারদের হারাতে? উত্তরটা মিলে যাবে আগামীকালই।
পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হতে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনছে জিম্বাবুয়ে। প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে দেখা যেতে পারে চিবাবা ও টিমিচেন মারুমাকে। অভিষেক হতে পারে অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ওয়েসলি মাধিভারের।
সঙ্গে ব্রেন্ডন টেলর, শেন উইলিয়ামস, সিকান্দার রাজা, ক্রেইগ আরভিনের মতো অভিজ্ঞরা তো আছেনই। শেষজন টাইগারদের বিরুদ্ধে ঢাকা টেস্টে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করেছেন। এবার ওয়ানডে ক্রিকেটে জ্বলে উঠতে চান আরভিন।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারুণ্যেঠাসা দল দিয়েছে জিম্বাবুয়ে। তাদের আশা এই দলটাই টাইগারদের বিপক্ষে জয়খরা ঘোচাতে পারে। দলটাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দারুণ এক স্মৃতি। এই মাঠে একমাত্র যে টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল সেখানে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল তারা। ওদিকে একমাত্র যে ওয়ানডে ম্যাচটা হয়েছিল সেখানে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছিল টাইগাররা।
রেকর্ড/পরিসংখ্যান
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে সাত হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার অপেক্ষায় আছেন তামিম ইকবাল। টাইগার ওপেনারের দরকার ১০৮ রান। এছাড়া, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় একমাত্র ওয়ানডে ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
সম্ভাব্য একাদশ
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মেহেদি হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মুস্তাফিজুর রহমান।
জিম্বাবুয়ে: চামু চিবাবা (অধিনায়ক, টিমিচেন মারুমা, ক্রেইগ আরভিন, ব্রেন্ডন টেলর (উইকেটরক্ষক), সিকান্দার রাজা, টিনোটেন্ডা মুতুম্বজি, ডোনাল্ড ত্রিপিয়ানো, আইনসলে এন্ডলুভু, ক্রিস এমপুফু, চার্ল মুম্বা
এনএস/