ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

মায়ারস বিষে কাঁদল বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩১, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | আপডেট: ১৬:৩৫, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত কাইল মায়ারসে ভর করে মোমিনুলদের বিপক্ষে অসাধ্যকে সাধন করলেন ক্যারিবিয়রা। শুধু বাংলাদেশ নয়, সফরকারীদের কল্পনায়ও হয়তো আসেনি এমন জয়ের কথা। কাইল মায়ারসের ডাবল শতকে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটের ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। 

শেষ দিনে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে ধৈর্য্যশীল ব্যাটিংয়ের পরীক্ষা দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মুস্তাফিজদের একাধিক ভুলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একের পর বাউন্ডারিতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে সফরকারীরা। আজকের দুই সেশনে ৫৭ ওভার ব্যাটিং করে ১৫৬ রান যোগ করেছেন মায়ারস ও বোনার। সবমিলিয়ে তাদের জুটি ভাঙে ২৩০ রানে। যা ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে চতুর্থ উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি।

সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ফিরেছেন বোনার। মাঠ ছাড়ার আগে তিনি করেন ৮৬ রান। তবে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেয়া মায়ারস খেলেছেন ২০৯ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস। এ দুজনের জুটিতেই মূলত জয়ের সম্ভাবনা দেখতে পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যদিয়ে টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড গড়বেন ক্যারিবিয়রা। আর তা হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। 

তৃতীয় শেষনের শুরুতে কিছুটা চাপে ফেলেছিল তাইজুল-মেহেদীরা। কিন্তু জোসুয়া ডি সিলভাকে সাথে নিয়ে ধীর পরিকল্পনা মাফিক ব্যাট চালিয়ে যান মায়ারস। ৭টি ছক্কা ও ২০টি বাউন্ডারিতে ২১০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন বাহাতি এই ব্যাটসম্যান। ফলে ক্রমেই হতাশ হতে থাকে টাইগাররা। যা শেষ মুহূর্তে এসে বিষে পরিণত হয় মোমিনুল-তামিমদের। 

দিনের প্রথম সেশনে একাধিক সুযোগ তৈরি করেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। কিন্তু কখনও রিভিউ না নেয়ার ভুল, আবার কখনও ক্যাচ ছেড়ে ক্যারিবীয়দের সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। যার সুবাদে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের করে নেয় সফরকারীরা।

চতুর্থদিন করা ৩ উইকেটে ১১০ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ দুই প্রান্ত থেকে মেহেদি মিরাজ ও তাইজুলকে দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। প্রথম সেশনে মেলেনি সাফল্য, সুযোগ পেয়ে মায়ারস ও বোনার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে যোগ করেছেন ১৩৮ রান।

মেহেদি মিরাজের বলে স্লিপে দাঁড়িয়ে হাফ সেঞ্চুরিয়ান মায়ারসের ক্যাচ ছেড়ে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সে বলে পাওয়া সিঙ্গেল থেকে ফিফটি পূরণ হয় মায়ারসের। এছাড়া ইনিংসের ৫০তম ওভারে তাইজুলের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদেও পড়েছিলেন মায়ারস। আম্পায়ার আউট দেননি, রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ। কিন্তু সেই বলটি আঘাত হানত লেগস্ট্যাম্পে। ফলে সুযোগ পান মায়ারস।

সেশন শেষ হওয়ার ওভারে রিভিউ না নেয়ার ভুল করেনি বাংলাদেশ। এবারও বোলার ছিলেন তাইজুল, ব্যাটসম্যান মায়ারস এবং আম্পায়ারের সিদ্ধান্তও ছিল নটআউট। টাইগাররা রিভিউ নিলে দেখা যায়, সেই বলের উইকেটস ছিল আম্পায়ারস। অর্থাৎ আম্পায়ার আউট দিলে সাজঘরে ফিরতে হতো মায়ারসকে। কিন্তু আম্পায়ার আউট না দেয়ায় সেঞ্চুরির হাকান তিনি। 

শুধু মায়ারস একা নন। বাংলাদেশের রিভিউ ভুলে বেঁচেছেন বোনারও। ইনিংসের ৫৬তম ওভারে নাঈম হাসানের দুর্দান্ত টার্নিং ডেলিভারি গিয়ে আঘাত হানে বোনারের পায়ে। বল লেগস্ট্যাম্প দিয়ে বের হয়ে যাবে ভেবে আউট দেননি আম্পায়ার, বাংলাদেশও নেয়নি রিভিউ। রিপ্লেতে দেখা যায়, সে বলটিও লেগস্ট্যাম্পে লাগত। ফলে মায়ারসের মতো বেঁচে যান বোনারও।

দিনের প্রথম ঘণ্টার পর দ্বিতীয় ঘণ্টার খেলার শুরুতে প্রথমবারের মতো আক্রমণে আনা হয় মোস্তাফিজুর রহমানকে। তার ওভারেই ইনিংসের প্রথম ছক্কাটি হাঁকান মায়ারস। সেই ওভার থেকে ক্যারিবীয়রা পায় ১১ রান। সেই স্পেলে তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি মোস্তাফিজ।

অন্যদিকে স্পিনেও আর তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেননি মিরাজ-নাঈম-তাইজুলরা। হাড়ে হাড়ে অনুভূত হয়েছে সাকিব আল হাসানের অভাব। অবশ্য একই সঙ্গে ভাগ্যবানও ছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা। ইনিংসের ৮২তম ওভারে তাইজুলের বলে বোনারকে লেগ বিফোরে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বোনার।

এর পরের ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা পান মায়ারস। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪তম ও বিশ্বের ১০৭তম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। শতক হাঁকিয়েও তেমন কোনো ঝুঁকি নেননি মায়ারস, দেননি কোনো সুযোগ। যার ফলে বারবার হতাশায় ডুবতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।

চট্টগ্রাম টেস্ট জয়ে শেষ সেশনে টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ৫ উইকেট। কিন্তু আক্রমনাত্মক হতে পারেননি মোস্তাফিজ, তাইজুল ও মিরাজরা। শেষ দিকে জয়ের জন্য যখন ক্যারিবিয়নদের প্রয়োজন ২ রান তখন পরপর দুটি উইকেট তুলে নেন মিরাজ ও তাইজুল। তবে তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে ৩ উইকেটের হারের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় স্বাগতিক বাংলাদেশের।  

বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪ উইকেটে নেন মিরাজ। এছাড়া তাইজুল ২টি ও নাঈম হাসান নেন একটি উইকেট। 

এআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি