শেষমেশ ড্র-ই দেখলো পাল্লেকেলে
প্রকাশিত : ১৭:২৩, ২৫ এপ্রিল ২০২১
পাল্লেকেলেতে বৃষ্টির হানা
ম্যাচের চারটি দিনই শেষ, অথচ শেষ হয়নি দুই দলের প্রথম ইনিংসই। পালেকেল্লে টেস্ট যে ড্র হচ্ছে এটা গতকালই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্ত টেস্টের পঞ্চম দিনে তো কত কিছুই হয়; শেষের অপেক্ষাটা তাই ছিলোই। সেইমতে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়ালেও ম্যাচের শেষ শেসনে বৃষ্টি নামায় দুই দলের সম্মতিতে নিষ্প্রাণ ড্র-ই মেনে নিয়েছে দুই দলের ক্যাপ্টেন।
যদিও আজ পঞ্চম দিনেই হতে পারতো অনেক কিছুই। বৃষ্টি না নামলে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি মিস করার আক্ষেপ হয়তো দূর করতেন তামিম ইকবাল। এর আগে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিলো দ্বিমুথ করুনারত্নের। প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি হাতছানি দিচ্ছিল ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। টেস্টে প্রথম পাঁচ উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু এর কিছুই হয়নি।
তবে এই টেস্টে যেটা হয়েছে সেটাই বা কম কী? টেস্টে এর আগে চার বার দেড়শো ছুঁয়ে ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ না পাওয়া করুনারত্নে দূর করেছেন সেই আক্ষেপ। অবশেষে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া নাজমুল হোসাইন শান্ত। আর দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেয়েছেন দেশ সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান মোমিনুল হক সৌরভ।
কেবল ব্যক্তিগত অর্জনই নয়; তিন ফরম্যাটে টানা হেরে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দলের কাছে এই ড্র হয়তো জয়ের থেকেও বেশি কিছু। কিছু না হোক ক্রিকেটারদের মানসিক প্রশান্তি অন্তত দিয়েছে। হারের বৃত্তে থাকা মুশফিক তামিমদের মনোবল একটু হলেও সতেজ করেছে।
তবে ১০৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবাল আক্রমণাত্মক শুরু করলেও ইনিংসের শুরুতে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সাইফ হাসান ১ রান করে ফিরে যাওয়ার পর আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসাইন শান্তও ফিরে যান কোনও রান না করেই।
এরপর তৃতীয় উইকেটে তামিম ইকবাল ও মোমিনুল হকের ৭৩ রানের জুটিতে সব চাপ দূর করে বাংলাদেশ। এরপরই নামে বেরসিক বৃষ্টি। বৃষ্টি নামার আগে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তামিম ৯৮ বলে ৭৪ রান ও মোমিনুল হক ৮৬ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সেঞ্চুরি পাওয়ার সুযোগ ছিল তামিমের, তবে বৃষ্টির জন্য সেটা আর হয়নি। তবুও ১০টি চার আর ৩টি বিশাল ছক্কায় সাজানো এই ইনিংস খেলার মধ্যদিয়ে তামিম ফের মুশফিককে টপকে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। এছাড়া নিজের ফিফটি মার্কে পৌঁছানোর সময় দলের রান ছিল ৫২। এর মাধ্যমে ১৩১ বছরের রেকর্ড ভেঙে দেন তামিম।
এর আগে গতকাল হতাশাময় দিন কাটানোর পর আজ দিনের শুরুতেই সাফল্য পেয়েছেন বোলাররা। ৩ উইকেটে ৫১২ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে আজ আর বেশি দূর যেতে দেননি বাংলাদেশের বোলাররা। দিনের শুরুতেই জোড়া আঘাতে তাসকিন আহমেদ ফিরিয়ে দেন গতকাল দাপট দেখানো দুই ব্যাটসম্যান দ্বিমুথ করুনারত্নে ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে। ৪৩৭ বলে ২৪৪ রান করে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে আউট হন করুনারত্নে। আর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ফিরে যান ১৬৬ রান করে।
জোড়া আঘাতের পর পাথুম নিসানকা ফিরে গেলেও দ্রুত রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ৮ উইকেটে ৬৪৮ রান করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে গিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৩টি উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। এছাড়া তাইজুল ইসলাম ২টি ও ১টি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও এবাদত ইসলাম।
প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৫৪১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৬৩ রান করেন নাজমুল হোসাইন শান্ত। এছাড়া মোমিনুল হকের ব্যাট থেকে আসে ১২৭ রান এবং হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম। মুশফিকুর রহিম ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন ও লিটন দাসের ব্যাট থেকে আসে ৫০ রান।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন বিশ্ব ফার্নান্দো। বাংলাদেশের রানের পাহাড় গড়ার ইনিংসে এই পেসার শিকার করেন ৪ উইকেট। এছাড়া ধনাঞ্জয়া, লাকমল ও কুমারা শিকার করেন একটি করে উইকেট। তবে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো দ্বিমুথ করুনারত্নেই।
এনএস/