‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’!
প্রকাশিত : ১২:৩৬, ১১ মে ২০২১
পাকিস্তানের তিন বুড়ো আলী- আবিদ, নুমান ও আজহার।
কথায় আছে- ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’। তেমনি কয়েকটা পুরনো চাল পেয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট। যেমন- নুমান আলি, তাবিশ খান, আবিদ আলী ও আজহার আলী। কিছু কিছু ফুল আছে অনেক দেরিতে ফুটলেও তার সুবাস বিরাজমান থাকে অনেকদিন। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য তেমনই এক ফুল হলেন আবিদ আলী।
সদ্য সমাপ্ত পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে হারারেতে মন্থর উইকেট প্রায় পাঁচ সেশন ব্যাটিং করে ৪০৭টি বল খেলে ২১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন আবিদ আলী। ক্যারিয়ার সেরা এই ইনিংস খেলার পথে ২৯টি চার মারেন এই ডানহাতি ওপেনার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের হয়ে কোনও ক্রিকেটারের এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করেন আরও দুজন।
তবে সেদিকে যাচ্ছি না! এই টেস্টে ৩৬ বছর বয়সে এসে অভিষেক হয়েছে পেসার তাবিশ খানের। আরেক বুড়ো ৩৪ বছর বয়সী নোমান আলী ব্যাট হাতে যেমন ঝড় তুলে ৯৭ রানের ইনিংস খেলার পর বল হাতেও পাঁচ উইকেট নিয়ে শিরোনামে থাকলেও পাকিস্তানের ইনিংস বড় করার ক্ষেত্রে মূল কাজটা কিন্তু করেছেন আবিদ আলীই। তার এই ধরে খেলার সামর্থ্য, টিকে থাকা- এসবই অন্যান্য ক্রিকেটার থেকে তাকে আলাদা করে।
পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের সময় থেকেই তিনি ধারাবাহিক পারফর্মার। তার খেলার ধরণ, মানসিকতা, ব্যাটিং স্টাইল এই সব কিছু বিবেচনায় তাকে রেড বল স্পেশালিষ্টই মনে করা হতো। তার ব্যাটিং ধরণটা কিছুটা ‘ওল্ড স্কুল’ টাইপ। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকফুটে ব্যাটিং করে অফ সাইডে খেলতে পছন্দ করেন তিনি। তবে তার ব্যাটিংয়ে একটা সলিডিটি আছে, যে কারণে লম্বা সময় ধরে ব্যাট করে যেমন নিজের ইনিংস বড় করতে পারেন, তেমনি পারেন দলকেও মজবুত পুঁজি এনে দিতে। একজন ওপেনার হিসেবে বেশি স্ট্রোক না খেলে অন্য ব্যাটসম্যানদের রান করার সুযোগ দেয়ার জন্য নিজে অ্যাংকর রোল প্লে করে ব্যাটিং করেন আবিদ আলী।
তিনি প্রথম শিরোনামে আসেন ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই সেঞ্চুরি করার পর। সেই বছরেই আরও বড় শিরোনাম হন ২০১৯ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দলে সুযোগ পেয়ে। পরে অবশ্য আসিফ আলী শেষ সময়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দল থেকে বাদ পড়েন আবিদ।
এরপর ইমাম উল হক, শান মাসুদ, সামি আসলামরা টেস্ট দলে নিয়মিত থাকায় তার জায়গা পাওয়া নিয়েই সংশয় ছিলো। তবে ইমাম উল হকের ওয়ানডে ফর্ম টেস্ট ক্রিকেটে আনতে ব্যর্থ হওয়ায় আবিদ আলীর সুযোগ হয় ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টেই।
২০১৯ সালে সেই রাওয়ালপিন্ডিতে অভিষেকেই ১৭৪ রানের ইনিংসসহ দুই টেস্টের সিরিজে তিন ইনিংসে ৩২১ রান করেন আবিদ আলী। সেই অভিষেকে টেস্ট সিরিজেই টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরি করেও রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখান আবিদ।
আবার গত বছর ইংল্যান্ড-পাকিস্তান টেস্ট সিরিজের ২য় টেস্টে শেষ দিনে প্রায় ৫০ ওভার ব্যাটিং করে নিশ্চিত হার থেকে উদ্ধার করেন পাকিস্তানকে।
লাহোরে জন্ম নেওয়া এই ক্রিকেটারের অভিষেক হয় ২০০৭ সালে ক্বায়দে আজম ট্রফিতে। ভালো ভালো ক্রিকেটারদের প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজ শহরের দলে সুযোগ না পেয়ে বেশিরভাগ সময়ে খেলেছেন ইসলামাবাদ ও বালুচিস্তানের হয়ে। এক যুগের ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় ১০ হাজার রান করার পর ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ৫ ম্যাচের ওয়ানডে দলে সুযোগ হয়।
অভিষেকে সেঞ্চুরি, হঠাৎ বিশ্বকাপে সুযোগ, আবার বাদ পড়া, আবার দলে ডাক পেয়ে পারফর্ম করা- এসব মিলিয়ে ৩৩ বছর বয়সী এই ডানহাতি ওপেনার তার ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছেন এখনও। ওয়ানডে স্কোয়াডে থেকে নিয়মিত একাদশে না সুযোগ পেলেও এখন পর্যন্ত ১২ টেস্টে একটি ডাবলসহ তিন সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৪৯.৬৪ গড়ে ৮৪৪ রান করা আবিদ আলী টেস্ট দলের অটোমাটিক চয়েজ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২০ ম্যাচ খেলে ২১টি শতকে ৩৯.০৬ গড়ে ৭৮৯২ রান করেছেন আবিদ।
আসলে বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা মাত্র। সুযোগ পেলেই কথাটা প্রমাণ করেন আবিদ আলী। ক্রিকেটে এমন দৃষ্টান্ত রোজ রোজ দেখা যায় না। তাই আবিদ আলীর জীবনটাকে চাইলে অনুপ্রেরণা হিসেবেও নিতে পারেন অনেকেই। শুধু আবিদই নয়, চাল যত পুরনো হোক, তাতে যে ভালো আয় দেয়- তারই প্রমাণ দিয়েছেন ওপর তিন পাকিস্তানি আজহার আলী, নুমান আলী ও তাবিশ খান।
উল্লেখ্য, দুই টেস্ট সিরিজের দুটিতেই পাকিস্তানের কাছে ইনিংস ও শতাধিক রানের বড় ব্যবধানে হেরে পর্যদুস্ত হয়েছে জিম্বাবুয়ে।
এনএস/