অবসরের সিদ্ধান্ত রিয়াদের, পুনর্বিবেচনার আহ্বান বিসিবির
প্রকাশিত : ১৩:০৪, ১০ জুলাই ২০২১
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
দীর্ঘ ১৭ মাস পর ৫০তম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেই ক্যারিয়ার সেরা স্মরণীয় এক ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। সেই আনন্দের মাঝেই বিষাদ ঢেলে দিয়েছেন দলের এই তারকা ক্রিকেটার, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অবসরের। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে তার এই সিধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে বিসিবি।
শুক্রবার (৯ জুলাই) হারারে টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শুরুর আগে টিম মিটিংয়ে রিয়াদ সতীর্থদের জানান, এটাই যথাযথ সময় সাদা পোষাককে বিদায় বলার, এই টেস্টটাই শেষ টেস্ট হতে যাচ্ছে তার। এরপর বিষয়টি জানাজানি হয় বোর্ডেও।
বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমেও শেয়ার করেছেন রিয়াদ। বিষয়টি জানার পর তৃতীয় দিনের খেলা শেষে রিয়াদকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান বিসিবি কর্তারা। সিদ্ধান্তটা শেষপর্যন্ত তাকেই নিতে হবে, কেননা বল এখন রিয়াদের কোর্টেই।
তবে এটি নিয়ে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেন, ম্যাচের মাঝামাঝিতে মাহমুদউল্লাহর ঘোষণা দলকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মাহমুদউল্লাহ মন্তব্য করার জন্য ইএসপিএনক্রিকইনফো-র অনুরোধের জবাব দেননি। বিসিবির শীর্ষস্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ‘আমরা রিয়াদকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলেছি। আশা করি রিয়াদ তার সিদ্ধান্ত পাল্টাবে।’
বিসিবি সভাপতি বলেন, তাকে মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল, যাকে তিনি "অস্বাভাবিক", "অগ্রহণযোগ্য" এবং "আবেগের" ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেছেন।
একটি দৈনিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাপন বলেন, "আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়নি। তবে কেউ একজন আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে, তিনি আর টেস্ট খেলতে চান না।"
এটা দলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে নাজমুল হাসান আরও বলেন, "স্পষ্টতই, সে ড্রেসিংরুমে গিয়ে এসব কথা বলেছে। আমি মনে করি, এটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক, যেহেতু ম্যাচটি এখনও শেষ হয়নি। আমার মনে হয়, সে এটা আবেগ থেকেই করেছে। এ জাতীয় ঘোষণার ফলে দলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ খেলতে না চাইলে কোনও সমস্যা নেই, তবে সিরিজের মাঝখানে কোনও গোলমাল তৈরি করার দরকার নেই।"
৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে। ওয়ানডে দলেও তিনি নিয়মিত সদস্য। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলার পর ব্রাত্য হয়ে পড়েন এই দলে। এরপর টেস্ট দলে রিয়াদকে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রচুর আলোচনা-সমালোচনা হয়। জিম্বাবুয়ে সফরের টেস্ট দলেও ছিলেন না রিয়াদ। মূল দল ঘোষণার ২ দিন পর অন্তর্ভুক্ত করা হয় রিয়াদকে।
দীর্ঘ ১৭ মাস পর হারারে টেস্টে একাদশে সুযোগ পেয়ে রিয়াদই হয়ে ওঠেন ব্যাটিং অর্ডারের ত্রাতা। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দল পড়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রিয়াদ খেলেন ১৫০ রানের অপরাজিত ইনিংস। তাসকিন আহমেদের সাথে ১৯১ রানের রেকর্ড গড়েন ৯ম উইকেটে, যা দলকে এনে দেয় ৪৬৮ রানের পুঁজি।
এই ইনিংস দিয়ে নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করেন রিয়াদ। তাকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেওয়া যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না, সেই বার্তাই যেন দিয়েছে তার ব্যাট। তবে ম্যাচ চলাকালেই রিয়াদের অবসরের সিদ্ধান্তে যেন বিষাদের ছায়া পড়েছে। যদিও রিয়াদের পক্ষ থেকে এখনও অবসরের চূড়ান্ত বা আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা আসেনি। বিসিবির আহ্বানে শেষপর্যন্ত রিয়াদ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন কি না, তাই এখন দেখার বিষয়।
এনএস/