রাসেল-স্টার্ক নাটকীয় দ্বৈরথে জিতল অস্ট্রেলিয়া
প্রকাশিত : ১০:২১, ১৫ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ১০:৩৯, ১৫ জুলাই ২০২১
আন্দ্রে রাসেল ও মিচেল স্টার্ক
১৯০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে সিমন্স ও লুইস ঝড়ে জয়ের পথেই ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৬তম ওভারে দুই বলে দুটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অজিদের হাতে এনে দেন মিচেল মার্শ। পরপর ৪টি ছক্কা হাঁকিয়ে খেলা জমিয়ে তোলেন অ্যালেন। তবে রাসেল-স্টার্কের উত্তেজনা ছড়ানো দ্বৈরথে শেষ হাসি হাসে অজিরাই। মাত্র ৪ রানের জয়ে হোয়াইটওয়াশও এড়ালো ফিঞ্চের দল।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে জিতে ইতোমধ্যে সিরিজ নিজেদের করে নিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দুই ম্যাচে তাই বিশ্রাম দিয়েছে আগের দুই ম্যাচের সেরা ম্যাকয় ও হেটমেয়ারকে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে চতুর্থ ম্যাচে ১৮৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোরই গড়ে অজিরা।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায় ড্যারেন স্যামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া এ ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারালেও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মাত্র ৫৮ বলে ১১৪ রান তুলে বড় স্কোর গড়ারই ইঙ্গিত দেন অ্যারন ফিঞ্চ ও মিশেল মার্শ। তবে তাদের সেই আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে মাত্র ৬৩ রানের বিনিময়ে পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের লাগাম টেনে ধরে ক্যারিবীয়রা।
তবুও শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় পুঁজি গড়তে সমর্থ হয় সফরকারীরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৫ রান করেন মিচেল মার্শ। তার ৪৪ বলের টর্ণেডো ইনিংসে ছিল ছয়টি বিশাল ছক্কার সঙ্গে চারটি চারের মার। ফিফটি করেন ফিঞ্চও, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। অধিনায়কের ৩৭ বলের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল পাঁচটি চারের সঙ্গে তিনটি ছক্কার মার। এছাড়া তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২ রান আসে ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের ব্যাট থেকে।
উইন্ডিজের পক্ষে এদিনও সফল বোলার ছিলেন যথারীতি হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র। চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন এই স্পিনার। এ নিয়ে চার ম্যাচে ১১টি উইকেট ঝুলিতে পুরলেন জুনিয়র ওয়ালশ। এছাড়া ওশানে থমাস, আন্দ্রে রাসেল ও ফ্যাবিয়ান অ্যালেন নেন একটি করে উইকেট।
১৯০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা যেমন হওয়া উচিৎ ঠিক তেমনটাই করে উইন্ডিজ। লেন্ডল সিমন্স ও এভিন লুইসের ব্যাটিং ঝড়ে পঞ্চম ওভার শেষ হওয়ার আগেই বোর্ডে তুলে ফেলে ৬২ রান। এসময়ে চারটি চার ও দুটি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ১৩ বলে ৩১ রান তুলে জাম্পার বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন লুইস।
বাঁহাতি এই মারকুটের বিদায়ে ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেননি আগের ম্যাচের নায়ক দ্য ইউনিভার্সাল বস ক্রিস গেইল। তিন বলে মাত্র ১ রান করে মার্শকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন গেইল। জাম্পার দ্বিতীয় শিকার হয়ে মাত্র ৬ রান করে ফেরেন হেটমেয়ারের জায়গায় নামা ফ্লেচার। যাতে ৯৭ রানেই তিন উইকেট খুইয়ে বসে বড় রান তাড়া করতে নামা ক্যারিবীয়রা।
যদিও এতে তেমন কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয় দানবীয় এই ব্যাটিং লাইনআপে। কেননা, তখনও যে ক্রিজে ছিলেন সিমন্স ও ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। যাদের ব্যাটিং তাণ্ডবে নিমিষেই তছনছ হয়ে যায় যে কোনও দলের বোলিং লাইন। এই জুটিতেই বড় ওই লক্ষ্যে ছুটছিল উইন্ডিজ, মাত্র ২৮ বলে ফিফটি পূরণ করে নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহকেও বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন সিমন্স।
যাতে ১৫ ওভারেই ১৩২ রান তুলে ফেলে স্বাগতিকরা। জয়ের জন্য তখন তাদের দরকার ছিল ৩০ বলে ৫৮ রান। হাতে ছিল ৭টি উইকেট এবং ক্রিজে সেট দুই ব্যাটসম্যান। এমনই অবস্থায় জোড়া আঘাত হেনে মুহূর্তেই ম্যাচেই নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেন মিচেল মার্শ। পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান ও সিমন্সকে সাজঘরে ফেরান ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালানো এই অজি অলরাউণ্ডার।
পুরান ১৫ বলে ১৬ রান করে এবং সিমন্স ৪৮ বলে ৭২ রান করে ফেরেন সীমানায় ধরা পড়ে। ক্যারীবিয় ওপেনারের এই ইনিংসে ছিল ১০টি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কার মার। এ দুজনের বিদায়ে মুহূর্তেই ১৩২/৩ থেকে ১৩২/৫ হয়ে যায় উইন্ডিজের স্কোর। ম্যাচ হেলে পড়ে অজিদের দিকেই। তবে নাটকীয়তার তখনও যে বাকী ছিল অনেক কিছুই!
মার্শকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করা ফ্যাবিয়েন অ্যালেন দেখালেন আরেক ক্যারিবীয় শো। ওই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে মাত্র ১টি নিতে পারলে শেষ চার ওভারে উইন্ডিজের দরকার পড়ে ৫৭ রান। ১৭তম ওভারে রাসেলের এক ছক্কাসহ ১০ রান আসলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ৪৭ রান। স্টার্কের করা ১৮তম ওভারে অ্যালেন দুটি চার মারলে আসে ১১ রান। ফলে ১২ বলে রাসেলদের দরকার হয় ৩৬ রান।
ম্যাচ তখন ফিফটি ফিফটি- এমনটাই বলা যায়। এ অবস্থায় পরপর চার বলে চারটি ছক্কা হাঁকিয়ে মোট ২৫টি রান তুলে নেন অ্যালেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তা উপভোগ করতে থাকেন রাসেল ও অজি ফিল্ডাররা। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচকে সহজ করে দিয়ে স্পিনিং অলরাউন্ডার ফেরেন মাত্র ১৪ বলে ২৯ রান করে। যাতে অজিদের বিপক্ষে টানা চার জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে উইন্ডিজের প্রয়োজন মাত্র ১১ রান।
কিন্তু এতগুলো রান তুলেও মাত্র ওই ১১টি রানই যে বড্ড বেশি হয়ে যায় রাসেলের জন্য! শেষ ওভারে এসে রাসেলের বাঁ পায়ের দুর্বলতার পুরো ফায়দা হাসিল করেন পুরনো শত্রু স্টার্ক। পরপর পাঁচটি বলই ইয়র্কার মারেন রাসেলের লেগ স্ট্যাম্প বরাবর। যা মোকাবেল করতে গিয়ে তো একবার হুমড়ি খেয়েই ভূলুণ্ঠিত হন ব্যাটিং দানব আন্দ্রে রাসেল, বাকী চার বলে সিঙ্গেল হলেও রাসেল তা নেননি অপর প্রান্তে হেইডেন ওয়ালশ থাকায়।
যাতে ম্যাচ বেরিয়ে যায় হাত ফসকে। শেষ বলটি স্লটে পেয়ে ছক্কা হাঁকালেও স্টার্কের সঙ্গে দ্বৈরথে হেরে ব্যর্থ মনোরথে মাঠ ছাড়তে হয় রাসেলকে। অন্যদিকে, মাত্র ৪ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে (৩-১ ব্যবধান) হোয়াইটওয়াশ এড়ালো ফিঞ্চের দল। তিন ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানো এ ম্যাচের নায়ক যে মিচেল মার্শ- তাতে কারো সন্দেহ নেই।
সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি হবে ১৭ জুলাই বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে ৫টায়, ড্যারেন স্যামি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এরপর তিনটি ওয়ানডে খেলে সরাসরি বাংলাদেশ সফরে আসবে ফিঞ্চ বাহিনী।
এনএস//