অনভিজ্ঞ জিম্বাবুয়ের লক্ষ্য এখন সিরিজ জয়
প্রকাশিত : ১৩:১৫, ২৪ জুলাই ২০২১
সিকান্দার রাজা
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৩ রানের দুর্দান্ত এক জয় পাওয়ার পর জিম্বাবুয়ের এই তরুণ দলকে নিয়ে রীতিমত গর্ববোধ করছেন অধিনায়ক সিকান্দার রাজা। তার কারণও আছে বটে। একমাত্র টেস্ট, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এবং এই টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে টানা হারের পর সফরে এটাই যে স্বাগতিকদের প্রথম জয়!
আপ-ডাউন ফর্মের জন্য পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ের জন্য এটি একটি দলীয় সাফল্যই বটে। এই দলটিতে ৪১টি টি-টোয়েন্টি খেলা রাজা বাদে ২০টির বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন কেবল রায়ান বার্ল এবং টেন্ডাই চাতারাই। অর্থাৎ দলের সদস্যদের অধিকাংশই তরুণ, যারা এই সফরে বা এই বছরের শুরুর দিকেই অভিষিক্ত হয়েছেন। এমনকি এতটা অনভিজ্ঞতার পরেও চলমান সফরের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকবারই চাপে ফেলে দিতে সক্ষম হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে ইএসপিএনক্রিকইনফোকে রাজা বলেন, "দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে আমরা প্রায় জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম, শেষ ওভারে নিয়ে গিয়েছিলাম ম্যাচ দুটি এবং প্রথম টি-টোয়েন্টিটাও আরও একটি ক্লোজ ম্যাচ ছিল।"
২৩ রানের জয় নিয়ে সন্তুষ্ট জিম্বাবুয়ের টি-টোয়েন্টি ক্যাপ্টেন বলেন, "আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম এবং প্রার্থনা করতাম যে, আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াব। আসলে কে কীভাবে নিজের নার্ভকে বেশি সময় ধরে রাখতে পারে- এটাই ছিল ব্যাপার। আমি মনে করি, দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা আজ দুর্দান্ত খেলেছি এবং টি-টোয়েন্টিতে ২৩ রান একটি বড় ব্যবধান। এটি একটি দুর্দান্ত দাপুটে জয়।"
তরুণদের খেলার ব্যাপারে স্বাধীনতা দিতে হবে উল্লেখ করে রাজা বলেন, "আপনাকে তরুণদের নিজের মতো করে খেলার অনুমতি দিতে হবে এবং এটা করার সময় তারাও ভুল করবে। তবে যখন কেউ ব্যাটিং বা বোলিংয়ের পরিকল্পনা থেকে সরে যাচ্ছে বলে মনে হবে, তখনই আপনাকে তা কভার করার চেষ্টা করতে হবে।"
২৩ রানের জয়ের এই ম্যাচে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন ওপেনার ওয়েসলি মাধেভেরে। ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যাতে ভর করে ৬ উইকেটে ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় জিম্বাবুয়ে।
এ বিষয়ে রাজা মনে করেন, ইনিংসের ১৮তম ওভার অবধি মাধেভেরের ব্যাটিংটা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ২১ রানে ২৬ রান করা ডিওন মায়ার্স এবং ১৯ রানে ৩৪ করা রায়ান বার্লের অবদানও ছিল অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, "ওয়েসের ইনিংস দুর্দান্ত ছিল। তার সেরা অবদানটি হলো তিনি শেষ কয়েক ওভারেও ভালো ব্যাটিং করেন। এছাড়াও আরও কয়েকটি পারফরম্যান্স রয়েছে, যা অবশ্যই নজরে পড়ে না।
সিকান্দার রাজা আরও বলেন, "প্রথম দিকে দুটি উইকেটের পতনের পরে দ্বাদশ ওভার অবধি তরুণ ডিওন মায়ার্স যেভাবে ব্যাটিং করেছিলেন তা দুর্দান্ত ছিল। আর ইনিংসের শেষ দিকে রায়ান বার্লের পাওয়ার-হিট দেখিয়েছে যে, তিনি কতটা মূল্যবান! মূলত এগুলোই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।"
পরে জিম্বাবুয়ে যখন বোলিং করতে নামে, তখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখার কাজটি সফলভাবেই পালন করেন ব্লেসিং মুজারাবানি এবং টেন্ডাই চাতারা। যার ফলশ্রুতিতে তিনটি করে উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা এবং লুক জংওয়ে। যা ছিল জিম্বাবুয়ের আরেকটি কার্যকর দলীয় প্রচেষ্টা।
রাজা বলেন, "শুরুতেই ব্লেসিং দুটি উইকেট নিয়েছিল। যা বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। পরে আফিফ এবং শামীম যখন ঘুরে দাঁড়িয়ে হুমকি হয়ে উঠেছিলেন, তখনই মূল্যবান উইকেটটি নিয়েছিলেন চাতারা। আর লুক ও ওয়েলিংটন নিয়েছিল তিনটি করে উইকেট। সবাই সত্যিই ভালো বোলিং করেছে।"
দলের তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়াই একটি তরুণ দলের নেতৃত্ব দেয়া রাজা বলছিলেন, এই স্তরের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করাটা আসলে তেমন কঠিন ছিল না। ফলাফলও এসেছে, তবে লক্ষ্যটা এখন সিরিজ জয়ের।
তিনি বলেন, "অধিনায়ক হিসাবে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারব এবং আতঙ্কিত না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি সঠিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়ার দুর্দান্ত সুযোগ পাব। আসলে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য খুব বেশি কিছুর দরকার পড়ে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়ের জন্য সকলেই ক্ষুধার্ত। আগের ম্যাচগুলোতে তীরে এসে তরী ডুবলেও আমরা তাই বিশ্বাস হারাইনি। লক্ষ্য এখন আরও সামনে।"
এনএস//