স্মার্ট ক্রিকেট, সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই আসবে নিয়মিত সাফল্য
প্রকাশিত : ১২:২৮, ২৬ জুলাই ২০২১
জয়সূচক শট খেলার পর অভিবাদন গ্রহণ করছেন শামীম হোসাইন
১৯৪ তথা দুইশ রান তাড়া করে জেতা যে কোনও দলের বিপক্ষে, যে কোনও উইকেটেই সহজ কথা নয়। তবে সেটাই করে দেখিয়েছে টাইগাররা। প্রতিপক্ষ যদিও জিম্বাবুয়ে ছিল, তবুও এই জয়টি দরকার ছিল আত্মবিশ্বাসের জন্য।
সিরিজ জয়টা অবশ্যই আরও ক্লিনিক্যাল হতে পারত। তবে শেষ পর্যন্ত যেটা হয়েছে, খুব একটা খারাপ হয়নি। এরকম ব্যাটিং উইকেটে আগের ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়া এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৯৪ তাড়া করতে না পারলে দলের বিশ্বাসে চোট লাগত গভীরভাবেই। কিন্তু এমন জয়ে নিজেদের সামর্থ নিয়ে যে সংশয়টা ছিল তা খানিকটা হলেও কমবে, আর সাহস বাড়বে ঢের।
টি-টোয়েন্টি ফর্মেটে বাংলাদেশ অবশ্যই খুব ভালো দল নয়। খুব দ্রুত নাটকীয় উন্নতির আশাও নেই। আমাদের বিপিএল নিকট ভবিষ্যতেও পিএসএল-বিগ ব্যাশের মতো হয়ে উঠবে না, পোলার্ড-রাসেলদের মতো পেশিওয়ালাও পাব না, ভারতের মতো ভুরিভুরি কার্যকর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার সহসাই মিলবে না। আমাদের জিততে হলে তাই এরকম সম্মিলিত প্রচেষ্টাই লাগবে। খেলতে হবে স্মার্ট ক্রিকেট। উন্নতি করতে হলে, এরকম ছোট ছোট পদক্ষেপেই এগোতে হবে। তাহলেই নিয়মিত মিলবে এরকম সাফল্য।
এবারের জিম্বাবুয়ে সফরে সবকটি সিরিজ জিতলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে বড় প্রাপ্তি সৌম্যর ব্যাটে-বলে কার্যকারিতা ও শামীমের ঝলক। ক্যারিয়ারের প্রথম ৪৮টি টি-টোয়েন্টিতে সৌম্যের ফিফটি ছিল মাত্র একটি, এই ফর্মেটে একজন ওপেনারের ক্ষেত্রে এমন পরিসংখ্যান ভাবা যায়! তবে আশার কথা হলো- সবশেষ আট ম্যাচেই সেই সৌম্য ফিফটি হাঁকিয়েছেন চারটি।
এই চার ফিফটির একটি এসেছে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে, ২৭ বলে ৫১ রানের টর্ণেডো ইনিংসই বটে। বাকি তিনটিই অবশ্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবুও এটা তার জন্য দারুণ। আগে তো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও এমন ধারাবাহিক ছিলেন না! বিশেষ করে রোববারের ইনিংসটিই দেখুন, টাইমিং ঠিকঠাক হচ্ছিল না, বল চলে যাচ্ছিল সরাসরি ফিল্ডারদের কাছে।
লাইফও পেয়েছেন গোটা তিনেক। হাঁটুতে ব্যথাও পেয়েছেন, তবুও উইকেট ছুঁড়ে না দিয়ে একটা উল্লেখযোগ্য স্কোর গড়েছেন, যা দলের জন্য খুবই জরুরি ছিল। এর আগে তার বোলিংই এই সিরিজে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। এ থেকে সৌম্য নিজে যেমন আরও আত্মবিশ্বাসী হবেন, তেমনি দলও সাহস পাবে তার ওপর আরেকটু বেশি ভরসা করার।
আর শামীম পাটোয়ারী! এই সফরের আগে অনেকেই তাকে টি-টোয়েন্টি দলভুক্ত করার জোরালো আওয়াজ তোলেন। দল ঘোষণার পরই দেখা গেল সেই আবেদনের প্রতিচ্ছবি। আর ঠিক যে কারণে তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে, মাঠে ঠিক সেভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছেন শামীম, ঠিক যেভাবে তাকে দেখা গেছে ঘরোয়া ক্রিকেট ও এইচপিতে।
তাঁর ব্যাটিং স্পিডের কথা উঠেছিল বারবার। চাবুকের মতো ব্যাট চালান এই তরুণ। সেটারও দেখা মিলেছে এই সিরিজে। তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির কথা শোনা গিয়েছিল। বোলিং লেংথ আগেই পড়তে পারেন তিনি। এই সিরিজে সেটাও দেখেছেন সবাই। তেমনি মিডিয়ায় এসেছিল তার রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, প্রবল সাহস ও ভয়ডরহীন মানসিকতার কথা। প্রাণবন্ত, চনমনে অ্যাটিটিউডের কথা। সে সবেরও দেখা মিলে মাত্র দুটি ম্যাচেই।
তবে, অনেক সময় বাইরের বল ক্রস খেলে ফেলেন, এটাই তাঁর দুর্বলতা। জোর করে শট বানাতে চান। সেটাও দেখতে পেয়েছে সবাই। বলা হয়েছিল, তার ফিল্ডিং বাংলাদেশের বাস্তবতায় অবিশ্বাস্য। যা খানিকটা প্রমাণ মিলেছে তিনটি ম্যাচেই। তার বোলিংয়ের কথাও উঠে এসেছিল। এবারে খুব একটা দেখানোর সুযোগ না মিললেও সামনে সুযোগ পেলে নিশ্চয়ই তা দেখাবেন। জানা গেছিলো যে তার ভেতরে মসলা আছে। এই সিরিজে তিনি ঝাঁঝটা বোঝাতে পেরেছেন।
আমরা অনেক ভালো ব্যাটসম্যান, অনেক প্রতিভা পেলেও এই নির্দিষ্ট ঘরানার ক্রিকেটের জন্য খুব একটা কার্যকর ব্যাটসম্যান পাই না। এ ক্ষেত্রে শামীম হোসাইন নিঃসন্দেহে বড় এক সম্পদের নাম। আরও কঠিন প্রতিপক্ষ আসবে, চ্যালেঞ্জ আসবে, পরীক্ষা হবে। সেসবের জন্য তাঁকে তৈরি করার দায়িত্ব টিম ম্যানেজমেন্টের, বোর্ডের, সিস্টেমের এবং তার নিজের। তা না পারলে যে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। যতটা তার নিজের, তার থেকেও বেশি দেশের ক্রিকেটের।
তাইতো ১৬ কোটি ক্রিকেট ভক্তের আশা, এই শামীমসহ মেহেদি, আফিফ, সোহানরা যেন এই সংস্করণে পর্যাপ্ত সুযোগ পান এবং শরিফুলকে যেন খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা হয়। তাহলেই মিলবে আসন্ন ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো কিছু ফল।
এনএস//