অস্ট্রেলিয়া, অন্যায় ও অসন্তোষ
প্রকাশিত : ১১:০৫, ৩০ জুলাই ২০২১
মুশফিকুর রহিম
অস্ট্রেলিয়া, অন্যায় ও অসন্তোষ- এই তিনটি শব্দই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। প্রথম শব্দটার ব্যাখ্যাটা সহজ। বাংলাদেশ সফরে চলে এসেছে অস্ট্রেলিয়া দল, খেলবে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তবে তা মাত্র ৭ দিনে এবং এই সিরিজে নেই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। মূলত সেখান থেকেই উদ্ভব বাকি দু’টি শব্দের। মুশফিকের সাথে অন্যায় হয়েছে- এমনটাই মনে করছেন ভক্তরা। আর এ জন্যই সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ।
সদ্য জিম্বাবুয়ে সফর থেকে ফেরা বাংলাদেশ দলের এক ক্রিকেটার মনে করছেন, অস্ট্রেলিয়ার সাথে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মুশফিকুর রহিমের সাথে কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় যেটা করা হয়েছে সেটা অন্যায়। মূলত অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে গিয়েই ঘরের মাঠের এই সিরিজে অভিজ্ঞ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট শেষে মা-বাবার অসুস্থতার কারণে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলেই দেশে ফিরে এসেছিলেন মুশফিক। আর অস্ট্রেলিয়ার শর্ত ছিল জিম্বাবুয়ে সফরে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকা ক্রিকেটাররাই শুধু অস্ট্রেলিয়া সিরিজে খেলতে পারবেন।
যদি বাইরে থাকা কেউ খেলতে চায় তবে বাধ্যতামূলক দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থেকে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করতে হবে। মুশফিক দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি। গতকাল জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে হোটেলে তিন দিনের কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সেখানেও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি তাকে।
অথচ গতকালই হারারে থেকে জোহানেসবার্গ, দোহা- তিনটি বিমানবন্দর মাড়িয়ে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে চড়ে তবেই ঢাকায় পা রেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। এটা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ঐ ক্রিকেটার। তাঁর দাবি, তাদের সমস্য না হলে মুশফিকের ক্ষেত্রে সমস্য হলো কেন? ক্রিকেটভিত্তিক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে তিনি জানিয়েছেন, মুশফিককে কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করতে না দেয়াটা ঠিক হয়নি।
তিনি বলেন, ‘মুশফিকের সাথে যা ঘটেছে সেটা অন্যায়। আমরা একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে করে তিনটি বিমানবন্দর মাড়িয়ে তবেই এসেছি। এরপরেও মুশফিককে কেন খেলতে দেয়া হলো না তা আমার বুঝে আসছে না। পারিবারিক সমস্যার জন্য সে সফরের মাঝামাঝি দেশে ফিরে এসেছিল। দুই বা তিন দিন পর মুশফিককে কোয়ারেন্টাইনে প্রবেশ করতে না দেয়াটা ঠিক নয়।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে আগেই ছুটি নিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। ওয়ানডে সিরিজ শেষেই দেশে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে ভেবেই নিজের সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু মা-বাবার অসুস্থতার খবর শুনে আবার সিদ্বান্ত পরিবর্তন করে দেশে ফিরে আসতে হয়েছিল তাকে। এরপর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) সাথে মুশফিককে খেলানোর বিষয়ে আলোচনা করে বিসিবি। কিন্তু বিসিবির সে আবেদনে সাড়া দেয়নি সিএ।
বিসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিএ এবং বিসিবির মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী বাইরে থেকে কারও জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করার সুযোগ নেই। আমাদের কেবল জৈব সুরক্ষা বলয়ের ভেতর থাকা ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলতে হবে। আমার মনে হয় নির্বাচকরা এমন পরিস্থিতিতে সেরাদেরই বেছে নিয়েছে।’
এদিকে চোটের কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সিরিজ থেকে আগেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। এছাড়া পারিবারিক কারণে দুই দিন আগেই জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে আসা লিটন দাসও রয়েছেন জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে। আর বাবার মৃত্যুতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলে জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরেছিলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লবও। তিনিও রয়েছেন জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে।
এই চার ক্রিকেটার না ছিটকে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের ২০ সদস্যের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড এখন ১৭ সদস্যের হয়েছে। হালকা চোট রয়েছে সাকিব আল হাসানেরও। তাকে নিয়েও রয়েছে উদ্বেগ। চোট রয়েছে সৌম্য সরকারেরও।
অন্যদিকে, কোয়ারেন্টাইন জটিলতায় ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস) নিয়েও তৈরি হয়েছে জটিলতা। ডিআরএসের টেকনিশিয়ানরা সাধারণত ম্যাচ অফিসিয়ালদের সাথে একই রুমে থাকেন। ম্যাচ অফিসিয়ালরা দশ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও টেকনিশিয়ানরা এখনও জৈব সুরক্ষা বলয়ে প্রবেশ করেননি। তবে হাতে এখনও সময় থাকাতে ডিআরএস নিয়ে আশাবাদী বিসিবির ঐ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘টেকনিশিয়ানের এখনও সময় আছে হাতে। তাকে তিন দিনের কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। তবে সিএর শর্ত রয়েছে যে, কেউ দশ দিনের কোয়ারেন্টাইন না থাকে তবে সে যেনেও কারও কাছা কাছি না আসতে পারে। এই ব্যক্তি যদি কাজটি দূর থেকে পরিচালনা করতে পারেন তবে সিরিজে ডিআরএস থাকতে পারে।’
অজিদের সঙ্গে এই সিরিজের জন্য অবশ্য বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে বিসিবি। ম্যাচ অফিসিয়াল, হোটেল স্টাফ, যোগাযোগ এবং গ্রাউন্ড স্টাফদের জন্য দুটি আলাদা কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন না করে সরাসরি হোটেলে এসে উঠেছে। হোটেলেই তাদের পাসপোর্টের কাজ শেষ করে তা আবার ফেরত দেওয়া হবে।
অস্ট্রেলিয়া শর্ত দিয়েছিল প্রতিটা ম্যাচই একই ভেন্যুতে আয়োজন করতে হবে। তাদের শর্ত অনুযায়ী পাঁচ ম্যাচই মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেটারদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন দেখেই সব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সিএ কেবল আমাদের শর্ত দিয়েছে, আর আমরা শুধু সেসব শর্ত অনুযায়ীই সব করেছি- তা কিন্তু নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এসেছে। এটাতেই বোঝা যায় যে তারা খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যকে কতটা গুরুত্ব দেয়। আমরা কেবল তাদের কিছু অতিরিক্ত প্রয়োজন পূরণ করছি।’
তবে এতো কিছুর পরেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ দেশের করোনা পরিস্থিতি এখন রীতিমত উদ্বেগজনক। গত দুই দিনে দেশে করোনায় মৃত্যু বরণ করেছে প্রায় ৫শ জন (২৫৮ ও ২৩৯) এবং আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন সাড়ে ৩১ হাজার জন।
যদিও এই সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। কারণ সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে নিউজিল্যান্ডের। এরপর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ও পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে আসার কথা রয়েছে ইংল্যান্ডের। যা নির্ভর করছে এই সিরিজের সার্বিক সাফল্যের ওপর।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি স্কোয়াড: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, নুরুল হাসান (উইকেটকিপার), তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসাইন, রুবেল হোসাইন, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসাইন, সৌম্য সরকার, শামীম হোসাইন পাটোয়ারী, নাসুম আহমেদ, শেখ মেহেদী হাসান।
এনএস//