ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ নভেম্বর ২০২৪

তেত্রিশেই অবসরে নেপাল ক্রিকেটের স্বপ্ন-সারথী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২০, ৩ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৩:২২, ৩ আগস্ট ২০২১

পরশ খড়কা

পরশ খড়কা

আইসিসির সহযোগী সদস্য নেপাল ক্রিকেটের স্বপ্ন-সারথি তিনি। শুরুটা হয়েছিল বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই, এরপর পা রাখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। জাতীয় দলের নেতৃত্ব ও দেশের ক্রিকেটকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলা। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ পথচলায় পরশ খড়কা হয়ে উঠেছিলেন নেপাল ক্রিকেটের প্রতীক। তবে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন এই অলরাউন্ডার।

নেপালের ক্রিকেটে অনেকটা আচমকাই এলো পরশের অবসরের এই সিদ্ধান্ত। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি জানান, কোনও সংশয় ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। “চূড়ান্ত স্বচ্ছতা, শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।”

খড়কা আরও বলেন, “নেপালের হয়ে খেলতে পারাটা ছিল আমার সবচেয়ে বড় অর্জন এবং ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে যাত্রা শুরুর পর থেকে এই ১৮ বছরে সবসময় পাশে থাকার জন্য সব কোচ, সতীর্থ, সমর্থক, অংশীদারী অন্যরা, বন্ধু ও পরিবারের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”

বয়স যদিও খুব বেশি হয়নি, কেবল ৩৩। তবে পরশের মতে, সরে দাঁড়ানোর সময় হয়ে গেছে এখনই। “কেন এখন? কারণ এখনই সময়। ক্রিকেটার হিসেবে আমার হৃদয়, রক্ত ও আত্মা দিয়ে খেলেছি আমি এবং সবসময় স্বপ্ন দেখেছি দেশের হয়ে আরও ভালো কিছু অর্জনের।”

নেপালের হয়ে মাত্র ১০টি ওয়ানডে খেলে ৩৫ গড়ে পরশের রান ৩১৫। মিডিয়াম পেস বোলিংয়ে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। অন্যদিকে, ৩৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২৭.৫৫ গড়ে রান করেছেন ৭৯৯, ১২৮.০৪ স্ট্রাইক রেটে। উইকেট নিয়েছেন ৮টি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেপালের প্রথম অধিনায়ক তিনি। এছাড়াও নেপালের প্রথম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান, প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান ও ওয়ানডেতে ৪ উইকেট শিকারি প্রথম বোলারও তিনিই।

টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে নেপালের প্রথম জয় আসে পরশের নেতৃত্বেই। দুটি জয়েই শুধু নেতৃত্ব নয়, ব্যাটে বলে ছিল তার উল্লেখযোগ্য অবদান। প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে ৪১ রান করার পর নিয়েছিলেন ১টি উইকেট। ওয়ানডে জয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫১ রান করার পাশাপাশি শিকার ১ উইকেট।

২০১৯ সালে নেপালের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়েও ছিলেন অধিনায়ক। সিরিজ জয় নিশ্চিত করার ম্যাচে ২ উইকেট নিয়ে ও সেঞ্চুরি করে তিনিই হন ম্যাচ সেরা। এছাড়াও দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাটে-বলে ভূমিকা রেখেছেন অসংখ্যবার। বিশেষ করে স্নায়ুর চাপের মুহূর্তে বল হাতে বরাবর এগিয়ে আসতেন নিজেই।

তবে নেপালের ক্রিকেটে পরশের অবদান এসব রেকর্ড-পরিসংখ্যানের চেয়েও বেশি। তিনটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেপালের প্রতিনিধিত্ব করেন- ২০০৪, ২০০৬ ও ২০০৮ আসরে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেলেন। জাতীয় দলের নেতৃত্বের ভার পেয়ে যান কেবল ২১ বছর বয়সেই।

২০১০ সালে আইসিসি ক্রিকেট লিগ ডিভিশন ৫ থেকে নেপাল ক্রিকেটের তরতর করে এগিয়ে চলা পরশের নেতৃত্বেই। বাংলাদেশে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে পরশের অধিনায়কত্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু নেপালের। ২০১৮ সালে নেপালের ওয়ানডে মর্যাদাও প্রাপ্তি তার নেতৃত্বেই।

পরশকেই ধরে নেয়া হয় নেপালের সোনালী প্রজন্মের নেতা। তার গড়ে দেয়া ভিতে দাঁড়িয়েই এগিয়ে চলছে নেপাল ক্রিকেট। দেশটির লেগ স্পিনার সন্দিপ লামিছানে এখন তো বিশ্বজুড়ে খেলছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে।

দেশের ক্রিকেটকে হৃদয়ে ধারণ করতেন বলেই হয়তো বোর্ডের নানা বিতর্কিত পদক্ষেপের প্রতিবাদে তিনি সোচ্চার হন বরাবর। ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে ২০১৬ সালে নেপালকে বহিষ্কার করে আইসিসি। পরে ২০১৯ সালে শর্তসাপেক্ষে তুলে নেওয়া হয় সে বহিরাষ্কারাদেশ। 

তবে এর পরপরই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন পরশ। এবার তো ছেড়ে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাও। তবে বিদায় বেলায়ও বললেন নেপাল ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের কথা-

“আমার চূড়ান্ত স্বপ্ন হলো- নেপালে খুব ভালো ক্রিকেটিং সিস্টেম গড়ে তোলা, গত দুই দশক ধরে সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবস্থার উন্নতি করতে হলে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ও আশপাশের সবাইকে সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, সত্যিকারের স্বদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা থাকলে আমরা পারব।”

পরশ আরও বলেন, “ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অসাধারণ এক ভ্রমণের এখানেই সমাপ্তি। তবে আমার দেশের ক্রিকেট স্বপ্নের কেবলই শুরু। ধন্যবাদ।”

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি