ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ওপেনিং: সমাধানহীন এক মহাসমস্যা

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১৫:৫৫, ২৬ আগস্ট ২০২১ | আপডেট: ১৫:৫৭, ২৬ আগস্ট ২০২১

লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম

লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ নাঈম

দেশের ক্রিকেটে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ওপেনিং সমস্যা। দলের ওপেনিং নিয়ে সব ফরম্যাটেই সমস্যায় ভোগে বাংলাদেশ, তবে টি-টোয়েন্টিতে অবস্থাটা একেবারেই দিশেহারা। কারো ওপরই যেন ভরসা করা যায় না! দেশসেরা ওপেনার যে সব ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সেই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপ দলে বিবেচনা করায় শান্ত, মিঠুনদের নিয়ে করা হচ্ছে ট্রল! এতেই বুঝা যায়, ওপেনিং স্লটটা বাংলাদেশ দলের জন্য এক মহা বিষফোঁড়া!

গত ১৫ বছর ধরে দেশকে সর্বোচ্চ সার্ভিস দেয়ার পর একটা খেলোয়াড়কে এতটা অসম্মান করা কি আদৌ উচিৎ? তামিম অবশ্য নিজেই বলেছেন যে, তিনি একটা ফরম্যাট থেকে অবসর নিবেন, কমবেশি আমরা সবাই জানি, সেই ফরম্যাটটি হলো টি-টোয়েন্টি। আসন্ন বিশ্বকাপটাই হয়তো তার শেষ মঞ্চ। হয়তো তাই বোর্ডও তাকে সুযোগটা দিচ্ছে।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে তামিমের গড় ১৩, আর স্ট্রাইক রেট ৯০-এর কাছাকাছি। বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ২৫ ম্যাচ খেলেছে। যার ২২ ম্যাচেই দুই ওপেনারের একজন ছিলেন তামিম। আর অন্যপ্রান্তে যারা সুযোগ পেয়েছিল তারা কে কি করেছে একবার দেখে আসি চলুন-

সৌম্য সরকার: তামিমের পর ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ ৭ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন সৌম্য সরকার। ৮৮.২৩ স্ট্রাইক রেট ও ১০.৭১ গড়ে মোট রান তার ৭৫, ভাবা যায়!

এনামুল হক বিজয়: তিনিও খেলেছেন বিশ্বকাপের ৭ ম্যাচে। ১১৮.৭০ স্ট্রাইক রেট ও ৩০.৬৬ গড়ে ১৮৪ রান করেছেন এনামুল হক। অনেকেই বলে থাকেন বিজয় নাকি বাংলাদেশ দলের বড় অপচয়। তবে বড় মঞ্চে এতো ভাল করার পর আরো সুযোগ প্রাপ্য ছিল তাঁর। দুর্ভাগ্যই বটে!

জুনায়েদ সিদ্দিকী: বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিংয়ে সেরা পারফরম্যান্সটা তারই! ৩ ম্যাচে ১৬৪.৪৭ স্ট্রাইক রেট ও ৪১.৬৬ গড়ে রান ১২৫টি, একরকম অবিশ্বাস্যই বটে! এরকম একজন প্লেয়ারকে হারানো সত্যিই প্যাথেটিক।

জিয়াউর রহমান: ৭৫ স্ট্রাইক রেট ও ৮ গড়ে মোটে ২৪টি রান করেছেন পাঁচটি দলের হয়ে পাঁচটি ম্যাচে ওপেনিং করা হার্ডহিটার খ্যাত জিয়াউর।

ইমরুল কায়েস: একটা সময় কেবল টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা পেলেও অভিজাত এই ফরম্যাটেও ব্রাত্য হন ইমরুল কায়েস। এর মাঝেও খেলেছেন বেশ কিছু শর্টার ভার্সনের ক্রিকেট। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র ২ ম্যাচে ওপেনিং করে রানের খাতাই খুলতে পারেন নি এই বঞ্চিত ক্রিকেটার।

জহুরুল ইসলাম অমি: বিশ্বকাপের মঞ্চে মাত্র ১টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন অমি। যাতে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন মাত্র ১৮টি রান।

এই হলো তামিমের সঙ্গী হওয়া ব্যাটারদের অবস্থা। ২৫ ম্যাচে সবমিলিয়ে ৪২৬ রান। অন্যদিকে তামিমের ২৩ ম্যাচে রান ৫১৪! একবার ভাবুন তো, এতটা ট্রল কি তামিমের প্রাপ্য!

হ্যা, জুনায়েদ সিদ্দিকী ও এনামুল হক হয়তো ভাল করেছিলেন, কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারায় হারিয়ে গেছেন। একটা ফরম্যাটে ভাল করলে সব ফরম্যাটে নামিয়ে দিয়ে হতশ্রী পারফর্ম করেই দল থেকে বাদ পড়েছেন! 

নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ক্রিকেট বোর্ডই তো বরাবরই এমনটা করে আসছে, আর আমরা দর্শকও বা কম কিসে? একটু খারাপ করলেই জিম্বাবুয়ে ম্যান, স্যার, লর্ড উপাধি দিয়ে বোর্ডকে উল্টো প্রেশার দিয়েছি বাদ দেয়ার!

জুনায়েদ সিদ্দিকীকে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস থাকলেও সামনে তাকালে কাদের দেখি- লিটন (যে এক ম্যাচ ভালো করে তো দশ ম্যাচ ঘুমিয়ে থাকে), সৌম্য (৮৮ স্ট্রাইক রেট ও ১০ গড়ের প্লেয়ার) অথবা নাঈম শেখ (সেট হওয়ার পর যে ব্যাটারের ডট সংখ্যা বেড়ে যায়)। এরাই তো তামিমের বিকল্প! তাই বোর্ড মন্দের ভালো তামিমকেই চয়েস করছে।

যারা তামিমের ম্যাচ খেলার স্বল্পতা ও ফিটনেস নিয়ে কথা বলছেন, উনারা কি ভুলে গেছেন, মূলপর্বে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে। ঐ তিন ম্যাচ দিয়েই তামিম নিজেকে ঝালিয়ে নিতে পারবেন ভালোভাবেই। 

নাকি ঐ ম্যাচগুলোতেও আপনারা রিস্ক নিতে ভয় পাচ্ছেন? ঐ তিন ম্যাচে তামিমকে ফর্মহীন কিংবা আনফিট দেখা গেলে তবেই তাকে বাদ দেয়ার কথা বলুন।

তবে যে যাই বলুন না কেন, এটাই হতে যাচ্ছে তামিমের শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০০৭-এর সেই নির্ভীক তামিম, যে নিজেকে উজাড় করে দিবে, জ্বলে উঠুক শেষবারের মতো। হয়তো এটি মুশফিক- রিয়াদেরও শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই প্রজন্ম যাওয়ার আগে সাঙ্গা, জয়াবর্ধনে ও দিলশানের মতো উঁচিয়ে ধরুক বিশ্বকাপ, আর লাল-সবুজের পতাকা!

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি