নাটকীয় রাতে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার রোনালদোই পর্তুগালের ত্রাতা
প্রকাশিত : ০৯:৫৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১০:০৩, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো
বিতর্ক, গোল, রেকর্ড ও শিরোনাম- এসবই যেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে সমার্থক। তবে ৩৬ বছরের রন যে এখনও যে কোনও দলের জন্য অপরিহার্য, তা আরও একবার প্রমাণ মিলল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে।
বুধবার মধ্যরাতে (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী) গোটা বিশ্বের নজর ছিল পর্তুগাল বনাম আয়ারল্যান্ড ম্যাচে, কারণটা অবশ্যই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এইদিনই আলি দাইয়ের রেকর্ড ভেঙে একচ্ছত্রভাবে সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলস্কোরার হওয়ার হাতছানি ছিল পর্তুগিজ অধিনায়কের সামনে।
খেলার প্রথমার্ধেই সেই মাইলফলক গড়ার ক্ষেত্রও ছিল প্রস্তুত। ১০ মিনিটের মাথায় পেনাল্টির সুযোগ পায় পর্তুগাল, তখনই রোনালদোর রেকর্ড গড়ার বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন একপ্রকার সবাই।
কিন্তু আইরিশ গোলরক্ষক বাজুনু কোটি কোটি মানুষের হৃদয় চুরমার করে রুখে দেন রোনালদোর সেই স্পট কিক। তবে বিতর্ক ছড়ায় এই পেনাল্টিকে ঘিরেই। বিতর্কিত এই পেনাল্টির সিদ্ধান্তে ভিএআর চেকের সময়ই পেনাল্টি স্পটে বল বসিয়ে মারার জন্য প্রস্তুতি নেন রোনালদো। তখনই আইরিশ ডিফেন্ডার ডারা ওশে সেই জায়গা থেকে বল সরিয়ে দেন। এরপরেই ক্ষুব্ধ রোনালদোকে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররকে চড় মারতে দেখা যায়। যার ফলে পর্তুগিজ তারকার বিপক্ষে লাল কার্ডের দাবি উঠলেও গোটা ঘটনার প্রতি বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত করেননি রেফারি।
যাইহোক, ওই পেনাল্টি থেকে তো গোল হয়-ই নি, বরং প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে পর্তুগাল। উপরন্তু, দুরন্ত হেডে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ঠিক আগে আইরিশদের এগিয়ে দেন জন ইগান। লুক্সেমবার্গের কাছে গত ম্যাচেই লজ্জার হারের পর সম্ভবত এই রাউন্ডের বাছাইপর্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর জয় থেকে এক মিনিট ও ইনজুরি টাইমের দূরত্ব ছিল আয়ারল্যান্ডের।
তবে দলে রোনালদোর মতো খেলোয়াড় থাকলে যে কোনও অসম্ভবকেও যে সম্ভব করা যায়! দলের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তেই তো মহাতারকাদের মাহাত্ম্য আরও বেশি করে চোখে পড়ে। ৮৯ মিনিটে গঞ্জালো গুয়েদেশের কাটব্যাকে পেনাল্টি বক্সে স্বভাবজাত পজ, লাফ এবং গোল।
মুহূর্তেই আইরিশদের হৃদয় ভঙ্গ করে নিজের কেরিয়ারের ১১০তম গোলটি উদযাপন করেন রোনালদো। আলি দাইয়ের সর্বকালীন গোলের রেকর্ড ভেঙে রচনা করেন ইতিহাস। কিন্তু রোনালদো যে ম্যাচ ড্র করে খুশি নন!
ইনজুরি টাইমের ষষ্ঠ মিনিটে ফের একবার উড়ন্ত বাজপাখির মতো ঝাঁপালেন তিনি। পরিমিত গতি, সঠিক দিশা ও অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তের গোলে জয় ছিনিয়ে নিলেন পর্তুগিজ মহাতারকা। রোনালদোর গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ালো ১১১-তে।
এদিনের সব শিরোনামেই রোনালদোর সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়া নিয়ে লেখা হবে ঠিকই, কিন্তু এই রাত দেখালো কেন রোনালদোরা বিশ্বের সবার থেকে আলাদা। কিভাবে একজন ৩৬ বছর বয়সী রেকর্ডের চূড়ায় বসেও স্রেফ অদম্য ইচ্ছাশক্তি, হার না মানা মনোভাব ও জয়ের অসম্ভব খিদের মাধ্যমে বারংবার অসম্ভবকে সম্ভব করে।
বুধবার রাত যদি কিছু প্রমাণ করে, তা হলো এখনও বিশ্ব ফুটবলকে রোনালদোর অনেক কিছু দেয়া বাকি, আরও অনেক নজির গড়ার লক্ষ্যে এখনও বদ্ধপরিকর পর্তুগালের মাদেইরা থেকে উঠে আসা সাধারণ ঘরের এক অসাধারণ ফুটবল তারকা।
এনএস//