ঢাকা, শনিবার   ০১ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

শুভ জন্মদিন বিধ্বংসী ওপেনার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১০, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১২:৪৮, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

সাঈদ আনোয়ার

সাঈদ আনোয়ার

Ekushey Television Ltd.

ব্যাটিং কিংবদন্তী সাঈদ আনোয়ারের ৫৩তম জন্মদিন আজ। সাঈদ আনোয়ারের জন্ম ১৯৬৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানের করাচিতে। তার বাবাও একজন ক্লাবস্তরের ক্রিকেটার ছিলেন। তবে তিনি ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নেননি। তিনি ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার।

সাঈদ আনোয়ার ছিলেন মূলত একজন উদ্বোধনী ব্যাটসমান, যিনি ১৯৮৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলছেন। তিনি ৫৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ১১টি শতকসহ ৪০৫২ রান সংগ্রহ করেন। আর ২৪৭টি ওয়ানডে খেলে সংগ্রহ করেন ৮৮২৪ রান, যার মধ্যে রয়েছে ২০টি শতক। যা পাকিস্তানি যে কোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।

মূলত রঙিন পোশাকের সাঈদ আনোয়ারই ছিলেন বেশি উজ্জ্বল। ওয়ানডেতে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। এই সংস্করণে ১৯৯৬ সালে ভারতের বিপক্ষে তার ১৯৪ রানের ইনিংসটিই ছিল ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের তৎকালীন বিশ্বরেকর্ড। যা টিকে ছিল ২০০৯ সাল পর্যন্ত।

ক্রিকেটার সাঈদ আনোয়ার ছিলেন পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ ওপেনারদের মধ্যে অন্যতম। তবে শুরুতে তার ক্রিকেটার হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বাবার মতো ইঞ্জিনিয়ারই হতে চেয়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন, লেখাপড়া শেষ করে আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটেই জড়িয়ে পড়েন কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া সাঈদ আনোয়ার।

সাঈদ আনোয়ার করাচির এনইডি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক করেছেন। বাবার কাজের জন্য তার শৈশব কেটেছে বিভিন্ন দেশে। ভাগ্যের সন্ধানে তার বাবা পাকিস্তান থেকে সপরিবারে ইরানের তেহরানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সৌদি আরব। তখন আনোয়ারকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল করাচিতে, দাদা-দাদির কাছে।

আর করাচিতেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি আনোয়ারের। তবে অনেকদিন পর্যন্ত তার ক্রিকেটার হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। স্নাতকের পর উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকা যাবেন বলে ভেবেছিলেন তিনি। পড়াশোনা এবং ঘরোয়া ক্রিকেট চলছিল একসঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটকেই বেছে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। 

এরপর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে জাতীয় দলে ডাক পান সাঈদ আনোয়ার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তিনি পার্ট টাইম বাঁহাতি স্পিনারও ছিলেন। পরে তিনি মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে যান। ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ১৯৮৯ সালের জানুয়ারি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। প্রায় দুই বছর পর ১৯৯০ সালের নভেম্বরে টেস্ট অভিষেক।

তবে অসুস্থতার কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ক্যারিয়ার। শারীরিক অসুস্থতার জেরে তিনি থাকতে পারেননি ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি অবধি তিনি মাত্র পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছিলেন। তার মধ্যে একবারও দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি।

১৯৯৬ সালে বিয়ে করেন সাঈদ আনোয়ার। তার স্ত্রী লুবনা একজন চিকিৎসক। সে বছরও অসুস্থতায় ব্যাহত হয় তার পারফরম্যান্স। আনোয়ারের চিকিৎসা করেছিলেন তার স্ত্রী নিজেই। কিন্তু তার ঠিক কী হয়েছিল, তা জানা যায় না। সুস্থ হয়ে অবশ্য দুরন্ত ফর্মে ফিরে আসেন সাঈদ আনোয়ার।

১৯৯৭ সালের ২১ মে পেপসি ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৪ রানের এক অনবদ্য রেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেন সাঈদ আনোয়ার। প্রচণ্ড গরমে তার পায়ে ক্র্যাম্প ধরে গিয়েছিল। তিনি রানার নিয়ে ইনিংস শেষ করেন। ওই ম্যাচে পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটসম্যান সেভাবে রান করতে পারেননি।

বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাঈদ আনোয়ারের পারফরম্যান্স ছিল বরাবরই অসাধারণ। সব ধরনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার গড় ৬৪.৩৩, ভারতের বিরুদ্ধে ৪৪.৯২ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৭.৯৫। তার ৩১টি আন্তর্জাতিক শতরানের মধ্যে ১৫টি এসেছে এই তিন দেশের বিপক্ষেই। ১৯৯৭ সালে তিনি উইজডেন পত্রিকার বিচারে বর্ষসেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হন।

যে ক্রিকেটকে ঘিরে এত কিছু, সেই ক্রিকেট জীবনের একটা পর্যায়ে পারিবারিক বিপর্যয়ে সম্পূর্ণ পাল্টে যায় তার জীবনের গতিপথ। বিদায় জানাতে হয় ক্রিকেটকেও। ২০০১ সালে মুলতানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঐতিহাসিক টেস্ট জয়। এই টেস্টের শেষ দিনে এক পারিবারিক বিপর্যয়ে তছনছ হয়ে যায় সাঈদ আনোয়ারের জীবন।

দীর্ঘ অসুখের পর মারা যায় সাঈদের তিন বছরের শিশুকন্যা বিসমাহ। এরপর থেকে সাঈদ আনোয়ারের কাছে জীবনের অর্থই পাল্টে যায়। ক্রিকেট ছেড়ে সাঈদ আনোয়ার মন দেন ধর্মপ্রচারে। সন্তানশোক ভুলতে ধর্মের বাণীতেই সান্ত্বনার আশ্রয় খুঁজে পান তিনি।

যদিও ২০০৩ সালে আবারও ক্রিকেটে ফিরেছিলেন সাঈদ আনোয়ার। খেলেছিলেন বিশ্বকাপ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজের শেষ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে সাঈদ আনোয়ারের স্কোর ছিল ৪০ রান। তার আগের ম্যাচ ছিল ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে‌ পাকিস্তান ৬ উইকেটে হারলেও শতরান করেছিলেন আনোয়ার। সেই রান তিনি উৎসর্গ করেছিলেন শিশুকন্যা বিসমাহ’র স্মৃতিতে।

১৯৯৬, ১৯৯৯ এবং ২০০৩। তিনটি বিশ্বকাপেই সাঈদ আনোয়ারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল। বিশ্বকাপের ২১টি ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল ৯১৫ রান। গড় ৫৩.৮২। এছাড়াও ৭টি টেস্ট এবং ১১টি ওয়ানডে-তে অধিনায়কত্বও করেছেন সাঈদ আনোয়ার। তবে অধিনায়ক হিসেবে সেভাবে সাফল্য পাননি তিনি। 

এখন অবশ্য সাফল্য-ব্যর্থতা-পরিসংখ্যান থেকে বহু দূরে ধর্মপ্রচারক হিসেবে দিন কাটাচ্ছেন অতীতের এই বিধ্বংসী ওপেনার। শুভ জন্মদিন কিংবদন্তী ওপেনার।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি