বিশ্বকাপে ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে বাংলাদেশ!
প্রকাশিত : ১৭:৪১, ৪ অক্টোবর ২০২১
মাস্কাটে পৌঁছানোর পর টিম বাংলাদেশ
মরুভূমি মধ্যপ্রাচ্য এখন ক্রিকেট নগরীতে পরিণত। চলমান আইপিএলের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠেয় আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই মাস্কাটে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। গত ছয়টি আসরে বাংলাদেশ খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও এবারের আসরে ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে টাইগাররা।
সম্প্রতি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় সত্ত্বেও, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ দু’টি সিরিজেই উইকেট ধীর গতির হওয়ায় ম্যাচগুলো ছিলো লো-স্কোরিং। ব্যাটাররা বড় ইনিংসই খেলতে পারেননি।
তবে সর্বশেষ দুই সিরিজে প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও, বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগ থাকছে টাইগারদের। তারপরও আসন্ন আসরে বাংলাদেশ দল ‘ডার্ক হর্স’ হতে পারে, কিন্তু কেন?
আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে রিয়াদ বাহিনী। দলের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে ছাড়াই এই আসরে খেলতে হবে টাইগারদের। তবুও প্রথম পর্ব পেরিয়ে সুপার ১২-তে যায়গা করে নেয়ার জন্য ভালো অবস্থায় আছে বাংলাদেশ এবং বিশ্বকাপের মূল পর্বে অন্যদের জন্য হুমকি হয়েও উঠতে পারে টাইগাররা।
সাম্প্রতিক ফর্ম যোগাতে পারে আত্মবিশ্বাস:
দিন শেষে যে কোনো ফরম্যাটে এবং যে কোনো কন্ডিশনে জয় বিশেষভাবে আইসিসির মত বড় টুর্নামেন্টে দলের মনোবল-সাহস বাড়াতে সহায়তা করে। যে কোনো পরিস্থিতিতে জয়ের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের সাফল্যকে ২০০৭ সালের সঙ্গে তুলনা করেছেন দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। যদিও ২০০৭ সালের সেই আসরের আগে তাদের জয়গুলো কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই এসেছিল। তারপরও সেই সব জয় আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছিলো বাংলাদেশকে। যে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপে ইতিহাস লিখেছিলো টাইগাররা। ত্রিনিদাদে ভারতকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ দল এবং বিশ্বাস না করার কোনো কারণ নেই যে, দলে বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড় রয়েছেন।
বোলিং অলরাউন্ডাররাই দলের ভারাসাম্য:
বাংলাদেশ দলের একটা ভালো বোলিং অ্যাটাক রয়েছে। এরমধ্যে শক্তিশালী স্পিন অ্যাটাক, যারা ইনিংসে মাঝের ওভারগুলোতে ম্যাচে প্রভাব ফেলতে পারে। তৈরি করে দিতে পারে পার্থক্য।
গেল বছর এই ফরম্যাটে দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ ১৪টি করে উইকেট নিয়েছেন এবং কমপক্ষে ১শ’ রানও করেছেন দুজনে। একই সময়ে এই ফরম্যাটে দক্ষিণ আফ্রিকার জিওর্জি লিন্ডে বেশি উইকেট নিয়েছেন এবং অন্তত ১শ’ রানও করেছেন।
তবে সেই রেকর্ড ভেঙ্গেছেন নাসুম আহমেদ। ১৪ ম্যাচে ১৮টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ওভার প্রতি ৬ দশমিক ২২ রান দিয়েছেন দিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
স্বমহিমায় মুস্তাফিজ:
দলের আরেকটি স্বস্তির বিষয় হচ্ছে- ইনজুরি সমস্যা কাটিয়ে নিজের সেরা ফর্মে ফিরেছেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বকাপের আসন্ন আসরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ফিজ। গেল বছরের শুরু থেকে ১৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ওভার প্রতি ৭ দশমিক ৫২ রান দেয়া ফিজের গড় ছিলো ১৩’র নিচে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ৯ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার। সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেট থেকে মুস্তাফিজ যে আরও বেশি উপকৃত হবেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
গেল বছর বাংলাদেশের পক্ষে ২০.৫০ গড়ে ৫৩টি উইকেট শিকার করেছেন ফিজ। সঙ্গে স্পিনারা থাকায় টুর্নামেন্টে দারুষ এক বোলিং আক্রমণ নিয়েই খেলতে নামছে বাংলাদেশ।
মাহমুদুল্লাহর নেতৃত্ব:
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এমন একজন অধিনায়ক, যিনি চাপের মধ্যে নিজেকে মেলে ধরতে ভয় পান না। তরুণদের ভালো খেলতে এবং শিখতেও সুযোগ দেন তিনি। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খারাপ শুরুর পরও দলকে রক্ষা করেছেন রিয়াদ। ওই দুই সিরিজে দলের একমাত্র হাফ-সেঞ্চুরিয়ানও ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১শ ম্যাচও খেলেছেন তিনি। টপ-অর্ডার ব্যর্থ হলেও প্রায়ই দলের ইনিংসকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান টাইগার কাণ্ডারী।
মাহমুদুল্লাহর অধিনায়কত্ব মুগ্ধ করেছে তার সতীর্থদেরও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে স্পিনার নাসুম আহমেদ দু’টি শর্ট বল করেছিলেন, তখনই সাকিবকে নাসুমের সঙ্গে আলাপ করতে বলেন এবং ফুল লেন্থে বল করতে বলেন রিয়াদ। অর্থাৎ দলের প্রয়োজনে সাকিবের সাহায্য অকপটে গ্রহণ করেন অধিনায়ক। যার ফলও হাতেহাতেই পায় দল। ঐ ম্যাচে ১৯ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর নাসুম বলেন, ‘মাহমুদুল্লাহ ভাই, সাকিব ভাইকে বলেছিলেন, সহজাত বোলিং করতে।’
নাসুম আরও বলেন, ‘রিয়াদ ভাই আমাদের জায়গা দিয়েছেন এবং অধিনায়ক হিসেবে যা অনেক বড় ব্যাপার। তিনি খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করেন না এবং আমাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে উৎসাহ যোগান। এছাড়া ফলাফল নিয়ে আমাদের খুব বেশি চিন্তা না করতে বলেন তিনি।’
এছাড়াও সিরিজে সময়োপযোগী বোলিং পরিবর্তনের মাধ্যমে কোচের প্রশংসা কুড়িয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। তার অধীনে খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আর সামনে থেকে নেতৃত্বগুণই মাহমুদুল্লাহকে এগিয়ে রাখছে সবকিছুর উপরে।
তাই সবকিছু মিলেয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল যে প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না। তবে তা দেখার জন্য কয়েকটা দিন অপেক্ষা তো করতেই হবে।
এনএস//