ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

তাসকিনের কান্না যেভাবে হাসিতে রূপ নিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০২, ১৪ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১৮:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০২১

তাসকিন আহমেদ

তাসকিন আহমেদ

আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অন্যতম সদস্য তাসকিন আহমেদ। তবে টাইগার পেসারের জন্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বিশেষ এক দুঃসহ স্মৃতির। কারণ, ২০১৬ বিশ্বকাপ চলাকালীনই তার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ ঘোষিত হয়েছিল। সেই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়েই আবারও বিশ্বকাপে ফিরছেন তিনি।

২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই বিশ্বকাপের আসর মানেই তাসকিনের জন্য দুঃসহ এক বেদনা। প্রথমে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে বাদ পড়া, এরপর ২০১৯ সালে বিশ্বকাপের দল ঘোষণার ঠিক আগে ফিটনেসের কারণে বাদ পড়া- এসবই ঘটেছে তাসকিনের ক্যারিয়ারে।

বর্তমানে দলের সঙ্গে আরব-আমিরাতে অবস্থানরত তাসকিন বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ফিরে গেলেন ২০১৯ সালের স্মৃতিতেই। বললেন, "একটা ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে। ২০১৯ সালে যখন বাদ পড়লাম মনে হইলো যেন, এটা কি শেষ? আমি আর ফিরতে পারবো?"

দু’বছর আগে তাসকিন আহমেদ যখন জানলেন, তিনি বিশ্বকাপের দলে নেই। মিরপুর স্টেডিয়াম প্রাঙ্গণেই কেঁদে ফেলেন। সেদিন বাদ পড়ার আগেও তাসকিন জোর চেষ্টা চালান নিজেকে ফিট রাখতে, কিন্তু নির্বাচকরা ঝুঁকি নেননি। যদিও তিনি বলেছেন, এসব ভুলে যেতে চান।

এরপর চলেছে ফিরে আসার লড়াই, কখনো আঙ্গুলের চোট তো কখনো বাংলাদেশের মাটিতে খেলা, তাই পেস বোলারের গুরুত্ব কম। এসব মিলিয়ে ম্যাচে সুযোগ পেতেও বেশ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাসকিনকে। তাইতো, ২০১৮ সালের পর ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলেছেন তাসকিন আহমেদ।

বলার মতো কিছু করতে না পারলেও তাসকিন আহমেদ এখন 'স্বপ্নের বিশ্বকাপে' খেলবেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও ভালো বল করেছেন, চার ওভারে ২৫ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন। দল হারলেও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বল ও ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত। ২৬ রানে দুটি উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ১১ বলে খেলেছেন ১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস।

তাসকিন আহমেদের মতে, বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়া থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার মাঝের সময়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করাই তাকে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এজন্যই স্কোয়াডে তার নামটি আছে।

তাসকিন সবসময়ই বলেন, ১৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বল করতে চান তিনি। গতিই তার বোলিংয়ের সবটা কি না- এমন প্রশ্ন রাখার পর তিনি বলেন, একটা সময় তাই ছিল।

তাসকিনের ভাষায়, "একটা সময় আসলেই ভাবতাম জোরে বল করবো। এটার মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। একবার জোরে বল করা শুরু করলে হাত-পায়ে একটা বাড়তি প্রেরণা পাওয়া যায়। আর দুই-একজনকে বোল্ড করলে আরো অনুপ্রেরণা পাই"।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাসকিন এখন গতির সাথে ব্যাটারের মন বোঝার চেষ্টা করছেন, ব্যাটারের ভাবনা নিয়েই বল করার চেষ্টা করেন বলেও জানিয়েছেন। মূলত স্লোয়ার বল নিয়ে কাজ করেছেন তাসকিন। তার মতে, "স্লো বল করা মানে শুধু যে একটা আস্তে বল করে দিলাম তা না। এটা একটা খেলার ভেতর খেলা।"

তাসকিন মূলত ব্যাটারের সঙ্গে মনস্তাত্বিক লড়াইয়ের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। কোন বলটা জোরে করা হবে ও কোনটায় গতির তারতম্যে ব্যাটারকে বোকা বানানো হবে- এটা ঠিক করাই জরুরি বলে মনে করেন তাসকিন আহমেদ। তিনি বলেন, মাশরাফি বিন মোর্তুজার কাছে তিনি ভেরিয়েশন নিয়ে কাজ করার শিক্ষাটা পেয়েছেন।

মাশরাফির ইনজুরি জর্জরিত ক্যারিয়ারে অর্ধেকের বেশি সময়ই ছোট রান আপে বল করেছেন, আবার গতি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে মাশরাফি সুইং ও লাইন লেন্থের প্রতিই বেশি নজর দিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন। ২০১৫ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত মাশরাফি বাংলাদেশের সফলতম ফাস্ট বোলারই ছিলেন।

তাসকিনের ক্যারিয়ারে শুরু থেকেই মাশরাফির একটা প্রভাব ছিল। মাশরাফির সঙ্গে খোলামেলাই বেশ ভালো সম্পর্ক তাসকিনের। তাসকিন আহমেদও মনে করেন, মাশরাফি সবসময়ই তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে যান। একইসঙ্গে তিনি বলেন, কখন কী করলে ভালো হবে।'

২০১১ সালে মাশরাফিও একটা বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে দলে সুযোগ পাননি, তাসকিন আহমেদ এসব ঘটনায় সাদৃশ্য খুঁজে পেয়ে নিজেকে আরো ভালো জায়গায় নিয়ে যেতে চান। একইসঙ্গে তাসকিন, তার সতীর্থ মুস্তাফিজুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, "মুস্তাফিজুর রহমান দলে থাকলে, অন্য দলগুলো বাংলাদেশ টিম নিয়ে ভাবে। আলাদাভাবে পরিকল্পনা করে। কোন বল কীভাবে খেলবে এসব ভিডিও দেখে। এতে দলের বাকি ক্রিকেটারদের সুবিধা হয়।"

২০১৫ বিশ্বকাপে তাসকিন আহমেদ ইনিংসের মাঝপথে উইকেট এনে দেয়ার কাজ করতেন। তিনি আশাবাদী একই কাজ তিনি এবারও করতে পারবেন। তাসকিনের মতে, প্রত্যেক ক্রিকেটারে নিজস্ব রোল আছে, যদি প্রয়োজন হয় ব্যাটিং করার ব্যাটিংও করতে পারবেন তিনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়েও ভূমিকা থাকে।

টাইগার এই পেসার ব্লেন, "অনেক সময় আমার ৬ বলে ১০ রান নেয়া লাগতে পারে। অনেক সময় আমি এক রান বাঁচালে ওই এক রানে জিতে যাইতে পারে দল।"

তাসকিন মনে করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘরানার খেলা, এখানে অনেক সময় ক্রিকেটীয় দক্ষতার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয়।এখন পর্যন্ত ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ১৫টি উইকেট নেয়া তাসকিন ব্যাট হাতে ১০ ইনিংসে করেছেন ৪৮টি রান। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১৫।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি