ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজেকে প্রমাণের অপেক্ষায় ‘ইউনিভার্স বস’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫২, ১৫ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১৬:৫৫, ১৫ অক্টোবর ২০২১

ক্রিস গেইল

ক্রিস গেইল

টেস্টে ট্রিপল, ওয়ানডেতে ডাবল এবং আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটারের নামটি হলো ক্রিস গেইল। ৪২ বছরে পা রাখা ক্রিস গেইলের ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান ও পারফর্মেন্স গর্ব করার মতই, যা নিয়ে প্রতিপক্ষরা কেবল ইর্ষাই করতে পারে। তবে বয়সের কথা বিবেচনায় না এনে নিজেকে প্রমাণ করার দিকেই বেশী মনোযোগ দিচ্ছেন স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কারণে নিজেকে ‘ইউনিভার্স বস’ দাবী করা এই ক্যারিবীয় ক্রিকেট দানব।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭৪টি ম্যাচ খেলে দুটি সেঞ্চুরি ও ১৪টি হাফসেঞ্চুরি-সহ ৩০-এর সামান্য নিচে (২৯.৪২) ব্যাটিং গড়ে তার মোট রান ১ হাজার ৮৫৪। যেখানে তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৩৯.১৮। সর্বোচ্চ ইনিংস ১১৭ রানের। ১২১টি বিশাল বিশাল ছক্কার সঙ্গে ১৫৫টি বাউন্ডারি হাঁকানো এই ব্যাটিং দানবের ঝুলিতে রয়েছে ১৯টি উইকেটও। 

তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে পারফর্মেন্সে আরও বেশি সফল ও উজ্জ্বল গেইল। দুই সেঞ্চুরির দুটিই পেয়েছেন এই বিশ্বমঞ্চেই। সঙ্গে রয়েছে ৭টি ফিফটিও। সাতটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মোট ২৮টি ম্যাচ খেলে ২৬ ইনিংসে সই ৪০ গড়ে রান করেছেন ৯২০টি। যেখানে তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৪৬.৭৩। আর স্বাভাবিকভাবেই সর্বোচ্চ ইনিংস ওই ১১৭ রানেরই। ১১টি ক্যাচ নেয়া এই ব্যাটিং দানবের ঝুলিতে রয়েছে ৯টি উইকেটও।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে গেইলের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি এসেছে ২০১৬ সালের বিশ্বকাপে। যে বছর দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ শিরোপা জয় করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এরপর থেকে গেইলের রানের ধারাবাহিকতায় যেন ভাটা পড়তে থাকে। বিগত পাঁচ বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ২৬ ইনিংসে জ্যামাইকান এই ক্রিকেট তারকা একটিমাত্র হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন।

যে কারণে টপ অর্ডারের আসনটি তিনি ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন। ২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হোম সিরিজে তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে দেখা গেছে গেইলকে। ফ্রাঞ্চাইজি লিগেই দেখা গেছে একই চিত্র। 

স্বনামধন্য ক্যারিবীয় ক্রিকেট সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার ফাজির মোহাম্মদ এএফপিকে বলেন,‘মেধার কারণে নয়, খ্যাতির কারণেই সর্বশেষ এই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছেন ক্রিস গেইল। ২০১৬ বিশ্বকাপের পর থেকে তার ধারাবাহিক ফর্মহীনতার অর্থ হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিজেকে মেলে ধরতে না পারলে ক্রিকেটিং ধারায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলে তিনি হবেন একেবারেই শেষ প্রান্তের এক ক্রিকেটার।’

প্রায় ছয় বছর আগে বিশ্বকাপ খেলা ৩৬ বছর বয়সি পেসার রবি রামপাল ও গেইলের দলভুক্তি ওই অঞ্চলে মত পার্থক্যের সৃষ্টি করেছে। কারণ উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, প্রয়োজনীয় ফিটনেসের ন্যুনতম মান অর্জন করতে পারেন নি গেইল। অথচ তার কারণে দলে স্থান পাননি মারকুটে ব্যাটসম্যান শেরফেন রাদারফোর্ড ও ম্যাচ উইনিং স্পিনার সুনিল নারিন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্র্যাঞ্চাাইজি ভিত্তিক টি-টোয়েন্টি আসরের ফেরিওয়ালা গেইল রান তোলার ক্ষেত্রেও ধুঁকছেন এখন। সর্বশেষ ১০ ইনিংসে একটিও হাফ সেঞ্চুরি নেই তার। গেইলের ফর্মহীনতা নিয়ে এ সপ্তাহেই মিডিয়ার সঙ্গে অপ্রত্যাশিত ঝগড়া হয়েছে ক্যারিবীয় সাবেক ফাস্ট বোলার কার্টলি এ্যামব্রোসের। তিনি বলেছিলেন, ‘গেইল অটোমেটিক চয়েজ নয়’। 

এটি সত্যি যে, ২০১৩ সালের আইপিএলে বিধ্বংসী এক ব্যাটিং কৃতিত্ব রয়েছে ক্রিস গেইলের। তার ৬৬ বলে গড়া ১৭৫ রানের ইনিংসটি এখনো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা ইনিংস। তাই নিজেকে ক্ষয়িষ্ণু সৈনিক হিসেবে মানতে রাজি নন গেইল। তাঁর বিশ্বাস, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি হবে সঠিক ব্যক্তির সঠিক সময়ের সঠিক স্থানে থাকা একজন খেলোয়াড়ের উপযুক্ত বিদায়।

জোহানেসবার্গে ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী আসরে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন গেইল। সেই ম্যাচে ৫৭ বলে ১১৭ রানের ইনিংসটি খেলেন তিনি। ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন দীর্ঘদেহী এই ব্যাটার। ওই আসরে তিনটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন গেইল। তন্মধ্যে ছিল সেমি-ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসটিও।

অবশ্য ফাইনালে তাকে নিয়ে বেশী প্রত্যাশা করা হলেও তার প্রতিদান দিতে পারেন নি গেইল। ২০১২ ও ২০১৬ আসরের ফাইনালে তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৭ রান। 

তবে চলতি বছর সেন্ট লুসিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ৬৭ রানের ইনিংস খেলার পর গেইল বলেছিলেন, ‘রান নিয়ে কিছু মনে করবেন না। ক্রিস গেইল রান করতে যাচ্ছে না। আপনাদের খুশি হওয়া উচিৎ এটি দেখে যে, অচিরেই ৪২ বছরে পদার্পণ করতে যাওয়া গেইল এখনো মাঠে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি ক্রিস গেইল যতদূর সম্ভব টিকে থাকবে। সেই মুহূর্তগুলোকে ধারণ করুন। মন্তব্যকারীরা ক্রিস গেইলের হাফ সেঞ্চুরির হিসাব রাখবেন না। শুধু ‘ইউনিভার্সেল বসের’ ক্রিকেট খেলাকে সম্মান দিন, মজা করুন এবং মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করুন।’

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি