বাংলাদেশকে ‘আন্ডারডগ’ ভাবছে না আইসিসি, ‘অরডিনারি’ বলছে স্কটল্যান্ড
প্রকাশিত : ২০:২৩, ১৬ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ২০:২৮, ১৬ অক্টোবর ২০২১
স্কটিশ কোচ শেন বার্জার ও বাংলাদেশ দলের সদস্যরা
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। রোববার (১৭ অক্টোবর) থেকেই শুরু হচ্ছে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। উদ্বোধনী দিনে মুখোমুখি হবে ওমান-পাপুয়া নিউগিনি এবং বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড। তবে মাঠের খেলা শুরুর আগে অংশগ্রহণকারী সব দলের সামর্থ্য-সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। ইতোমধ্যেই নিজেদের প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ দলের প্রিভিউও।
আইসিসির ওই প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে ‘এখন আর আন্ডারডগ নয়, বিশ্বকাপে দানব শিকারে প্রস্তুত বাংলাদেশ।’ বাংলাদেশ দল যে এখন আর শুধুই অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বকাপ খেলতে যায় না, সে বিষয়টিই উল্লেখ করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। পাশাপাশি বিশ্বকাপে টাইগারদের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে টাইগারদেরকে ‘অরডিনারি’ দল হিসেবেই দেখছে স্কটল্যান্ড। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে কথার লড়াইয়ে একরকম হুঙ্কার দিয়ে রাখলেন স্কটল্যান্ডের কোচ শেন বার্জার। নিজেদের সেরাটা দিয়ে ভালো করার আত্মবিশ্বাসী সুরেই তিনি বললেন, প্রথম রাউন্ডে তারা বাংলাদেশকে ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির মতো দল হিসেবেই দেখছেন।
মূলত স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান। ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হবে টাইগাররা। স্কটিশদের এই দলটি গত দেড় বছর ধরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছেন তারা। ফলে কোচের মুখেও উচ্চারিত হচ্ছে উচ্চাভিষালী শব্দমালা।
শেন বার্জার বলেন, ‘আমরা জানি, নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে আমরা সব দলকেই বিপদে ফেলতে পারব। এটা খুবই সহজ হিসাব। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সব দলই কাছাকাছি। আমরা জানি, আমাদের সামর্থ্য আছে। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, তাহলে যে কোনো দলকেই আমরা হারাতে পারি। তা হোক বাংলাদেশ, ওমান কিংবা পাপুয়া নিউগিনি।’
প্রথম রাউন্ডের একই গ্রুপে আছে বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি। যেখানে একমাত্র টেস্ট খেলুড়ে দল বাংলাদেশ। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে পা রেখেছে টাইগাররা, কিন্তু বাংলাদেশকে তুলনামূলক দুর্বল ওমান ও পাপুয়া নিউগিনির চেয়ে ওপরে মানতে নারাজ স্কটিশ কোচ।
বার্জার বলেন, ‘প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশকে আমরা পাপুয়া নিউগিনি বা ওমানের চেয়ে ওপরে কোথাও দেখছি না। আমরা জানি, সব দলই জয়ের জন্য আমাদের আক্রমণ করবে। তবে গ্রুপে আমরাই তাদের সবার জন্য বড় প্রতিপক্ষ হব। আমরা প্রস্তুত।’
তবে খোদ আইসিসির গলায় মিলেছে ভিন্ন সুর। বাংলাদেশকে তাঁরা ‘আন্ডারডগ’ নয়, ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবেই মূল্যায়ন করছে। আইসিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে ক্রমাগত উন্নতির মাধ্যমে নিজেদের ওপর থাকা ‘আন্ডারডগ’ তকমাটি সরানোর কাজটি সফলভাবেই করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটি তাদের জন্য বড় একটি সুযোগ, এই ফরম্যাটে নিজেদের অগ্রযাতা ও উন্নতি প্রদর্শনের।
এ বছরেই নয়টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ আসরে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। তাদের চেয়ে বেশি ১২টি জয় রয়েছে কেবলমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার। গত মার্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ হারের পর থেকে রীতিমতো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে তারা।
বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডের বি গ্রুপে ফর্মে থাকা বাংলাদেশই তাই ফেবারিট। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি। রোববার (১৭ অক্টোবর) স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ।
যদিও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অতীত পরিসংখ্যান খুব একটা ভালো নয় বাংলাদেশের জন্য। ২০০৭ সালের প্রথম আসরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার এইটে উঠেছিলো তারা। কিন্তু ২০০৯, ২০১০ ও ২০১২ সালের আসরে কোনো জয়-ই পায়নি বাংলাদেশ। আর ২০১৪ ও ২০১৬ সালের আসরে প্রথম পর্বে দুটি করে জয় পেলেও, হেরেছে সুপার টেনের সবকটি ম্যাচেই।
অবশ্য ২০১৬ সালের আসরে সুপার টেনে জয়ের বেশ ভালো সম্ভাবনা ছিলো বাংলাদেশের সামনে। স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে শেষ তিন বলে দুই রানের সমীকরণে হেরেছিলো এক রানে। আর নিউজিল্যান্ডকে ১৪৫ রানে আটকে রেখেও জয় মেলেনি ব্যাটিং ব্যর্থতায়। তবে এই দুই দলকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলো টাইগাররা।
বিশ্বকাপের এবারের আসরে বাংলাদেশ দলের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো- আগের ছয়বারের মতো এবার আর তারা আন্ডারডগ হিসেবে খেলবে না। শুধু প্রথম পর্বেই নয়, সুপার টুয়েলভে উঠতে পারলে সেখানেও আন্ডারডগ থাকবে না বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে হতাশাজনক বিশ্বকাপের পর থেকে ধীরে ধীরে উন্নতি করে চলেছে টাইগাররা। বর্তমানে আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ের ছয় নম্বরে রয়েছে তারা। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলগুলোও রয়েছে বাংলাদেশের পেছনে। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ই তাদের অগ্রযাত্রার বড় সাক্ষ্য বহন করছে।
অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশেলে বিশ্বকাপে ভালো করার পরিপূর্ণ রসদ রয়েছে বাংলাদেশ দলের। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকারদের নিয়ে গড়া দলটির অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপ। নিচের দিকে রয়েছেন আফিফ হোসাইন ধ্রুব ও নুরুল হাসান সোহানের মতো সাহসী ও মারকুটে তরুণ।
বোলিং আক্রমণে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব থাকছে মোস্তাফিজুর রহমানের কাঁধেই। তার সঙ্গে রয়েছে দারুণ ফর্মে থাকা নাসুম আহমেদ এবং তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের মতো পরীক্ষিত পেসাররা। এবারের বিশ্বকাপে শুধুমাত্র সুপার টুয়েলভে উঠেই খুশি হওয়ার কথা নয় বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো নকআউটে নাম লেখানোর লক্ষ্যেই খেলতে নামবে তারা।
বাংলাদেশ দল:
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, আফিফ হোসাইন, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নুরুল হাসান সোহান, শামীম হোসাইন পাটোয়ারী, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, রুবেল হোসাইন, শরিফুল ইসলাম, শেখ মাহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ ও তাসকিন আহমেদ।
স্কটল্যান্ড দল:
কাইল কোয়েৎজার (অধিনায়ক), রিচার্ড বেরিংটন (সহ-অধিনায়ক), ডায়লন বাজ, ম্যাথু ক্রস, জশ ডেভি, অ্যালি এভান্স, ক্রিস গ্রিভস, মাইকেল লিস্ক, ক্যালাম ম্যাকলিওড, জর্জ মুন্সে, সাফিয়ান শরিফ, হামজা তাহির, ক্রেইগ ওয়ালাস, মার্ক ওয়াট, ব্রাড হুইল।
এনএস//