পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয় জনের বিদায়
প্রকাশিত : ১৬:৪১, ২৫ নভেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১৬:৪৮, ২৫ নভেম্বর ২০২১
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ
দেশের হয়ে আর সাদা জার্সিতে দেখা যাবে না পঞ্চপাণ্ডবের অন্যতম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। সম্প্রতি (২৪ নভেম্বর) টেস্ট ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দিয়ে ১২ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। তবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলা চালিয়ে যাবেন বলেই জানিয়েছেন সংক্ষিপ্ত ভার্সনের অধিনায়ক।
গত জুলাইয়ে হারারেতে ক্যারিয়ারের ৫০তম ও সর্বশেষ টেস্ট খেলেন মাহমুদুল্লাহ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অনবদ্য ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যা ছিলো মাহমুদুল্লাহর পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি। তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় ২২০ রানের বড় ব্যবধানে টেস্টটি জিতেছিলো বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলার পর ড্রেসিংরুমে সতীর্থদের মাহমুদুল্লাহ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা জানিয়েছিলেন। যদিও দিনের খেলা শেষে এ বিষয়ে কথা বলেননি তিনি। তবে টেস্টের শেষ দিনে সতীর্থদের কাছ থেকে পাওয়া গার্ড অব অনার থেকেই মাহমুদুল্লাহর অবসর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়।
অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে এক বিবৃতিতে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘যে ফরম্যাটে আমি দীর্ঘদিন খেলেছি, সেটি ছেড়ে দেয়া সহজ নয়। আমি সব সময়ই আরো ভাল কথা ভেবেছি এবং আমি বিশ্বাস করি, এটাই আমার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ করার সঠিক সময়।’
মাহমুদুল্লাহ বা রিয়াদ হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও পুরো নাম তার মোহাম্মদ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ১৯৮৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণকারী এই ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সিনিয়র সদস্য। অলরাউন্ডার রিয়াদ একজন কার্যকরী মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং অকেশনাল অফ স্পিন বোলার হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি (১০৩) করার গৌরব অর্জন করেন রিয়াদ। এছাড়াও প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা দুই সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
২০০৭ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য প্রথম বাংলাদেশ দলে ডাক পাওয়া এই ক্রিকেটার এ পর্যন্ত ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৫২ ম্যাচ খেলে মোট ৯ হাজার ১৫৪ রান সংগ্রহ করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মাঝে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন ৮টি, ফিফটি ৪৬টি। বল হাতেও নিয়েছেন মোট ১৫৪টি।
ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে ৫০ টেস্ট খেলা রিয়াদ ৯৪ ইনিংসে ব্যাট করে পাঁচটি শতক ও ১৬টি অর্ধশতকে ৩৩.৪৯ গড়ে রান করেছেন ২৯১৪টি। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১৫০ রানের। আর বল হাতে ৪৫.৫৩ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৪৩টি। একবার মাত্র পাঁচ উইকেট নেয়া রিয়াদের সেরা বোলিং ফিগার ৫/৫১। লংগার ভার্সনে বাংলাদেশকে ছয় টেস্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
গড়ের (৩৪.৬৪) দিক থেকে এগিয়ে থাকা ওয়ানডেতে ২০০ ম্যাচ খেলা রিয়াদ ১৭৪ ইনিংসে ব্যাট করে তিনটি শতক ও ২৫টি অর্ধশতকে রান করেছেন ৪৪৬৯টি। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ১২৮ রানের। বল হাতে এই ফরম্যাটে ৪৬.৩৮ গড়ে ও ৫.১৬ ইকোনমি রেটে শিকার ৭৮টি উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ৩/৪।
আর শর্টার ভার্সনে ১১৩ ম্যাচের ১০৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৬টি অর্ধশতকে ২৪.০৩ গড়ে ও ১১৭.৮৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৯৭১টি। যার মধ্যে সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৬৪ রানের। এই ফরম্যাটে বল হাতে ২৭.৬৩ গড়ে ও ৭.১৮ ইকোনমি রেটে উইকেট নিয়েছেন ৩৬টি। সেরা বোলিং ফিগার ৩/১৮।
টেস্ট থেকে বিদায় নেয়ার পর সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টির আসরে বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করা ৩৫ বছর বয়সী রিয়াদের জন্য অস্ট্রেলিয়াতেই হতে পারে শেষ বিশ্বকাপ।
এনএস//