মিরপুরে জয়ের ধারায় ফিরতে মরিয়া বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ০০:০৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২১
লিটন দাস
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তনে উজ্জীবিত হয়েই হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য ম্যাচ জিতে সিরিজ ড্র করা। শনিবার ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ১০টায়।
হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি সাকিব। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়েন এই অলরাউন্ডার। সাকিবের অনুপস্থিতিতে সবগুলো ম্যাচই হারে বাংলাদেশ। আর এ ম্যাচে পাকিস্তান জয় পেলে দীর্ঘদিন পর ঘরের মাঠে হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ।
এদিকে, প্রথম টেস্টেই অবশ্য খেলার পথে ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কিন্তু ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে বসে থাকতে হয় সাইডলাইনে। প্রথম টেস্টে ৪৪ রানের লিড পেয়েও ৮ উইকেটে ম্যাচ হারতে হয় বাংলাদেশকে।
চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই অবশ্য টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান লিটন দাস। মুশফিকুর রহিম করেন ৯১ রান। দু’জনের ব্যাটিংয়ের পর বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১১৬ রানের বিনিময়ে শিকার করেন ৭টি উইকেট। কিন্তু প্রথম ইনিংসে তাদের এমন পারফরমেন্সও দলের কোনো উপকারে আসেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যটাররা ব্যর্থ হওয়ায় সহজ জয় পায় পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে লিড পেলেও ম্যাচ জয়ের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিলো বাংলাদেশের। মুশফিক-লিটন ও তাইজুল ছাড়া স্বাগতিক দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে ঘাটতি ছিলো চোখে পড়ার মত। যে কারণে সাকিবের অনুপস্থিতি ব্যাপকভাবে ফুটে ওঠে টাইগার শিবিরে।
সাকিব থাকলে দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটে বলেই সবার বিশ্বাস।
কিন্তু টপ অর্ডার ব্যাটারদের পারফরমেন্স বড় ক্ষতি ডেকে আনে টাইগারদের। প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৫ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার পরও তাই এটাই ছিল বাংলাদেশের হারের পেছনে প্রধান কারণ।
অধিনায়ক মোমিনুল হকের মতে, তার ও টপ অর্ডারেরও ব্যর্থতাও ছিল এর অংশ। মোমিনুল জানান, দলের খেলোয়াড়রা যদি সবকিছু ঠিকঠাক করতে না পারে, তাহলে টেস্ট সিরিজে তাদের কামব্যাক করার কোনো উপায় নেই।
যদিও মিডল-অর্ডার ব্যাটার ইয়াসির আলি চৌধুরী নিজের অভিষেক টেস্টে পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির শর্ট পিচ ডেলিভারিতে মাথায় আঘাত পাবার আগে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন। পরে ইয়াসির মাঠ ছাড়লে কনকাশন সাব হয়ে ব্যাট করতে নেমেও সুবিধা করতে পারেননি নুরুল হাসান সোহান।
তবে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো পারফরমেন্সের জন্য প্রথম ম্যাচের ভূলগুলো সংশোধন করতে আগ্রহী দল। ইয়াসির বলেন, ‘আমরা জানি না ঢাকা টেস্টে উইকেট কেমন হবে। তাই আমাদের যা করতে হবে, তা হলো- উইকেটের আচরণ দেখে খেলতে হবে এবং মূল বিষয় হলো- আমাদের যে প্রক্রিয়াটি আছে তা ধরে রাখতে হবে। আপনাকে সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং উইকেটের চাহিদা মতো ব্যাট করতে হবে।’
এদিকে, সাকিব ছাড়াও এ ম্যাচে পেসার তাসকিন আহমেদের সার্ভিস পাচ্ছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে তাসকিনের পেসকে মিস করেছিলো দল। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডান হাতের ইনজুরিতে পড়ায় শেষ মুর্হূতে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন তাসকিন।
আর সাকিব ও তাসকিনের দলে ফেরার অর্থ হলো- একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে। দুই ইনিংসে ব্যর্থ ওপেনার সাইফ হাসান অবশ্য অসুস্থতার কারণে দল থেকে বাদ পড়েছেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট নাইম শেখকে দলে ডেকেছে। আছেন নতুন মুখ মাহমুদুল হাসান জয়ও। ইনিংস শুরু করার সামর্থ্য আছে এই তরুণের। তাই দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মূলত তিনটি পরিবর্তন আনতে হবে বাংলাদেশকে।
তবে যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের একমাত্র লক্ষ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতে এই ফরম্যাটে অধরা জয়ের স্বাদ নেয়া।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এ পর্যন্ত ১০টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবগুলোই জিতেছে পাকিস্তান। এরমধ্যে ১টি টেস্ট ড্র হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে দ্বিপাক্ষীক সিরিজেই ড্র হয় টেস্টটি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট টেস্ট খেলেছে ১২২টি। যার মধ্যে জিতেছে ১৪টিতে, হেরেছে ৯২টিতে। যার মধ্যে ইনিংস ব্যবধানে হার ৪৩টি ম্যাচে। বাকী ১৬ টেস্ট ড্র।
বাংলাদেশ একাদশ (সম্ভাব্য):
সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়/নাইম শেখ, নাজমুল হোসাইন শান্ত, মোমিনুল হক (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসাইন।
এনএস//