ঢাকা টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ বাংলাদেশের
প্রকাশিত : ১৮:২৪, ৮ ডিসেম্বর ২০২১
বৃষ্টি বিঘ্নিত ঢাকা টেস্টে শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইনিংস ও ৮ রানে হারলো বাংলাদেশ। এই জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিলো সফরকারী পাকিস্তান। সিরিজের প্রথম টেস্ট ৮ উইকেটে জিতেছিলো পাকিস্তান।
নিয়মনুযায়ী ঢাকা টেস্টে ৪৫০ ওভার খেলার হবার কথা ছিলো। সেখানে বৃষ্টির কারণে ঢাকা টেস্টে খেলা হয়েছে ২১৫ দশমিক ১ ওভার। ম্যাচের অর্ধেকেরও কম খেলা হবার পরও পাকিস্তানের কাছে ঢাকা টেস্টে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশি ব্যাটাররা।
৪ উইকেটে ৩০০ রান তুলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিলো পাকিস্তান। এরপর ব্যাট হাতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেটে ৭৬ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ফলো অন এড়াতে তখনো ২৫ রানের প্রয়োজন ছিলো টাইগারদের। কিন্তু বাকী ৩ উইকেটে আজ ১১ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ।
ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিন শেষ পর্যন্ত ৮৭ রানে অলআউট হয়ে ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে যৌথভাবে এটি বাংলাদেশের দলীয় সর্বনিম্ন রান।
২৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে শেষ ব্যাটার হিসেবে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে আউট হন সাকিব আল হাসান। অন্য দুই ব্যাটার তাইজুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদ খালি হাতে ফিরেন। ফলে ৩২ ওভারে প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
পাকিস্তানের অফ-স্পিনার সাজিদ খান ১৫ ওভারে ৪২ রানে ৮ উইকেট নেন।
ফলো অনে পড়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেও ব্যর্থতার বৃত্তেই নিজেদের আটকে রাখেন বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ব্যাটাররা। ২৫ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ২ ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান জয় ৬ রান করে ফিরেন। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ৬ ও অধিনায়ক মোমিনুল হক ৭ রান করে ফিরেন। বাংলাদেশের পতন হওয়া এই চারটি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন পাকিস্তানের দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হাসান আলি।
উপরের সারির ব্যাটারদের মত যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেননি বাংলাদেশের দুই মিডল-অর্ডার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। পাকিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলে অবিচ্ছিন্ন থেকেই মধ্যাহ্ন-বিরতিতে গিয়েছিলেন মুশফিক-লিটন।
বিরতি থেকে ফিরেও, উইকেটে দাপট দেখাচ্ছিলেন মুশফিক ও লিটন। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৫ রানে সাজিদের ঘুর্ণিতে হার মানেন লিটন। স্কয়ার লেগে ফাওয়াদকে ক্যাচ দেন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা লিটন। ৮১ বলে ৭টি চারে ৪৫ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ১৫০ বলে ৭৩ রান যোগ করেন তারা।
লিটনের বিদায়ের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে পাকিস্তানের বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মুশফিক। কিন্তু চা-বিরতি ঠিক আগ মুহূর্তে রান আউটের ফাঁদে পড়েন মুশি। ১৩৬ বলে ৩টি চারে ৪৮ রান করেন মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিবের ৪৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিক।
মুশফিক-লিটন, মুশফিক-সাকিবের জুটির কল্যাণে হার এড়ানোর পথ খুঁজে পেয়েছিলো বাংলাদেশ। উইকেট টিকে থাকার মত বড় জুটিই হার থেকে বাঁচাতে পারত বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে আরও একটি জুটি গড়েন সাকিব। উইকেট বাঁচানোই তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো তাদের। সেই পথেই ছিলেন তারা। কিন্তু ৭৬তম ওভারে বল হাতে হঠাৎ আক্রমনে এসে মিরাজকে লেগ বিফোর আউট করেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর। এজন্য রিভিউ নিতে হয়েছে পাকিস্তানকে। ১টি চারে ৭০ বলে ১৪ রান করেন মিরাজ। সাকিবের সাথে ১৩৯ বলে ৫১ রান তুলেছিলেন মিরাজ। এ ম্যাচে প্রথমবারের মত টেস্টে বল করতে এসেই উইকেট পান বাবর।
মিরাজ ফেরার ৯ বলের মাথায় প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাকিবও। সাজিদের বলে বোল্ড হন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ১৩০ বলে ৬৩ রান করেন সাকিব। ইনিংসে ৯টি চার মারেন তিনি।
২শ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে সাকিবের আউটের পর, পাকিস্তানের জয় সময়ের ব্যাপার ছিলো। তবে শেষ দিকের ব্যাটাররা লড়াই করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত ৮৫তম ওভারে ২০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
খালেদ আহমেদের পর তাইজুলকে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট করে পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন সাজিদ। এই ইনিংসে ৮৬ রানে ৪ উইকেট নেন সাজিদ। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ৮টিসহ ১২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হন সাজিদ। সিরিজ সেরা পাকিস্তানের আবিদ আলি।
এই সিরিজ জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ৪ ম্যাচে ৩ জয় ও ১ হারে ৩৬ পয়েন্ট অর্জন করে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলো পাকিস্তান। এই সিরিজ দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পথচলা শুরু করা বাংলাদেশ শুন্য হাতে সিরিজ শেষ করলো।
এসি