ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪

গুরবাজের শতকে ৩ স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৫৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সেঞ্চুরি পূরণের পর রহমানউল্লাহ গুরবাজের উদযাপন

সেঞ্চুরি পূরণের পর রহমানউল্লাহ গুরবাজের উদযাপন

ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের অনবদ্য শতকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিততে পারল না বাংলাদেশ। ৭ উইকেটে ম্যাচ হেরেছে টাইগাররা। যাতে ২-১ ব্যবধানেই সিরিজ শেষ করল আফগানিস্তান।

সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে আইসিসি সুপার লিগ থেকে ১০ পয়েন্ট পাওয়া, আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা এবং আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের ষষ্ঠ স্থানে ওঠার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ওয়ানডেতে হেরে এই তিন স্বপ্নই ভঙ্গ হলো তামিম-সাকিবদের।

যদিও আইসিসি সুপার লিগে ১৫ ম্যাচ খেলে ১০ জয় ও ৫ হারে ১০০ পয়েন্ট নিয়েই টেবিলের শীর্ষেই থাকল বাংলাদেশ। আর শেষ ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট পাওয়ায় সুপার লিগের টেবিলের সপ্তম থেকে চতুর্থস্থানে উঠল আফগানিস্তান। ৯ ম্যাচে ৭ জয় ও ২ হারে ৭০ পয়েন্ট আফগানদের। ১৫ ম্যাচে ইংল্যান্ড ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় ও ১২ ম্যাচে ৭৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে ভারত। 

সোমবার আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এ ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। 

তবে আগের দুই ম্যাচের ন্যায় আজও আফগানিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার ফজল হক ফারুকির বলে আউট হন তামিম। ২৫ বলে ১টি চারে মাত্র ১১ রান করে ফেরেন তামিম। 

যদিও ওপেনিংয়ে সতীর্থ লিটনের সঙ্গে ১০ দশমিক ১ ওভারে চলতি সিরিজে সর্বোচ্চ ৪৩ রানের জুটি গড়ে বিদায় নেন তামিম। অধিনায়কের বিদায়ে উইকেটে আসেন সাকিব আল হাসান। লিটনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন তিনি। 

২০তম ওভারে এসে নিজের ৫০তম ওয়ানডেতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পেতে ৬৩ বল খেলেছেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা লিটন। হাফ-সেঞ্চুরিতে পা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪ হাজার রানও পূর্ণ করেন লিটন দাস।

পরের ওভারেই দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেও হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন লিটন-সাকিব। তবে পরের ওভারেই পঞ্চাশ পেরনো এই জুটি ভাঙেন আজমতুল্লাহ ওমারজাই। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সাকিবকে বোকা বানান আফগান ডান-হাতি পেসার। যাতে শেষ হয় ৩টি চারে ৩৬ বলে করা সাকিবের ৩০ রানের ছোট্ট ইনিংসটি। 

অবশ্য তার আগে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৯ বলে ৬১ রান যোগ করেন লিটনের সঙ্গে। তবে সাকিবের উইকেট পতনে বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। ৪ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের দুই মিডল-অর্ডার ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলিকে শিকার করেন আফগান স্পিনার রশিদ খান। উইকেটের পেছনে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ক্যাচ দেন ১৫ বলে ৭ রান করা মুশফিক। আর রশিদের ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে স্লিপে গুলবাদিন নাইবকে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ৪ বলে ১ রান করা ইয়াসির। 

ইয়াসিরকে আউট হরে আবার ৮০তম ওয়ানডেতে ১৫০তম শিকার পূর্ণ করেন রশিদ খান। দ্রুত ১৫০ উইকেট শিকারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে জায়গা করে নেন এই লেগি। ওয়ানডেতে দ্রুত ১৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের। ৭৭ ম্যাচে ১৫০ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন অজি পেসার। 

যাইহোক, মুশফিক-ইয়াসিরের আউটের মাঝেও নিজের ইনিংসটাকে বড় করছিলেন লিটন দাস। আরও একটি সেঞ্চুরির স্বপ্নও বুনে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু ৩৬তম ওভারে মোহাম্মদ নবির বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন লিটন। লং অন থেকে দৌড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন নাইব। ফলে সমাপ্তি ঘটে ১১৩ বলে ৭টি চারে গড়া লিটনের ৮৬ রানের ইনিংসটির। 

দলীয় ১৫৩ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে আউট হন লিটন। এরপর আফগানিস্তানের বোলারদের দৃঢ়তায় ও নিজেদের ভুলে মাত্র ৩৯ রানের ব্যবধানেই বাকী ৫ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে টাইগাররা অলআউট হয় ৪৬ দশমিক ৫ ওভারে ১৯২ রানে। 

শেষ পর্যন্ত ৫৩ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ২৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আফগানিস্তানের রশিদ খান ৩৭ রানে ৩টি ও নবি ২৯ রানে ২টি উইকেট নেন। 

হোয়াইটওয়াশ এড়াতে ১৯৩ রানের লক্ষে খেলতে নেমে সাবধান শুরু ছিল আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও রিয়াজ হাসানের। প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ২০ রান তোলেন তারা। এরপরই যেন খোলস ছেড়ে বেন হন দুজনেই। শরিফুল ইসলামের করা সপ্তম ওভারেই তুলে নেন ১৩টি রান। 

তাসকিনের পরের ওভারে ৩টি চার মারেন রিয়াজ। যাতে ১০ ওভার শেষে ৫৭ ও ১৫ ওভার শেষে আফগানদের রান গিয়ে দাঁড়ায় ৭৯-তে। এই জুটি ভাঙ্গতে চার বোলার ব্যবহার করেছিলেন টাইগার নেতা তামিম ইকবাল। 

অবশেষে ১৬তম ওভারে সাকিবের হাত ধরে প্রথম সাফল্য দেখে বাংলাদেশ। মুশফিকের স্ট্যাম্পিং হওয়ার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন তৃতীয় ম্যাচ খেলা রিয়াজ।

দলীয় ৭৯ রানে রিয়াজের আউটের পর ক্রিজে গুরবাজের সঙ্গী হন রহমত শাহ। ১৮তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান ইতোমধ্যে এই ফরম্যাটে দু’টি সেঞ্চুরি করা গুরবাজ। ৫৩ বলে হাফ-সেঞ্চুরি করার পর দলের জয়ের ভিতও গড়ে দেন গুরবাজ। তাকে সঙ্গ দেন রহমত শাহ। 

সাকিবকে মাথার উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ২৩তম ওভারে আফগানিস্তানের রান ১০০-তে পৌঁছে দেন গুরবাজ। পরের ওভারে শরিফুলের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে জীবন পান তিনি। তখন তার রান ছিল ৬০।  

শরিফুলের পরের ওভার তথা ইনিংসের ২৫তম ওভারে লং লেগে গুরবাজের ক্যাচ ফেলেন মাহমুদুল্লাহ। তখন ৬১ রানে ছিলেন গুরবাজ। দু’বার জীবন পেয়ে আর পেছন ফিরে তাকাননি আফগান উইকেট কিপার ব্যাটার। শরিফুলের সপ্তম ওভারে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন। মিরাজকে লং-অফ দিয়েও ছক্কা হাঁকান তিনি। 

৩৬তম ওভারে গুরবাজ-রহমতের জুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। ৩টি চারে ৬৭ বলে ৪৭ রান করা রহমতকে স্ট্যাম্পিং করেন মিরাজ। তার আগে দ্বিতীয় উইকেটে গুরবাজ-রহমত ১২৩ বলে গড়েন ১০০ রানের জুটি। আর এতেই মূলত জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় আফগানিস্তান। 

রহমত যখন ফেরেন তখন জয় থেকে মাত্র ১৪ রান দূরে ছিল আফগানিস্তান। আর ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির জন্য ৪ রান দরকার ছিল গুরবাজের। এ সময়েই আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে লেগ বিফোর আউট করেন মিরাজ। মাত্র ২ রান করেন শাহিদি। 

তবে ৩৯তম ওভারে ঠিকই ৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন গুরবাজ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নিজের অভিষেক ওয়ানডেতেই সেঞ্চুরি করেছিলেন গুরবাজ। আবু ধাবির মাঠে ঐ ম্যাচে আফগানদের প্রতিপক্ষ ছিল আয়ারল্যান্ড। একই মাসে দোহাতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান গুরবাজ। 

সেঞ্চুরির পর ৪১তম ওভারের প্রথম বলে ১ রান নিয়ে আফগানিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন এই ব্যাটার। ১১০ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৬ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১ রানে অপরাজিত ছিলেন নজিবুল্লাহ জাদরান। 
বাংলাদেশের পক্ষে মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৭ রানে ২টি ও সাকিব আল হসান ৪৭ রানে ১টি উইকেট নেন। 

আর এর মাধ্যমেই শেষ হল তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ। এবার দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। আগামী ৩ ও ৫ মার্চ মিরপুরে হবে এই দু’টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি