আপন আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান ইমাম!
প্রকাশিত : ১৬:৩৬, ১০ মার্চ ২০২২
ইমাম উল হক
রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র হওযা টেস্টের দুই ইনিংসেই ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছেন পাকিস্তানের ওপেনার ইমাম-উল-হক। যার মাধ্যমে মিলেছে তার মেধার প্রমাণ। এভাবেই আপন আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান চশমা পরা এই ওপেনার।
ইমামের চাচা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর সমালোচকদের দাবী ছিল, ইনজামামের কারণেই দলে সুযোগ পেয়েছেন ইমাম। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই সেঞ্চুরিতে নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের প্রমাণটা ভালোভাবেই দিয়েছেন বাঁহাতি ওপেনার।
নিজের যোগ্যতাতেই দলে জায়গা ধরে রাখতে চান ইমাম। শুধু তাই নয়, কারো ছায়া নয়, নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে চান এ ব্যাটার।
রাওয়াপিন্ডি টেস্টে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট হলেও যথাক্রমে ১৫৭ এবং অপরাজিত ১১১ রানের ইনিংস খেলার পথে অনেক বেশি একাগ্রতা, ধৈর্য্য এবং সুশৃঙ্খল ব্যাটিং করতে দেখা গেছে ইমামকে।
সেইসঙ্গে পাকিস্তানের ১০ম ব্যাটার হিসেবে টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখেছেন তিনি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে এই নজির গড়েন ইমাম। তার আগে তিন সাবেক অধিনায়ক ইউনিস খান, মিসবাহ-উল-হক এবং আজহার আলী এমন কীর্তি গড়েছিলেন।
ইমামের এমন পারফরমেন্স তাকে কেবল পাকিস্তান টেস্ট দলেই জায়গা পাকা করবে না, ইমামের যে কোনও ব্যর্থতার পর তার সমালোচনায় মেতে ওঠা সমালোচকদের মুখও বন্ধ করে দিবে।
সমালোচনা সাধারণত পরামর্শের জন্যই হয়। কিন্তু পরিবারিক কারণে ইমামের সমালোচনাটা যেন একটু বেশিই হয়। টেস্টের প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ইমাম বলেন, ‘সমালোচকরা পিছে কি বলে আমার তাতে কিছু যায়-আসে না এবং আমি কখনও মনোবল হারাই না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে এবং সেটি বাস্তবায়ন করতে চাই।’
টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৮৩০ রানের মালিক ইমামের চাচা ইনজামাম উল হক। আবার ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ৭০১ রানও ইনজির দখলে।
তাইতো ক্রিকেট পরিবারের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও ইমামের যাত্রাটা সহজ ছিল না। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও ইমামকে ‘পার্চি’ বলে অ্যাখায়িত করা হয়েছিল। এটি একটি উর্দু শব্দ, যা অযৌক্তিক পক্ষপাতিত্বের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। কারণ ২০১৮ সালে চাচা ইনজামাম প্রধান নির্বাচক থাকা অবস্থাতেই প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পান ইমাম। তাই দলে ইমামের সুযোগ পাওয়াটাকে অনেকেই পারিবারিক স্বজনপ্রীতি হিসেবে বিবেচনা করতো।
যদিও ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন ইমাম উল হক। ওই আসরের ফাইনালে উঠেও হেরে যায় পাকিস্তান। ছয় ম্যাচে ৩৮২ রান করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে ১১ ম্যাচে ৮৪৮ রান করার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে ‘এ’ দলের হয়ে সিরিজে দারুণ পারফর্ম দেখিয়েছিলেন তিনি।
ইমামকে দলে নেয়ার ব্যাপারে ‘পারিবারিক পছন্দ নয়’, বরং কোচ মিকি আর্থার এবং গ্রান্ট ফ্লাওয়ারের পরামর্শেই ইমামকে দলে সুযোগ দেয়া হয়েছিলো বলে উল্লেখ করেছিলেন ইনজামাম।
ওই সময় ইনজামাম বলেছিলেন, ‘মিকি এবং গ্রান্ট আমার কাছে এসেছিলেন এবং শক্তভাবে ইমামকে দলে নেয়ার কথা বলেছিলেন। তাই তাকে দলে সুযোগ দেয়া হয়েছিল।’
তবে নিজেকে দলের নেয়ার যৌক্তিকতা ভালোভাবেই প্রমাণ করেন ইমাম। ২০১৭ সালে ওয়ানডে অভিষেকের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবুধাবিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন ইমাম। ২০১৮ সালে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন ইমাম। ১৬০ রানের টার্গেটে ১৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল পাকিস্তান। সেখান থেকে অপরাজিত ৭৪ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন ইমাম।
ওয়ানডে ফর্ম ধারাবাহিক থাকলেও, ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যর্থ হওয়ায় টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন ইমাম। কিন্তু ঘরোয়া আসরে দু’টি সেঞ্চুরিতে আবারও দলে ফেরেন ইমাম। দলে ফিরেই রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে সেটি কাজে লাগান এই ব্যাটার।
ইমাম বলেন, ‘যতবারই আমি ব্যর্থ হয়েছি, ততবারই আমাকে নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আমার লক্ষ্য ছিল, ব্যাট দিয়ে রান করে তাদের জবাব দিব। আমি নিজের পরিচয়ে বড় হতে চাই।’
এনএস//