ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সহজ জয়ে সমতায় স্বাগতিকরা, ‘ফাইনাল’ ২৩ মার্চ

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ২১:০৫, ২০ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ২১:৫৭, ২০ মার্চ ২০২২

৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন রাবাদা

৩৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন রাবাদা

পিঙ্ক বা গোলাপী পোশাকে আরও একবার জ্বলে উঠল প্রোটিয়ারা। কাগিসো রাবাদার আগুনঝরা বোলিংয়ের পর কুইন্টন ডি কক ও কাইল ভেরেইন্নের পঞ্চাশোর্ধ দুটি ইনিংসে চড়ে ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের করা ১৯৪ রান টপকে গেল ৭৬ বল হাতে রেখেই। সেইসঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরল স্বাগতিকরা। 

ওপেনিংয়েই ৮৬ রানের জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালোই করেছিলেন কুইন্টন ডি কক এবং জানেমান মালান। এর মধ্যে ডি কক ছিলেন বিধ্বংসী রূপে। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ১৯৪ রানের লক্ষ্যটা বুঝি খুব সহজেই পার হয়ে যাবে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

কিন্তু না, মেহেদী হাসান মিরাজ ভাঙলেন এই উদ্বোধনী জুটি। ৮৬ রানের মাথায় এই স্পিনার বিচ্ছিন্ন করেন প্রোটিয়া বিধ্বংসী জুটিকে। মিরাজের ঘূর্ণি বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে যান জানেমান মালান। ৪০ বলে ২৬ রান করেছিলেন তিনি।

মিরাজের দেখাদেখি দায়িত্ব তুলে নিলেন সাকিব আল হাসানও। বোলিংয়ে এসেই তিনি ফিরিয়ে দিলেন বিধ্বংসী হয়ে ওঠা কুইন্টন ডি কককে। ৪১ বলে ৬২ রান করেছিলেন ডি কক। ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ মিডউইকেটে আফিফ হোসাইনের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হন প্রোটিয়া এই উদ্বোধনী ব্যাটার। ৯টি বাউন্ডারি এবং ২টি ছক্কার মার মেরেছিলেন তিনি।

এরপর কাইল ভেরেইন্নেকে নিয়ে জয়ের সহজ লক্ষ্যে দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তবে জয় থেকে মাত্র ২০ রান দূরে থাকতেই ফিরতে হয় তাকেও। ব্যাটে-ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করা আফিফ নিজের কারিশমা দেখান বোলিংয়েও। অবশ্য তার বলে সুইপ শটে তুলে মারা বলটি সিমানার কাছে অসাধারণ দক্ষতায় লুফে নেন শরিফুল ইসলাম।

যাতে ১৭৬ রানেই ফিরতে হয় একটি ছয় ও তিন চারে ৫৮ বলে ৩৭ করা টেম্বা বাভুমাকে। তবে ডুসেনকে নিয়ে জয়ের বাকি কাজটা নির্বিঘ্নেই সারেন ফিফটি আদায় করা কাইল ভেরেইন্নে। অপরাজিত থাকেন ৫৮ রানে। তার ৭৭ বলের এই ইনিংসে ছিল দুটি ছক্কার সঙ্গে ৪টি চারের মার।

অন্যপ্রান্তে জয়সূচক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৪ বলে ৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন রাসি ফন ডার ডুসেন। অর্থাৎ ৩৭.২ ওভারেই কাঙ্ক্ষিত জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭৬ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা। ম্যাচ সেরা হন ৩৯ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে টাইগার ইনিংসে ধস নামানো কাগিসো রাবাদা।

অবশ্য, শুরুটা করেন লুঙ্গি এনগিদি। আর শেষটা করেন আনকোরা রাসি ফন ডার ডুসেন। এদিন ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বল হাতে নিয়ে উইকেটের দেখাও পান এই প্রোটিয়া। বোলিং করতে দেখা যায় অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকেও। ২.৫ ওভার বল করেই ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়া ওয়েন পারনেলের ব্যাকআপ দিতেই এদিন বল হাতে নেন বাভুমা। 

মিডিয়াম পেসে খুব একটা খারাপও করেননি, ৬,১ ওভার হাত ঘুরিয়ে উইকেট না পেলেও রান দিয়েছেন মাত্র ২২টি। তবে ঝড় বইয়ে যায় কেশভ মহারাজের উপর দিয়ে। মূলত রাবাদা-এনগিদি-পারনেল-শামসিদের সাঁড়াশি বোলিংয়ের মাঝে এই একজনের ওপরই যা একটু চড়াও হতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। স্যরি, আফিফ-মিরাজ-রিয়াদরা। 

হ্যা, প্রোটিয়া বোলারদের তোপের মুখে এদিন বাংলাদেশ যে ৯ উইকেটে ১৯৪টি রান তুলতে পারে, তার (৭২+৩৮+২৫) ১৩৫ রানই আসে এই তিন ব্যাটারের উইলো থেকে। বাকি ৫৯ রানের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭টি রানই আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। এছাড়া লিটন দাস ১৫ এবং মুশফিক ১১ রান করেন।

আসলে, পিঙ্ক পোশাকে প্রোটিয়ারা বরাবরই দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে। এদিনও তার ব্যত্যয় হয়নি। তার ওপর রেকর্ড রানের মাঠ জোহান্সবার্গের ওয়ান্ডারার্স। একেবারে সোনায় সোহাগা। তাইতো টস জিতে আগে ব্যাটিং নিলেও প্রথম ম্যাচ হেরে তেতে থাকা স্বাগতিক বোলারদের আগুনে বোলিংয়ের মুখে পড়তে হয় তামিমদের। তাদের, বিশেষ করে রাবাদা ও এনগিদির লাইন লেন্থে ফেলা একেটি তোপ এবং বাউন্সারে একে একে কুপোকাত হয়ে পড়েন সফরকারী ব্যাটাররা।

যার ফলে মাত্র ৩৪ রানেই ইনিংসের অর্ধেকটা খুইয়ে ধুঁকতে থাকে প্রথম ম্যাচ জিতে অতি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বারবার ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪৪ বলে ২৫) এদিন খুব বেশি সহযোগিতা করতে না পারলেও আরও একবার বাংলাদেশ দলকে খাঁদের কিনার থেকে টেনে তুলে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন আফিফ হোসাইন। 

মাসখানেক আগেই অবশ্য এমনই একটা পরিস্থিতিতে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন আফিফ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাত্র ২৮ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর উইকেটে এসে ক্যারিয়ার সেরা ৯৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। আজও টাইগারদের পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে মাত্র ৩৪ রানে। সেখান থেকে ব্যাটিংয়ে নেমে একের পর একে দৃষ্টিনন্দন শটে দ্বিতীয় ফিফটিটি তুলে নেন আফিফ হোসাইন।

ইনিংসের ১৩তম ওভারে উইকেটে আসার পর মুখোমুখি তৃতীয় বলেই প্রথম বাউন্ডারি হাঁকান আফিফ। কাগিসো রাবাদার করা সেই ওভারে দুটি চার মারেন তিনি। পরে টেম্বা বাভুমা, তাবরাইজ শামসি কিংবা কেশভ মহারাজদেরও উইকেট থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে দেননি তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটার।

ইনিংসের ৩৫তম ওভারে লুঙ্গি এনগিডির বলে চার মেরে পৌঁছে যান ৪৮ রানে। পরের ওভারে মহারাজের বলে দৃষ্টিনন্দন শটে হাঁকান আরেক বাউন্ডারি। অবশ্য সেই ওভারের প্রথম বলে এক রান নিয়েই পূরণ হয় আফিফের দ্বিতীয় ফিফটি। পঞ্চাশে পৌঁছাতে ৭৯টি বল খেলেন তিনি। যেখানে ছিল ৭টি চারের মার।

আরও ২৮টি বল মোকাবেলা করে আরও ২টি চার মেরে শেষ পর্যন্ত ৭২ রানেই আউট হন টাইগার এই তরুণ ব্যাটার। আর তাকে যোগ্য সঙ্গ দেয়া মিরাজের ব্যাট থেকে আসে একটি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৯ বল থেকে ৩৮ রান। আফিফের আউটের এক বল পরেই আউট হন এই অলরাউন্ডার। মূলত এই দুজনের ব্যাটিং কল্যাণেই ১৯৪ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।

এদিকে, স্বাগতিকদের এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা বিরাজ করায় আগামী ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটাই হতে যাচ্ছে সিরিজ নির্ধারনী ফাইনাল ম্যাচ। যে ম্যাচটি শুরু হবে বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়, সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্টস পার্কে।

উল্লেখ্য, এই মাঠেই গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৩৮ রানের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। যা ছিল স্বাগতিকদের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম জয়।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি