প্রতিবন্ধকতা জয় করা অদম্য সুমিত
প্রকাশিত : ১৮:০৭, ২৭ মার্চ ২০২২
শৈশবে পোলিও আক্রান্ত ফয়সাল খান সুমিত ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলেন। এ অবস্থার মধ্যেই ইস্পাত কঠিন মানসিকতায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দূর করেছেন। অর্ধ-যুগেরও বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট দলকে।
বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, প্রতিবন্ধকতা জয় করে ক্র্যাচে ভর দিয়েই একসময় ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগ খেলেছেন সুমিত! এখন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ক্রিকেটের পাশাপাশি এমেচার লিগও খেলছেন নিয়মিত।
সংগ্রামী ক্রিকেটের সূচনাটা মোটেও সহজ ছিলনা। এ সম্পর্কে সুমিত বলেছেন, ‘২০১৪ সালে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ক্রিকেট প্রথম শুরুর সময় অনেকে বলতেন, তোমরা ক্রিকেট খেলে কি করবে? আমরা দিনের পর দিন পরিশ্রম করে এখন একটা পর্যায়ে এসেছি। এখন কিন্তু তেমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছেনা। অনেকে বাহবা দিচ্ছেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সর্বোপরি ক্রিকেট দিয়ে অনেকের আমরা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পেরেছি।’
কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার শুরু হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট-২০২২’। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বেশ দৃঢ় প্রত্যয়ী সুমিত বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়ে আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব। এ জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে আমরা প্রস্তুত।’
প্রতিযোগিতা সম্পর্কে সুমিত বলেছেন, ‘আমরা যারা ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড মানুষ আছি, তাদের জন্য এটা অনেক গৌরবের। আমাদের প্রস্তুতি খুব ভাল এমন নয়, আবার একেবারে মন্দও নয়। ঢাকায় আমরা কিছুদিন অনুশীলন করেছি। সেখানে মাঠ সঙ্কট ছিল। কক্সবাজারে এসে গেল ৫ দিন আমরা ভাল প্রস্তুতি নিয়েছি। আশাকরছি, মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শিরোপা জয় করতে পারব।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থায়নে চলে। ২০১৪ সালে কার্যক্রম শুরুর সময়টা বেশ কঠিন ছিল। এ প্রসঙ্গে সুমিত বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় এখন নিয়মিত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলে আসছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
সুমিত জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেষ সাতটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সবগুলোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ভারত, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজও জিতেছে লাল-সবুজরা।
২০১৪ সালে মাত্র ১৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে ভারত সফর করে বাংলাদেশ দল। এখন দলটি ক্রমেই উন্নতি করছে। অনেক খেলোয়াড়ও আসছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ক্রিকেটের জন্য স্বতন্ত্র বিভাগও গঠন করেছে।
পেশায় একজন ফটোগ্রাফার সুমিত। কিন্তু সে পরিচয় ছাপিয়ে সকলে তাকে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে চেনেন। এ প্রসঙ্গে সুমিত বলেছেন, ‘সবাই আমাকে ক্রিকেটার হিসেবে চেনেন, এটা আমার জন্য গর্বের।’ ২০১৪ সালে প্রথম ভারত সফরে সুমিত ছিলেন সহ-অধিনায়ক। ২০১৫ সাল থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।
ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ক্রিকেট দিয়ে অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের পর আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়ে সুমিত বলেন, ‘এ মূহুর্তে সামাজিকভাবে সম্মান পাচ্ছি, যেটা আগে ছিলনা। আর্থিক বিষয়টা যদি নিশ্চিত হয়, তবে আমাদের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। নতুন খেলোয়াড়রাও এতে আগ্রহী হবে। এ জন্য ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেটারদের একটা কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
কেআই//