সাকিবের ব্যাটিং তাণ্ডব, আক্ষেপে পুড়লেন সাব্বির
প্রকাশিত : ১৭:৩২, ২৬ এপ্রিল ২০২২
সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান
১৫ বলে রান ৪০ নিয়েছেন। পরের দুই বলে দরকার একটি ছক্কা ও একটি চার! তাহলেই যে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়ে ফেলতে পারতেন সাকিব আল হাসান। তা অবশ্য পারেননি। তবে যা করলেন, সেটাও কম নয়। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে উপহার দিলেন টর্নেডো ছোটানো এক ইনিংস।
ভিত ছিল শক্ত, মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। আদর্শ উপলক্ষ পেয়ে উত্তাল হয়ে উঠল সাকিবের ব্যাট। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের দিনে আক্ষেপে পুড়লেন সাব্বির রহমান রুম্মন। আউট হলেন সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতেই। অবশ্য এর আগের ম্যাচেই তিন বছরের খরা কাটিয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান মারকুটে এই ব্যাটার।
ঢাকা প্রিমিয়ায়ার লিগের ম্যাচে মঙ্গলবার গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে বিকেএসপিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের দুই ব্যাটার- সাকিব ও সাব্বির।
রূপগঞ্জের উদ্বোধনী জুটি ৭১ রান তোলার পর ষোড়শ ওভারে ক্রিজে যান সাব্বির রহমান। তিনে নেমে দলকে এগিয়ে নেন সাবলীল ব্যাটিংয়ে। তৃতীয় উইকেটে নাঈম ইসলামের সঙ্গে গড়েন ১০৩ রানের জুটি।
নাঈমের বিদায়ের পর ৩৮ ওভার শেষে উইকেটে তার সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। রূপগঞ্জের রান তখন ৩ উইকেটে ১৮৬। পরিস্থিতির দাবি ছিল দ্রুত রান। সাকিব সেই দাবি মেটান দারুণভাবেই।
প্রথম চার বলে সাকিব করেন দুই রান। তবে তার ঝড়ের শুরু ৪০তম ওভারে। বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল আতিকের বলে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় শুরু। পরের বলে কাট করে চার। পরেরটি বিশাল ছক্কা স্লগ সুইপে। পরের বলে আবারও স্লগ, এবার ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে কিপারের পাশ দিয়ে চার।
পরের ওভারে সৈয়দ খালেদের বলে চার মারেন নান্দনিক এক ইনসাইড আউট শটে। ৪২তম ওভারে আল আমিনের অফ স্পিনে বাউন্ডারি আদায় করেন টানা দুটি। প্রথমটি কাট শটে, পরেরটি ইনসাইড আউটে। ১৪ বলে তার রান তখন ৩৯। পরের বলে নেন সিঙ্গেল।
পরের দুই বলে চার-ছক্কা হলে রেকর্ড গড়তে পারতেন। সেটা হয়নি। তবে আল আমিনের পরের ওভারে আরেকটি ছক্কা মারেন জায়গা বানিয়ে খেলে ওয়াইড লং অফ দিয়ে। ওই ওভারেই ফিফটি স্পর্শ করেন ২১ বলে।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি এটি। দ্রুততম ফিফটির রেকর্ডটি ফরহাদ রেজার দখলে। ২০১৯ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে ২০ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের পথে ১৮ বলে ফিফটি করেন ফরহাদ।
আর দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটিটি নাজমুল হোসেন মিলনের। ২০০৭ সালে জাতীয় লিগের ওয়ানডে সংস্করণে ঢাকা বিভাগের হয়ে ধানমন্ডি মাঠে খুলনা বিভাগের বিপক্ষে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ১৯ বলে। কাকতালীয়ভাবে ফরহাদের মতো নাজমুলের ইনিংসটিও ছিল ২০ বলে অপরাজিত ৫৬ রানের।
সাকিব অবশ্য ৫৬ নন, আউট হন ২৬ বলে ৫৯ করে। ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার ইনিংস থামে আল আমিনের বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে। ক্যাচ তুলে দেন তিনি পয়েন্টে।
সাব্বির রহমান টিকে ছিলেন তখনও। ৫৩ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পর রানের গতি বাড়িয়ে তিনি সম্ভাবনা জাগান তিন অঙ্ক ছোঁয়ার। ৪৯তম ওভারে পেসার মারাজ মাহবুবের বলে স্কুপ করতে গিয়ে গিয়ে টাইমিং করতে পারেননি। বল আলতো করে উঠে যায় কিপার আকবর আলীর হাতে।
সাব্বির যদিও দেখাচ্ছিলেন, বল তার উরুতে লেগে উপরে উঠছে। তবে আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্তই দেন। লিগের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি তাই পাওয়া হলো না তার। ইনিংস শেষ হয় ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৩ বলে ৯০ করে।
শিরোপা লড়াইয়ে থাকা রূপগঞ্জ ৫০ ওভারে তোলে ২৯৩ রান। জবাবে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকা গাজী গ্রুপ থেমে যায় ২৯.২ ওভারেই, মাত্র ৯৭ রানে। রূপগঞ্জের পক্ষে ৫ উইকেট নেন চিরাগ জানি। ২টি করে উইকেট নেন আল আমীন হোসেন ও নাঈম ইসলাম। ১ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান।
তবে ১৯৬ রানের বড় জয় পেলেও শিরোপা জয় করলে পারেনি মাশরাফি-সাকিবের দল। আবাহনীকে (২২৯/৬) ৪ উইকেটে হারিয়ে এবারের আসরের শিরোপা ঘরে তোলে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব (২৩২/৬। ম্যাচ সেরা হন ৮১ বলে ৮১ রানের অপরাজিত ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলা নুরুল হাসান সোহান।
এনএস//