চতুর্থ দিন শেষে এগিয়ে বাংলাদেশ
প্রকাশিত : ২০:০৪, ১৮ মে ২০২২
শ্রীলংকার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ২৯ রানে এগিয়ে আছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের পর চট্টগ্রাম টেস্টে সেঞ্চুরি করেন মুশফিকুর রহিম। তামিম-মুশফিকের জোড়া সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৪৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ৬৮ রানের লিড পায় টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রান করে শ্রীলংকা। দিনের শেষ ভাগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বিপদেই পড়েছে লংকানরা। ১৭ দশমিক ১ ওভারে ৩৯ রানে ২ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলংকা। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ২৯ রানে পিছিয়ে লংকানরা।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ৩১৮ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে এখন ৭৯ রানে পিছিয়ে ছিলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছিলেন তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়। হাতের ক্র্যাম্পে টান পড়ার কারনে তামিম ১৩৩ রান করে গতকাল আহত অবসর নেন। জয় ৫৮ রানে আউট হলেও, দিন শেষে মুশফিক-লিটন যথাক্রমে ৫৩ ও ৫৪ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন।
চতুর্থ দিন বৃষ্টির কারণে আধা ঘন্টা দেরিতে শুরু হয় খেলা। ব্যাট হাতে নেমে সাবধানী ব্যাটিং করতে থাকেন মুশফিক ও লিটন। প্রথম ঘন্টায় কোন বিপদ হয়নি। ১৪ ওভারে ৩৮ রান তুলেন তারা। আর দিনের ১৬তম ওভারে পেসার আসিথা ফার্নান্দোর করা দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে ২ রান নিয়ে ৬৮তে পৌঁছে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৫ হাজার রান পূর্ণ করেন মুশফিক।
মুশফিকের দুর্দান্ত অর্জনের সেশন ভালোভাবে শেষ করে বাংলাদেশ। ১৩৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৩৮৫ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় টাইগাররা। এসময় মুশফিক ৮৫ ও লিটন ৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। দু’জনই সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন। আর শ্রীলংকার রানকে টপকে লিড নেয়া থেকে ১৩ রান দূরে ছিলো বাংলাদেশ।
মুশফিক-লিটনের সেঞ্চুরি ও লিড নেয়ার মিশন নিয়ে খেলতে নেমে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। এই সেশনের প্রথম বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন। শ্রীলংকান পেসার কাসুন রাজিথার অফ-স্টাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে ঠিক-ঠাক ব্যাটের সাথে সংযোগ করতে পারেননি লিটন। বল তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটের হাতে জমা পড়ে। ফলে ৮৮ রানেই থেমে যান লিটন। ১০টি চারে ১৮৯ বল খেলে নিজের ইনিংসটি সাজান লিটন। মুশফিকের সাথে ৩৭৪ বলে ১৬৪ রানের জুটি গড়েন লিটন।
লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন ১৩৩ রানে আগের দিন আহত অবসর নেয়া তামিম। তার সামনে তখন লক্ষ্য ছিলো, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ৫ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা। এজন্য ১৯ রান দরকার ছিলো তামিমের। কিন্তু মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোল্ড হন তামিম। রাজিথার সামান্য সুইং করা বলের লাইনে পা নিতে পারেননি তিনি। ফলে বল তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে স্টাম্প উপড়ে ফেলে। ফলে ২১৮ বলে ১৫টি চারে ১৩৩ রানে আউট হন তামিম।
পরপর দুই বলে লিটন ও তামিমকে শিকার করে শ্রীলংকার খেলায় ফেরার পথ তৈরি করেন কনকাশন সাব হিসেবে খেলতে নামা রাজিথা।
তবে বাংলাদেশকে লিড এনে দিতে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন সাকিব। ১৩৮তম ওভারে ব্যক্তিগত ৭ রানে জীবন পান সাকিব। স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের ডেলিভারিতে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন তিনি। ক্যাচ নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠে শ্রীলংকা। তবে ক্যাচটি নিয়ে সন্দেহ ছিলো নন-স্ট্রাইকের আম্পায়ারের। তাই থার্ড আম্পায়ারের সহায়তা নেন তিনি। তাতে থার্ড আম্পায়ার নট-আট কল করলে বেঁেচ যান সাকিব।
১৪০তম ওভারে লিড নেয় বাংলাদেশ। ঐ ওভারে শ্রীলংকার রানকে টপকে দলীয় স্কোর ৪শ স্পর্শ করে টাইগারদের। তবে ১৪৭তম ওভারের প্রথম বলে বিদায় ঘটে সাকিবের। আসিথার শর্ট বল সামলাতে না পেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ৩টি চারে ৪৪ বলে ২৬ রান করেন সাকিব। মুশফিকের সাথে ৩৬ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।
সাকিব ফেরার ৩৭ বল পর টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। আসিথাকে ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি তুলে নিয়ে তিন অংকে পা রাখেন মুশি। সেঞ্চুরি করতে ২৭০ বল খেলেছেন তিনি। শ্রীলংকার বিপক্ষে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশি। ১৮ ইনিংস পর তিন অংকের দেখা পান তিনি। মাঝে একবার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছিলেন মুশফিক। গেল নভেম্বরে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ৯১ রান করেছিলেন তিনি।
সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিক। শ্রীলংকার বাঁ-হাতি স্পিনার লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার বলে বোল্ড হন তিনি। ২৮২ বলে ১০৫ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে মাত্র ৪টি চার ছিলো।
তবে মুশফিকের আউটের পর লোয়ার-অর্ডার বাংলাদেশের সংগ্রহকে সামনের দিকে নিয়ে যান তাইজুল ইসলাম। ৩টি চারে ৪৫ বল খেলে ২০ রান করেছেন তাইজুল। এতে দলের স্কোর সাড়ে চারশ পার হয় বাংলাদেশের।
শরিফুল আহত অবসর নিলে শেষ পর্যন্ত ৪৬৫ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। যা টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলংকার বিপক্ষে এক ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে পঞ্চম সর্বোচ্চ রান। তবে এই ভেন্যুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
বল হাতে শ্রীলংকার পক্ষে কাসুন রাজিথা ৪টি, আসিথা ফার্নান্দো ৩টি উইকেট নেন।
৬৮ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভালোই এগোচ্ছিলেন শ্রীলংকার দুই ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো ও অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে। ১১ ওভার পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকেন তারা। তবে ১২তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৩৬ রানে শ্রীলংকার উদ্বোধনীূ জুটি ভাঙ্গে। সাকিবের করা ওভারের পঞ্চম বলটি মিড উইকেটে ঠেলে দেন করুনারত্নে। রানের জন্য ছুটেন ওশাদা। তবে তাতে সাড়া দেননি করুনারত্নে। ততক্ষণে মিড উইকেট থেকে সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভেঙ্গে দেন তাইজুল। রান আউট হন ওশাদা। ৩টি চারে ১৯ রান করেন তিনি।
ওশাদার বিদায়ের পর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামেন এম্বুলদেনিয়া। বাংলাদেশ বোলারদের দারুণভাবে সামলাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলে দারুন এক ডেলিভারিতে এম্বুলদেনিয়াকে বোল্ড করেন তাইজুল। ২ রান করেন তিনি। ১৮ রানে অপরাজিত আছেন করুনারত্নে।
বাংলাদেশের তাইজুল কোন রান না দিয়েই ১ উইকেট নেন। বল করেছেন নাইম-খালেদ ও সাকিবও। কিন্তু কোন উইকেট পাননি তারা।
স্কোর কার্ড (টস-শ্রীলংকা) :
শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস : ৩৯৭/১০, ১৫৩ ওভার (ম্যাথুজ ১৯৯, চান্ডিমাল ৬৬, নাইম ৬/১০৫)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩১৮/৩, মুশফিক ৫৩*, লিটন ৫৪*) :
মাহমুদুল হাসান জয় ক ডিকবেলা ব আসিথা ৫৮, তামিম ইকবাল বোল্ড ব রাজিথা ১৩৩, নাজমুল হোসেন শান্ত ক ডিকবেলা ব রাজিথা ১, মোমিনুল হক বোল্ড ব রাজিথা ২, মুশফিকুর রহিম বোল্ড ব এম্বুলদেনিয়া ১০৫, লিটন দাস ক ডিকবেলা ব রাজিথা ৮৮, সাকিব ক ডিকবেলা ব আসিথা ২৬, নাইম ক মেন্ডিস ব ডি সিলভা ৯, তাইজুল ক করুনারত্নে ব আসিথা ২০, শরিফুল আহত অবসর ৩, খালেদ আহমেদ অপরাজিত ০, অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-৮, নো-৮) ২০, মোট (অলআউট উইকেট, ১৭০.১ ওভার) ৪৬৫
উইকেট পতন : ১/১৬২ (জয়), ২/১৭২ (শান্ত), ৩/১৮৪ (মোমিনুল), ৩/২২০* (তামিম), ৪/৩৮৫ (লিটন), ৫/৩৮৫ (তামিম), ৬/৪২১ (সাকিব), ৭/৪৩৯ (মুশফিক), ৮/৪৫০ (নাইম), ৯/৪৬৫ (তাইজুল), ১০/৪৬৫ (শরিফুল)।
শ্রীলংকা বোলিং :
বিশ্ব : ৮-০-৪২-০, আসিথা : ২৬-৪-৭২-১ (নো-৪), রমেশ : ৪৫-১০-১১৯-০, এম্বুলদেনিয়া : ৪৭-৯-১০৪-০ (নো-১), ধনাঞ্জয়া : ১৯-২-৪৮-০, রাজিথা : ২৪.১-৬-৬০-২, কুশল : ১-০-৮-০।
শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস :
ওশাদা রান আউট (তাইজুল) ১৯, করুনারত্নে অপরাজিত ১৮, এম্বুলদেনিয়া বোল্ড ব তাইজুল ২, অতিরিক্ত ০, মোট (২ উইকেট, ১৭.১ ওভার) ৩৯, উইকেট পতন : ১/৩৬ (ওশাদা), ২/৩৯ (এম্বুলদেনিয়া)।
বাংলাদেশ বোলিং :
নাইম : ৯-৩-২১-০, খালেদ : ১-০-৬-০ (ও-১), সাকিব : ৬-৩-১২-০, তাইজুল : ১.১-১-০-১।
এসি